ঢাকা মহানগর এলাকায় ঢাকা পুলিশ কমিশনারের (ডিএমপি) মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধের ক্ষমতার বিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত জানতে চেয়েছেন, মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় ডিএমপি কমিশনারকে দেওয়া ক্ষমতার বিধান কেন সংবিধান পরিপন্থী ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।
জনস্বার্থে করা এসংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ রবিবার এ রুল দেন। আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিএমপি কমিশনারকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ছাড়া শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
রিটকারী আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, অধ্যাদেশের দুটি ধারা (২৯ ও ১০৫) চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল রিটে। কিন্তু আদালত রিটের আরজি সংশোধন করে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার ক্ষমতাসংক্রান্ত ২৯ ধারার বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার এ রিটে প্রাথমিক শুনানির পর রবিবার আদেশের জন্য রেখেছিলেন আদালত। সেদিন আদালত এ রিটে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের বক্তব্য শোনেন। বিধানটির পক্ষে অবস্থান নিয়ে শুনানিতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা সেদিন রিটটি খারিজের অনুরোধ করেছিলেন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, ‘সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে সভা-সমাবেশ, মিছিল নিয়ন্ত্রিত অধিকার। আইন দ্বারা আরোপিত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। দিস ইজ নট অ্যাবসুলেট পাওয়ার। সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা, জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ’ তিনি আরো বলেছিলেন, ‘শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী হচ্ছে পুলিশ। আর ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারাটি সেই শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই। এতে ডিএমপি কমিশনারকে বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থেই তিনি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন। যেমন একই কারণে মহানগর এলাকার বাইরে ১৪৪ ধারা দেওয়া হয়ে থাকে। ’
আর আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরীর ভাষ্য, অধ্যাদেশের ২৯ ধারা সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেছিলেন, সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ বলছে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমাবেশ করার কথা। আর অধ্যাদেশে পুলিশ কমিশনারকে সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সীমাবদ্ধতা (রেসট্রিকশন) আর নিষিদ্ধ (প্রোহিবিশন) সমার্থক নয়। দুটি শব্দের দুই অর্থ। সংবিধান যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সভা-সমাবেশ সীমাবদ্ধ করেছে, নিষিদ্ধ করেনি। সুতরাং অধ্যাদেশের এই বিধান অসাংবিধানিক এবং সাংঘর্ষিক।
সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। ’
আর ১৯৭৬ সালের ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, জনসাধারণের শান্তি বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পুলিশ কমিশনার যখন যত দিন প্রয়োজন মনে করবেন লিখিত আদেশে সভা, সমাবেশ বা মিছিল নিষিদ্ধ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে অনুরূপ কোনো নিষেধাজ্ঞা সরকারের অনুমতি ব্যতীত ৩০ দিনের বেশি বলবৎ থাকবে না। অর্থাৎ সরকারের অনুমতি ছাড়াই ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ৩০ দিন মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে পারেন। আর সরকারের অনুমতি নিয়ে মিছিল-সমাবেশ অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করতে পারবেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ২৯ ও ১০৫ ধারা এবং ২০০৬ সালে প্রণীত এ অধ্যাদেশের বিধি ‘ঢাকা মহানগর পুলিশ (সভা, সমাবেশ, মিছিল এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালার’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২০ অক্টোবর জনস্বার্থে এ রিট আবেদন করা হয়েছিল। আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী আবেদনকারীদের একজন। বাকি চার আবেদনকারী হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কে এম জাবির, চাঁদুপর আদালতের আইনজীবী সেলিম আকবর, রাজধানীর বাসিন্দা শাহ নুরুজ্জামান ও মোহাম্মদ ইয়াসিন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট