বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট জোড়া গরু উৎপাদনে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছে। তারা জোড়া বাছুর জন্মানোর প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ না এলে এতোদিন এর সুফলও চোখে পড়তো৷ সাধারণত গাভী বছরে একটি বাছুরের জন্ম দেয়। এখন দুটি ভ্রূণ স্থাপন প্রযুক্তির (ইনভারট্রো অ্যামব্রায়ো প্রডাকশন) মাধ্যমে একটি গাভির গর্ভে থেকে একসাথে দুটি বাছুর জন্ম নিবে। এতে গরু উৎপাদন ডাবল হয়ে যাবে। চার বছর আগেই আইভিপি প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি গাভী থেকে দুটি বাছুর জন্মানোতে সফল হন গবেষকরা। তিন বছর আগে আরও একটি গাভি থেকে জোড়া বাছুরের জন্ম দেওয়া হয়।
এ প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে ব্যবহারের জন্য দাতা গাভী থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ এবং ভ্রুণ ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন হয় কোনো দুধেল গাই বা উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের গাভী। প্রথমে ওই গাভি থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়। সেই ডিম্বাণু ল্যাবে পরিপক্ব, নিষিক্তকরণ এবং কালচার শেষে তা ভ্রূণে পরিণত করতে হয়। সাতদিন ল্যাবে থাকার পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল বা দুধ কম দেয় এমন গাভির জরায়ুতে তা স্থাপন করা হয়। দুটি করে ভ্রূণ ধাত্রী গাভীতে সংস্থাপন করা হয়। এরপর ওই গাভীটি গর্ভধারণ করলেই দুটি করে বাচ্চা বাড়তে থাকবে। কম-বেশি ১০ মাসের মধ্যে সেই গাভি থেকে দুটি বাছুর জন্ম নিবে। একটি সুস্থ ও ভালো মানের গাভীর ডিম্বাণু দিয়ে অনেকগুলো গাভীর গর্ভধারণ করানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে আইভিপি প্রযুক্তিতে জন্মানো বাছুরগুলো বর্তমানে পরিণত বয়সে পৌঁছেছে। এরা এখন বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে। এদের মধ্যে ভ্রূণ স্থাপন করে জোড়া বাচ্চা জন্ম দেওয়ানো হবে। এগুলো সম্পূর্ণ সফল হলে গাভীর একটির পরিবর্তে দুটি করে বাচ্চা উৎপাদন হবে। উন্নত দেশগুলো এই প্রযুক্তি আরো আগে থেকেই ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছে। এই প্রযুক্তিতে অনেক দেশের গাভীই দুটি করে বাচ্চা দিচ্ছে। বিশালাকার ফার্মগুলোও ভরে উঠছে ডাবল বাছুরে। এই প্রযুক্তির জন্য বাড়তি ব্যয় রয়েছে। ডিম্বানু সংগ্রহ করে ল্যাবে পরিপক্ক, নিষিক্তকরণ ও কালচার করে তা আরেক গাভীর জড়ায়ুতে স্থাপন করতে যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত লোকবল প্রয়োজন হবে।
এই প্রযুক্তি মানুষের জন্যও চালু করা যায়। এখন উন্নত বিশ্বে নারীরা সিঙ্গেল মাদার হচ্ছে। তারা শুক্রাণু ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করছে শুক্রাণু। তা নিজেদের গর্ভাশয়ে নিষিক্ত করিয়ে মা হচ্ছে। এই শুক্রাণু বিক্রেতার বৈশিষ্ট জানানো হলেও ওই নারী জানতে পারে না- শুক্রাণূ বিক্রেতার নাম ঠিকানা। বিক্রেতাও জানে না ক্রেতার তথ্য। ফলে সিঙ্গেল মা চাহিদা মোতাবেক স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী সন্তান জন্ম দিচ্ছে। তবে আইভিপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই নারী একাধিক সন্তানের মা হতে চাইলে একসাথেই দুটি/তিনটি সন্তানের মা হতে পারবেন। যদিও এই প্রযুক্তি মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগের তথ্য পাওয়া যায়নি। নারীরা এর চেয়ে নিজেকেই নিজের গর্ভে জন্ম দেয়ার ক্লোন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। অনেক আগেই এই প্রযুক্তিতে ডলি নামের ভেড়া জন্ম নিয়েছে। ডলিরও বাচ্চা হয়েছে। হরিণ ও ইঁদুরের উপরও এই প্রযুক্তি সফল হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রগুলো আটকে দিয়েছে মানুষের ক্ষেত্রে। বলা হচ্ছে- এটা ধর্মীয়ভাবে অনৈতিক। এতে যেসকল দম্পতির সন্তান হয় না তারা এ প্রযুক্তিতে সন্তান নিতে পারতো। তা হতো স্ত্রী বা স্বামীর মতো। হয়তো কোনদিন এ সকল প্রযুক্তি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে।
আপাতত ডাবল বাছুর প্রযুক্তির দ্রুত সাফল্য কামনা করছি৷