1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৬ অপরাহ্ন

আলোয় আলোয় বাংলাদেশ

সম্পাদক
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

‘আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ সংবিধানের প্রস্তাবনার তৃতীয় প্যারায় লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এভাবেই স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসা¤প্রদায়িক, অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নিষ্পেষণমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ গড়াই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল বৈশিষ্ট্য। আর এই লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে যাচ্ছে ফিনিক্স পাখির মতন জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো পদ্মা সেতু গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের মস্তককে আরো উন্নত করেছে। কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে শুরু করে মহাবিশ্বে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কিংবা দক্ষ হাতে কোভিড মোকাবিলায় সার্থক বাংলাদেশকে নতুন করে দেখছে বিশ্ব। ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর মধ্যেই উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ যেন আলোয় আলোয় ভরা। কবিগুরুর গানের মতোই, ‘আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি/আলোর ঢেউয়ে উঠল নেচে মল্লিকা মালতী।’ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ যেন সুকান্ত ভট্টাচার্যের দুর্মর কবিতার মতো- ‘ভেঙেচুরে ছারখার, তবুও মাথা নোয়াবার নয়’।

গবেষকদের মতে, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের যাত্রা ছিল কণ্টকাকীর্ণ পথে। ভৌত অবকাঠামো, রাস্তাঘাট-ব্রিজ-যানবাহন, বিদ্যুৎ, টেলিফোন সবকিছুই ছিল ক্ষতবিক্ষত। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শূন্য। সহায়-সম্বলহীন, নিঃস্ব কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ঘরে ঘরে ক্ষুধার্ত মানুষ, বাইরে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্নীতিসহ আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড় করা, সংবিধান তৈরি, পররাষ্ট্রনীতি তৈরি, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়, আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যপদ লাভ, সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান- সবই সামলাতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। মাত্র সাড়ে তিন বছরে রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরিই ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের বড় সাফল্য। আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও তার দেখানো পথে হেঁটে বর্তমানে উন্নয়নের রোল মডেল আজকের বাংলাদেশ।

তবে বিজয়ের ৫১ বছর পেরিয়েও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কতটা এগোল বাংলাদেশ- এমন প্রশ্নও রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন এখনো অধরা। স্বাধীনতার সাড়ে ৩ বছরের মাথায় পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে উল্টোপথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। বন্দুকের নলের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত সংবিধান থেকে অন্তর্হিত হয়ে যায় ধর্মনিরপেক্ষতা। রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনে দেখা দেয় নানা বৈপরীত্য। ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও দুর্নীতির ক্রমবিকাশে মুখ থুবড়ে পড়ে বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বিশ্লেষক ও গবেষকদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ছিল ৪টি- বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের শুরুই হয়েছিল দ্বিজাতিতত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে। দ্বিজাতিতত্ত্বটা ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ওপর নির্ভরশীল। বাঙালিরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে দেখে পাকিস্তানি হানাদাররা ক্ষিপ্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি নিধনে। অন্যদিকে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের নামনিশানা ছিল না। শাসন ব্যবস্থা ছিল পুরোপুরি আমলাতান্ত্রিক ও সামরিক। পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাসে কোনো সাধারণ নির্বাচন হয়নি। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান থেকে সমাজ-রাষ্ট্র অনেক দূরে। সময়ের পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয়ে গেছে চার মূলনীতি। বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ অসা¤প্রদায়িক বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র চেয়েছিলেন, কিন্তু এই বৈষম্য আরো বেড়েছে।

তবে একান্ন বছরের পথচলার বাঁকে বাঁকে বাংলাদেশের অর্জনও অনেক। দারিদ্র্যের তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা ঘুচিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ গুণ আর জিডিপি বেড়েছে ৩০ গুণ। দারিদ্র্যসীমার নিচে জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এখন ২০ শতাংশের কম। খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৬০ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে তৈরি পোশাক ছাড়াও রুপালি ইলিশ, হিমায়িত চিংড়ি, রাজশাহীর ফজলি আম, সিলেটের শীতলপাটি, নারায়ণগঞ্জের জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁত, কুমিল্লার খাদি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের ওষুধ যাচ্ছে বিশ্বের ১৬৬টি দেশে। এসব অগ্রগতির স্বীকৃতিও মিলছে। লন্ডনভিত্তিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ ভবিষ্যতের যে ১০টি উদীয়মান বাজারকে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টানা ১৪ বছরে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ। আগে আমাদের আমদানি করতে হতো। এখন আমরা রপ্তানি করছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো দিয়েছিলেন। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা দেখিয়েছেন উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে গত ৫ দশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেয়া, তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উঠে আসা, শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক অংশগ্রহণ, জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য, নবজাতক ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূলনীতি বৈষম্যহীন সমাজ- আজও প্রশ্নবিদ্ধ। কমেনি ধনী-দরিদ্র বৈষম্য। যদিও ৫১ বছরে দরিদ্রতার তকমা ঘুচিয়ে বাংলাদেশ এখন মধ্যম সারির দেশ। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এখনো বহুদূর পথ হাঁটতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ভিত রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু। শুধু অর্থনৈতিক মুক্তিই নয়; স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল আকাক্ষা ছিল একটি অসা¤প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তার কন্যা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছেন। বিশ্বে গুরুত্বের সঙ্গে প্রশংসিত হচ্ছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার তার মানবিক দিক। তবে শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে উন্নয়ন সীমাবদ্ধ নয়। প্রয়োজন সুদৃঢ় গণতান্ত্রিক ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো অসা¤প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews