বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। বৈশ্বিক শেয়ারের ৬.৮ শতাংশ নিয়ে চীনের পরই এ দেশের অবস্থান। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক গড় হিসাবে এ দেশের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা অত্যন্ত কম। ফলে শ্রমিকদের অদক্ষতার প্রাথমিক কারণ হিসেবে পুষ্টির অপর্যাপ্ততাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশেষ করে এ সমস্যা বেশি নারীদের মধ্যে। গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক খাতে ৬০ শতাংশই নারীকর্মী, সংখ্যায় যা ২৫ লাখ। ইউনিসেফ বলছে, এ শিল্পে রপ্তানিনির্ভর ৩৫০০ পোশাক কারখানা প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষের জীবিকার মাধ্যম। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
তিন বছর আগে পোশাককর্মী সাদিকাতুন্নেছা ও তাঁর ছোট বোন সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আসেন একটি ভালো জীবনের আশায়। প্রায় সময়ই তাঁদের সকালের নাশতা করা হতো না, এমনকি কোনো কোনো দিন তাঁরা ভারী খাবার খেতেন বিকেলে। সেটাই হতো দিনের প্রথম খাবার। ফলে পুষ্টিহীনতা ছিল নিত্যসঙ্গী। দুই বোন একসময় সেলাই করা শিখে যান ভালোভাবে এবং ধামরাইতে একটি বড় পোশাক কারখানায় চাকরি পান। কারখানাটির নাম স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড।
সাদিকা জানান, কাজের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনশীলতা ধরে রাখার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘আমি প্রায়ই ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং বমি বমি ভাবে ভুগতাম। ’ এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, তিনি রক্তস্বল্পতায় ভুগছিলেন। তবে এই অবস্থা শুধু তাঁর একারই নয়। নারী গার্মেন্টকর্মীদের মধ্যে এই প্রবণতা সব থেকে বেশি গুরুতর। ন্যাশনাল নিউট্রেশন সার্ভিসেস বাংলাদেশের হিসাবে পোশাককর্মীদের মধ্যে ৭৭ শতাংশই রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। জাতীয় পর্যায়ে এই হার ৪১.৮ শতাংশ।
অ্যানিমিয়ার কারণে মানবদেহে ক্লান্তি, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ হ্রাস এবং কাজের উৎপাদনশীলতা কমে যায়। মহামারি চলাকালে সুইস এনজিও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন, ভিএফ করপোরেশন এবং স্নোটেক্স আউটারওয়্যারের সঙ্গে কাজ শুরু করে বাংলাদেশি এনজিও রিসার্চ ইভালুয়েশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ।
এর উদ্দেশ্য ছিল স্নোটেক্সে কারখানার শ্রমিকদের পুষ্টির চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা। প্রগ্রামটির নাম ছিল ‘স্ট্রেংদেনিং ওয়ার্কার্স অ্যাকসেস টু পারটিনেন্ট নিউট্রিশন অপরচুনিটিস’ বা স্বপ্ন। এটি শুধু মুখের কথাই ছিল না, এই প্রকল্পটি ছিল পোশাক শ্রমিকদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
প্রগ্রামের শুরুতে সাদিকা ‘পুষ্টি বন্ধু’ নির্বাচিত হন। তিনি স্নোটেক্সের নারী গার্মেন্টকর্মীদের পুষ্টিজ্ঞানের উন্নতিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে চলেছেন। যার ফলে তাঁদের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্নোটেক্সের খাবারকক্ষে গিয়ে দেখা যায় অত্যন্ত সুন্দর ও সামাজিক পরিবেশ। যেখানে একেবারে জুনিয়র থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমন হাজার হাজার কর্মী একসঙ্গে বসে একইমানের খাবার খাচ্ছেন, যা অত্যন্ত মানসম্পন্ন, পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং নিরাপদ হিসেবে নিশ্চিত করেছে ফুড ল্যাব। কর্মীরা সবজি, মাছ, মাংস, ডিম এমনকি ভালোমানের তেলসহ সব ধরনের খাবার পাচ্ছেন এখানে। ফলে সব ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টির জোগান হচ্ছে।
স্নোটেক্সের এমডি এস এম খালেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি আমাদের কর্মীদের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। তাই আমরা তাদের জন্য মানসম্পন্ন মধ্যাহ্নভোজ নিশ্চিত করছি। যদি কর্মীরা স্বাস্থ্যকর খাবার খায়, তাহলে তারা ফিট থাকবে। এতে কর্মী এবং কম্পানি উভয়েই লাভবান হবে। ’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট