আকাশছোঁয়া স্বপ্ন সবাই দেখে। পূরণ করতে পারে কয়জন? একজন ফুটবলারের স্বপ্ন বিশ্বকাপে নিজের দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। সেই স্বপ্ন যখন ভালোবাসা হয়ে কাঁধে ভর করে, তখন দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। তবে সেই দায়িত্বের ভারে অনেকেই নুইয়ে পড়েন। স্বপ্ন রয়ে যায় স্বপ্ন হয়েই। কিন্তু কাল বিশ্বকাপের মঞ্চে স্বপ্নপূরণের গল্পই শোনানো হল। চোখের সামনে মঞ্চায়িত হল রুপকথার এক কাব্য। বোনো নামের যে মানুষটি ফুটবল প্রেমীদের কাছে অচেনা একটি নাম ছিল, সেই বোনোই এখন বিশ্ব ফুটবলের নায়ক! বোনো দেখালেন, মন জয় করলেন। নিজের নামকে চেনালেন গোটা বিশ্বকে।
পরপর তিনটি শট ফিরিয়ে দিয়ে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ও কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট স্পেনকে একাই রুখে দিলেন বোনো। গড়লেন এক নতুন ইতিহাস। বোনো ইতিহাস। মরক্কোবাসী সারাজীবন যে সুখস্মতি বয়ে বেড়াবে।
মঙ্গলবার বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের ম্যাচে শুন্য গোলের সমতায় শেষ হওয়া ম্যাচের ভাগ্য ঝুলে যায় পেনাল্টিতে। আর সেখান থেকে মরক্কোকে তুলে কোয়ার্টারে পৌঁছে দিলেন মরক্কোর গোলকিপার বোনো। পেনাল্টি শুটআউটে স্পেনকে হারিয়ে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কো। ম্যাচের নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময়ে তিনি কোনো গোল খাননি। এরপর টাইব্রেকারেও তার জালে বল পাঠাতে পারেনি স্পেনের বিশ্বখ্যাত তারকা ফুটবরাররা। দীর্ঘদেহী বোনো টাইব্রেকারে পরপর সেভ করে দেন পাবলো সারাবিয়া, কার্লোস সোলার ও সের্জিও বুস্কেটসের শট। ফলে ৩-০ গোলে জয় পায় মরক্কো। নতুন এক ইতিহাস গড়ে দেশটি। আর সেই ইতিহাসের মহানায়ক বোনো।
১৯৯১ সালে মন্ট্রিলে জন্মগ্রহণ করেন বোনো। অল্প বয়সে মরক্কোতে চলে যান। মাত্র 8 বছর বয়সে উইডাদ কাসাব্লাঙ্কা ক্লাবে যোগদান করেন। ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে ছিলেন এবং তাদের সিনিয়র দলের হয়ে ১১টি ম্যাচে অংশগ্রহনে করেছেন বোনো। ২১ বছর বয়সে স্পেনের পাওয়ার হাউস অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বি দলের হয়ে দুটি মৌসুম খেলেছেন বোনো। কিন্তু মুল দলে কখনো জায়গা করতে পারেননি। ২০১৪ সালে স্পেনের দ্বিতীয় বিভাগে দুটি মৌসুম খেলেছেন বোনো। এরপর তিনি গিরোনায় চলে আসেন এবং ২০১৯ পর্যন্ত লা লিগায় খেলেন। এরপর ধারে সেভিলায় নেওয়া হয় তাকে। গত তিন মৌসুমে তিনি ক্লাবটির গোলরক্ষক হয়ে খেলছেন। ২০২১ সালে তার ১৫টি ও গত মৌসুমে ১৩ টি শাটআউট ছিল।
২০১৩ সাল থেকে নিয়মিতভাবে মরক্কোর জাতীয় দলে খেলছেন বোনো। ২০২১ সালে আফ্রিকা কাপ অফ নেশনস টুর্নামেন্টে ৪টি ম্যাচ ও বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ৮টি ম্যাচ খেলেছেন এই ফুটবলার।
বিশ্বকাপের নকআউটে স্পেনকে রুখে দিয়ে হিরো বনে যাওয়া বোনোর এটাই প্রথম নায়কোচিত জয় নয়। এর আগে ২০২০ সালে ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল তার ক্লাব সেভিলা। সে ম্যাচে নিজেকে চিনিয়েছিলেন বোনো। ম্যাচে ৬টি দুর্দান্ত সেভ করে হিরো হয়ে যান তিনি। ফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল সেভিলা। সেই ম্যাচেও দুর্দান্ত তুটি সেভ করেছিলেন তিনি। এরপরই সেভিলার সঙ্গে চার বছরের চুক্তি করেন বোনো। আর এবার বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে দেশকে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে নিলেন। এই মুহূর্তে মরক্কোর সবচেয়ে বড় নাম বোধহয় একটাই, বোনো।
কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালে মুখোমুখি হবে বোনোর মরক্কো। সেই ম্যাচেও মরক্কোর নায়ক হিসেবেই গোলপোস্ট আগলে রাখবেন তিনি। গোটা ফুটবল বিশ্ব সেদিনও তার জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবে। অপেক্ষায় থাকবে মরক্কোবাসী। কে জানে, রুপকথার এক নতুন ইতিহাস জন্ম দিয়ে বোনো সেমিফাইনালে পৌঁছে দিবেন দলকে! নামটা যেহেতু বোনো, স্বপ্ন তো দেখাই যায়!
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট