বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ বিচারপতি সৈয়দ আসিফ শাহকার বাংলাদেশে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন। বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত এই সুইডিশ বিচারপতি ও কবি টেলিফোন আলাপে বাসসকে তাঁর এই অন্তিম ইচ্ছার কথা জানান।
বিচারপতি সৈয়দ আসিফ বলেন, ‘আমার বয়স ৭২ বছর। জানি না আর কত দিন বাঁচব।
কিন্তু বাংলাদেশের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমি বাংলাদেশের মাটিতেই সমাধিস্থ হতে চাই। বাংলাদেশের নাগরিক না হলে যেহেতু সেখানে সমাধিস্থ হতে পারব না, তাই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি লিখেছি। ’
সৈয়দ আসিফ শাহকার পাকিস্তানের পাঞ্জাবের হরপ্পায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ২২ বছরের তরুণ। পাঞ্জাব স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২৫শে মার্চের কাল রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিকদের একটি অংশ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে প্রতিবাদ, সমাবেশ, কবিতা লেখা ও লিফলেট বিতরণ করেন এই তরুণ। আর তাঁর পরিণামে তিনি নিজ পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠেন। তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে নানারকম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেন। তবু বাংলাদেশের বিপক্ষে যাননি। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পর সৈয়দ আসিফ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। সৈয়দ আসিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিজয় না হলে আমিও কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারতাম না। আমাকে পাকিস্তানের কারাগারেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো অথবা কারাগারেই জীবন পার হয়ে যেত। ’
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি কিছুদিন লাহোরে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু নিজ দেশে বেশি দিন থাকতে পারেননি। ১৯৭৭ সালে তিনি সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে যান। পরে সেখানেই তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং কাজ শুরু করেন।
২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে সৈয়দ আসিফ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আসেন। রাষ্ট্রপ্রতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাঁর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইংরেজিতে লেখা ৭৬৭ শব্দের দীর্ঘ চিঠিতে সৈয়দ আসিফ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাঁর অপার ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি শুধু বিশ্বাস করি না, আমি নিশ্চিত যে আপনি আমার বিনীত অনুরোধটি আন্তরিকভাবে বিবেচনা করবেন। ’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট