1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ৬০

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২
ছবি- ডা. রিপন

জীবনের গল্প

-ডা. মোজাহিদুল হক

পর্ব-৬০
হেমন্ত আসতে না আসতেই বিকেল পাঁচটা বাজলেই ঝুপ করে আলো পড়ে যায়। কেমন যেন অচেনা এক পার্থিব আলোয় চতুর্দিকে ডেকে যায়। ইদানিং অহনা অফিস থেকে বাসায় আসার আগেই আমায় বেরিয়ে পড়তে হয়। অহনার অফিসের জানালা দিয়ে আকাশের এমন স্নিগ্ধ রুপ নিশ্চয়ই দেখতে পায়। নাকি কাজের চাপে দেখেই না! বারান্দায় কয়েকটা চড়ুই আসে এ সময়। নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে টানা সাত আট দিন বিছানায় পড়ে আছি। জ্বর আর ব্যাথায় যখন খুব কাতরাই অহনাকে তখন কি যে অসহায় লাগে? বেচারী মনে হয় আমার চেয়েও বেশি অসহায় হয়ে যায়। পরিচিত লোকজন প্রায় সবাইই ফোন করে, বাসায় এসে খোঁজ খবর নিয়ে যাচ্ছে। শাহবাগের সহযোদ্ধারা, ঔষধ কোম্পানির ছেলেপুলেরা, আমার সংগঠনের কমরেডরা সবাই খোঁজ খবর নিচ্ছে। জ্বর যখন উঠছে তখন ১০৫/১০৬ উঠে যাচ্ছে। কি যে বিভীষিকা গেল কয়েকদিন। সারারাত জেগে মাথায় জলপট্টি কিংবা শরীর মুছে দিচ্ছে অহনা। ওর দু চোখের পাতা এক করার উপায় নেই। ও পাশ থেকে উঠে গেলে আমার মনে হচ্ছে আমি মরে যাচ্ছি। অহনা হাত ধরে বসে থাকে উদ্বিগ্ন মুখে। অসহায় লাগে ওকে, বড্ড ভালোবাসা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, আমি কি করব! আমি কি করব!
আকরাম ভাই ফোন করে কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত সব রেসিপি দিচ্ছে অহনা কে আর অহনা সব খাওয়াচ্ছে আমায়। বাধ্য হয়ে অফিস থেকে ছুটি নিতে হয়েছে অহনা কে। বাসায় একা রেখে অফিস যেতে ভরসা পাচ্ছে না বেচারী। পাবে কিভাবে আমি একা একা ওর সাহায্য ছাড়া যে বাথরুমেও যেতে পারছি না। আমার চেয়ে বেশী ধকল যাচ্ছে অহনার ওপর দিয়েই। মুখটা বিস্বাদ হয়ে আছে। জ্বর ছাড়ার পর থেকেই প্রচুর ক্ষিধা পাচ্ছে কিন্তু কিছুই খেতে পারছি না। সারাক্ষণ পেটে ক্ষিধা নিয়ে বসে থাকি। বিস্বাদ মুখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। পুরনো এয়ারপোর্টের দিক থেকে ভীষণ শব্দ তুলে উড়ে যায় বিমান বাহিনীর ট্রেনিং বিমান। দেখা যায় না তবে শব্দের ধাক্কায় গমগম আওয়াজে পুরো এলাকা কাঁপে। কোন পাশের বিল্ডিং এ জানি না একটা ক্ষ্যাপাটে বুড়ি আছে, সারাক্ষণ ঘ্যানর ঘ্যানর করছে। আমি চোখ বন্ধ করে বসে থাকি বারান্দার পাশের সোফায়, অসহ্য লাগে, সামনের ঘরে টিভির সামনে বসি, অসহ্য লাগে। বই নিয়ে বসি মনে হয় ঘাড়ের ওপর মাথা নেই একটা পাতলা কাগজ সর সর করছে। বিছানায় শুতে যাই, মাথা ধপ ধপ করে। আজ থেকে প্ল্যাটিলেট বাড়ছে। জ্বর নেই। ব্যাথা নেই। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, কিন্তু ঘুমাতে পারছি না।
পৃথিবীতে কিছু কিছু খাবার যে এতো বিস্বাদ জ্বরে না পড়লে বুঝতেই পারতাম না। পেঁপে সেদ্ধ এমন একটা খাবার। অহনা এটা আবার আকরাম ভাইয়ের রেসিপি অনুযায়ী বাটি ভর্তি করে দিচ্ছে। এবং প্রবল আগ্রহ নিয়ে দিচ্ছে। খেতে কি যে বিস্বাদ! মানুষ কি করে যে খায়! আকরাম ভাই পৃথিবীর এমন কিছু খাবারের জনক, যে খাবার সুস্থ মানুষেরই মুখে বিস্বাদ লাগবে আর আমি তো অসুস্থ! আবার মোবাইলটা বাজছে। সব গুলো মোবাইল ওই ঘরে নিয়ে রেখেছে অহনা। ঘুমাতে পারিনা তার ওপর ফোনের উৎপাতে হালকা তন্দ্রা মতো এলেও ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। অসুস্থ হওয়ার পর এই এক হয়েছে, ক্ষনে ক্ষনে কিড়িং কিড়িং। মনে হচ্ছে সব রোগীর রোগ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। অসুস্থ হবার পর থেকে ফোন আসার গতি বেড়ে গেছে। অহনাই সব ফোন রিসিভ করছে। সামনের ঘর থেকে অহনা শোওয়ার ঘরে এলো। কপালে বিরক্তির ভাঁজ। আজকাল রোজই অহনাকে ঘরে সালোয়ার কামিজ পরতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর লোকজন আসছে বলে। অহনা ঘরে থাকলে টপস আর ঢিলে পাজামা পড়ে। ঘরে সালোয়ার কামিজে অহনাকে কেমন অচেনা লাগে। আবার একটু যেন মুগ্ধতাও জাগে। মনে হয় বয়স থমকে গেছে। একই সঙ্গে মনে হয় বউয়ের দৌলতে আমারও বুঝি বয়স খানিকটা কমে গেছে।
আকাশে ভালোই মেঘ, কিন্তু বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। মেঘের আড়াল থেকে বিশ্রী তাপ ছড়াচ্ছে সূর্য। হাওয়াও নেই এতটুকু। চিটপিটে গরমে জ্বালা করছে গা। ইদানীং পাঁচ ছ’বার করে লোডশেডিং হচ্ছে। আজ দু’দিন হলো জ্বর নেই। শরীর খুব দুর্বল। সোজা হয়ে বসে থাকতে কষ্ট হয়। কোথায় যেন একটা কোকিল ডেকে উঠল। কী আজব কান্ড, কার্তিকমাসে কুহু? হেমন্ত কালে? এখন একদম সূক্ষ্ম বোধটোধগুলো ঝেড়েজুড়ে ফেলেছি। কয়েকদিন আগে এক বন্ধু বলল তোমার প্র্যাগম্যাটিজমই নাকি আমাকে গাইড করেছে। হুম ঠিক। তবে আমি ঠিক অতটা বাস্তববাদী ছিলাম না। সবাই মিলে আমায় গড়ে তুলেছে। তিলে তিলে। সবাই ঠোক্কর দিয়ে দিয়ে শিখিয়েছে, স্বপ্ন, আবেগ প্রত্যাশা, নেহাতই ফাঁপা বুলি। ডানা মেলা পাখিদের দিকে শুধু তাকিয়েই থাকতে হয়, কোনও কিছু চাইতে নেই। সবাই তো শুধু অধিকারটাই বোঝে। কর্তব্যের ব্যাপারে ঢুঁ ঢুঁ। চা দিয়ে গেল অহনা। একটু একটু করে সরছে মেঘ, গড়াচ্ছে বিকেল। আলো যেন বেড়েছিল সামান্য, আবার পড়েও এল। খিদের পেটে নাকি বিষও অমৃত! কিন্তু ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর প্রচন্ড খিদে পাচ্ছে কিন্তু কিছুই খেতে পারছি না। হঠাৎ হঠাৎ মাথাটা দপদপ করে। স্লাইস করা পেঁপে বাটিতে নিয়ে শ্লথ পায়ে ঘরে ঢুকেছে অহনা। আজ তার ছুটির শেষ দিন।
বিকেল প্রায় শেষ। কার্তিক মাস পড়ে গেছে, এখন ঝুপ করে সন্ধে নেমে যায়। বাতাসে একটা পলকা শিরশিরে ভাব। দুরে কুয়াশার আভাস। চীনমৈত্রী ভবনের পাশের মাঠে, আগে যেখানে বানিজ্য মেলা হতো সেখানে কুয়াশাজড়ানো গাছেরা যেন জবুথবু। চেম্বারে যাবার সময় রোজ দেখি। বসার ঘরে বসে খবরের কাগজ উলটোচ্ছি। পড়ার মতো তেমন কিছু নেই। শুধু এখানে আন্দোলন, ওখানে বিক্ষোভ, সেখানে মারামারি, সরকার যেন ধুঁকছে। ঋণের দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক চাষি, প্রেমিকের বাড়ীতে বিয়ের দাবিতে এক নারী অনশন করছে। কি সব অদ্ভুত ঘটনা। ধন্য প্রেম! রেখেদিলাম খবরের কাগজ টা। টিভির রিমোট হাতে নিয়েও সোফায় রেখে দিলাম। পায়ে পায়ে গেলাম বেড রুমের দিকে, অহনার কোন সাড়াশব্দ নেই। অহনা ঘুমিয়ে পড়েছে, মোবাইলটা হাতে ধরা। আমি একটুক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম অহনাকে। মুখটা সামান্য হাঁ বাচ্চা মেয়েদের মতো। দেখলে ভারী মায়া লাগে। বিশ্রাম পায়ই না। সক্কাল সক্কাল অফিস, সন্ধ্যায় হা ক্লান্ত হয়ে ফেরে তারপর রাতে কি রান্না করবে তার জোগাড় করতে ব্যস্ত, শুতে শুতে সেই নিশুতি রাত। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো, আলো কমে গেছে পশ্চিমের বারান্দার বাইরে। আলো জ্বালতেই অহনা উঠে বসলো।
দৃশ্য বটে একখানা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামনের রাস্তার ধারে মোটরবাইকের সিটে এক তরুণী পা ঝুলিয়ে বসে আছে। একটি যুবক তার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে। দেখনসুখ উপভোগ করার জন্য অনেকেই চলার গতি শ্লথ করছে। কেউ কেউ তো বিরক্তির সাথে মুখ বাঁকাচ্ছে। ইয়াং ছেলেমেয়ে একটু প্রেম করছে, দেখতে আমার মোটেও খারাপ লাগছে না। পাশ কাটিয়ে চলে এসেছি মোটর বাইকের ফুয়েল মিটার লাল সংকেত দেখাচ্ছে। গত সপ্তাহের পর তেল উঠানো হয়নি। আজ ফেরার পথে তেল নিতে হবে। সাগরে কি এক নিম্নচাপ হয়ে সাইক্লোন ধেয়ে আসছে, নাম এবার পড়েছে সিত্রাং। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলছে আগামী দু’দিন খুব বৃষ্টি হবে। সাইক্লোন টা সুপার সাইক্লোনও হতে পারে বলে আশংকা আবহাওয়া দপ্তরের। আহা আবার উপকূলীয় এলাকার মানুষকে যে ঘরবাড়ি, জমিজিরেত হারাতে হবে। কত মানুষ মরবে কে জানে? কত রকমের আপসের মধ্যে দিয়ে মানুষকে যে যেতে হয়। শহুরে মানুষদের এসব সংগ্রামী মানুষের জীবন নিয়ে ভাববার সময় কই? জিনিসপত্রের দামে মধ্যবিত্ত নাকাল কিন্তু কারো কোন টুঁশব্দ নেই।যদিও বা দুই একজন প্রতিবাদ করছে তাদের উপর আবার চলছে রাষ্ট্রীয় হিংসা। এদেশের জনগণ এখন হাওয়ামোরগের মতো আচরণ করছে, বিপদ বুঝলে অবলীলায় রাষ্ট্রের অত্যাচারের কাছে আত্মসমর্পনের রাস্তা খোঁজে। অথচ এ মানুষগুলোর বুঝতে হবে রাষ্ট্র যদি বোঝে, হিংসার আশ্রয় নিলে রাষ্ট্রের ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা, তাহলে রাষ্ট্র পিছু হটতে বাধ্য। বুনো ষাড়েঁর মুখোমুখি হলে তাকে শিং ধরেই থামাতে হয়।
আমি মুক্ত চিন্তা করি, মুক্তির চিন্তা করি। ইদানিং অনেক মুক্ত চিন্তার মানুষের চিন্তা ভাবনা দেখে হতাশা বোধ করি। অথচ এসব মানুষের বুঝা উচিত স্বাধীনতা মানে যেমন অ্যানার্কি নয়, তেমনই মুক্ত চিন্তা মানে তো বলগাহীন ভাবনা নয়। মুক্তচিন্তার মানুষ কি ধ্বংসের চিন্তা করতে পারে? আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। অহনা শুয়ে পড়েছে। ব্যলকনির দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। হেমন্তের নরম বাতাস। মেঘে ঢাকা পড়েছে আকাশ। সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে আস্তে করে শুতে গেছি। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। সাথে হাওয়া। অহনা গায়ের কাঁথাটা গলা অব্দি টেনে নিল। নিঃশ্বাস ফেলছে জোরে জোরে।
রাস্তায় আজ বড্ড যানজট। রিক্সা, সিএনজি, ট্যাক্সি, প্রাইভেট কার, পথচলতি অগনিত মানুষ।সব কিছু থেকেই বিচ্ছুরিত হচ্ছে কোলাহল। অবয়বহীন। অর্থহীন। মাধুর্যহীন। বিচ্ছিরি ট্রাফিক জ্যাম। বাস আর কারের মধ্যিখানে বন্দি হয়ে গেছে একখানা সিএনজি। বাসের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে চেঁচাচ্ছে যাত্রীরা, অলস মেজাজে জট ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। রাতে ঝড় উঠলো, বৃষ্টি ঝরছে একটানা। ঝমঝম ঝমঝম। আকাশ যেন ঝাঁপিয়ে পড়ছে ধরণীতে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews