1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধে খোকন গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিনেতা আহসানুল হক মিনু

সিজুল ইসলাম:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
বীরমুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা আহসানুল হক মিনু।

টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ আহসানুল হক মিনুকে আমরা একজন গুণী অভিনয়শিল্পী হিসেবেই বেশি চিনি। কিন্তু তিনি যে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা সেটিও অনেকের অজানা। আজ মহান বিজয় দিবসে তাই এই বীরমুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান জানাই আমরা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ টি সেক্টরের অন্যতম ছিল ৭ নম্বর সেক্টর। মূলত বগুড়া এর আশেপাশের এলাকাগুলো নিয়ে এই সেক্টর গঠিত। আর সেখানে ছোট ছোট কিছু গ্রুপ ছিল।

বগুড়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কয়েকটা গেরিলা গ্রুপ বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন অপারেশন করে পাকিস্তানীদের কে ব্যতিব্যস্ত করে রাখতো। যে সমস্ত গ্রুপ সে সময় বগুড়ায় সক্রিয় ছিল, তাদের মধ্যে ওয়ালেস গ্রুপ, দিপু গ্রুপ, খোকন গ্রুপ অন্যতম। আহসানুল হক মিনু এমনি একটা গ্রুপের হয়ে যুদ্ধ করেছেন। আব্দুর রাজ্জাক (খোকন) গ্রুপ এর সাথে পরিচিত হই ও তাঁদের কিছু অপারেশন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব আমরা।

গ্রুপ নং – ৪৭।
গ্রুপ কমান্ডারঃ আব্দুর রাজ্জাক (খোকন)।
সেকেন্ড ইন কমান্ডঃ আহসানুল হক মিনু।

এই দলে সর্বমোট ১৪ জন যোদ্ধা ছিল। তাঁদের নাম এর পাশে এফ.এফ. নাম্বার –

১. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (খোকন) – ৭০৯
২. মোঃ আহসানুল হক মিনু – ৭০০
৩. মোঃ আমিনুর রহমান মুকুল – ৭৬৮
৪. মোঃ তাজুর রহমান তাজু – ৬৮৮
৫. মির মঞ্জুরুল হক – ৭০২
৬. এ.বি.এম মাসুদুল আলম বাঁকা – ৬৯৬
৭. মরহুম মতিয়ার রহমান – ৭৩৮
৮. মোঃ মতিয়ার রহমান খাঁন- ৭০১
৯. মোঃ আব্দুর রশিদ – ৭১৪
১০. শফিকুল আলম – ৬৮৯
১১. মোঃ কামরুল হাসান মোজাম – ৭০৩
১২. রফিকুল ইসলাম – ৭০৭
১৩. হাজি মোঃ ইজান আলী – ৭০৪
১৪. মোঃ বেল্লাল – ৭২৯

এই গ্রুপ যে অপারেশনগুলি করে, সে সমস্ত অপারেশনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপঃ

১। সারিয়াকান্দি থানার ও.সি. কে গ্রেনেড চার্জ করে হত্যা করা।

২। সারিয়াকান্দি যাওয়ার রাস্তায়, ফুলবাড়ীর নিকট কাঠের ব্রীজ উড়িয়ে দেওয়া, যেন পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে।

৩। বগুড়ার আটাপাড়ার ঈদগাহ মাঠে জ্যাম্পিং মাইন দ্বারা ১৭ জন রাজাকার ও দুইজন পাকিস্তানি প্রশিক্ষক কে হত্যা করা।

৪। আটাপাড়া ও জয়পুরপাড়ার মধ্য ১১ কেভি ট্রান্সফরমার এক্সপ্লোসিভ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া।

৫। শুখানপুকুর দীঘলকান্দি গ্রামের সামনে পাকিস্তানি বাহিনীর স্পেশাল ট্রেন মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া। এতে ৯৮ জন পাক-সেনা নিহত হয় ও বেশ কিছু পালিয়ে যায়।

৬। ভেলুর পাড়া রেল ষ্টেশনের কাছে চকচকের বিলের উপরে পাকিস্তানি বাহিনীর আরও একটি স্পেশাল ট্রেন উড়িয়ে দেওয়া। তাতে বেশ কিছু রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এরপর থেকে রাত্রীকালীন ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

৭। গোহাইল রোডে পশু চিকিৎসালয়ের বিল্ডিং এর সামনে ১১ কেভি ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দেওয়া। এতে বগুড়া শহরে বেশ কিছু অঞ্চল কয়েকদিন অন্ধকারে ছিল। গ্রুপের একজন সদস্য রিক্সা চালকের ছদ্মবেশে রিক্সার গদির নিচে এক্সপ্লোসিভ নিয়ে যায় এবং সেই এক্সপ্লোসিভ ব্যবহার করে ট্রান্সফরমারটি উড়িয়ে দেওয়া হয়।

৮। আটাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আর্মি ক্যাম্পে রাতে পাকবাহিনীকে আতঙ্কে রাখতে প্রায় রাতেই ১টা থেকে থেমে থেমে গুলি চালাতো এই গ্রুপের যোদ্ধারা ভোর ৪টা পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

৯। তখনকার সময় রাজাকার কমান্ডার ছিল মোমিন হাজী। বিহারী লিডার ছিল নঈম কসাই। নঈম কসাইকে নুনগোলা হাটে বাঁকা ও লাবলু নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা ষ্টেনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। মোমিন হাজী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে সময় মুক্তিযোদ্ধা মোজাম তাকে গ্রেনেড চার্জ করে। তাতে সে মারা যায়নি, তবে আহত হয়েছিল।

১০। মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (খোকন) কমান্ডারের নির্দেশে মোঃ আহসানুল হক মিনু বগুড়ার মহিলা কলেজে রেকি করতে যায়। সঙ্গে দুইটি গ্রেনেড ও ষ্টেনগান। সময়টা ছিল আনুমানিক সকাল ৮টা। কলেজের পিছনের সরু গলি দিয়ে ঢুকে যায় মিনু। হঠাৎ সামনে থাকা পাকিস্তানী বাহিনীর একজন জোয়ান বলে উঠল “হল্ট”। মিনু তখন অসাড় অবস্থায় দাঁড়িয়ে যায় ও চিন্তা করে – আজই বুঝি তাঁর শেষ দিন। কিন্তু সেই জোয়ান মিনুকে বেশ কিছু প্রশ্ন করে। মিনু উত্তর দিলে সে বলে “তুম চালে যাও”। মিনু ভেবেছিল, ঘুরে গেলেই হয়তো ওরা পিছন থেকে গুলি করবে, কিন্তু করলো না। ওদের আড়াল হতেই ৮ মাইল দৌড়ে ক্যাম্পে গিয়ে পৌঁছায় এবং কমান্ডারকে বিস্তারিত জানায়। সেই সময় ক্যাম্পটি ছিল কুটুর বাড়ীতে।

১১। সে সময় যাতায়াতের প্রধান রাস্তা ছিল বাংলাদেশের সারিয়াকান্দি থানার অন্তর্গত হাটশেরপুর হতে নৌকা যোগে ভারতের মাইনকাচরে। ২য় বার গোলাবারুদসহ মাইনকাচর হতে নদী পথে ফেরার সময় পাকিস্তানী বাহিনীর গানবোট হঠাৎ গ্রুপটির উপর আক্রমণ করে। সকলেই দ্রুত নদীর চরের খাঁড়ির ভিতরে নৌকাসহ লুকিয়ে পরে ও নৌকা ছেড়ে অস্ত্রসহ নেমে গানবোট টা কে অ্যাটাক করে। তাতে গানবোটের ৪ জন পাকিস্তানি আর্মি মারা যায় ও খোকন গ্রুপ গানবোটটি দখল করে এবং সেটাকে নিয়ে হাটশেরপুর ফিরে আসে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী জানতে পারে যে তাদের গানবোটে আক্রমণ করা হয়েছে। সেই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তারা একটি স্যাবার জেট প্লেন পাঠায়। মুক্তিযোদ্ধারা তাড়াতাড়ি গাছের ডালপালা, খড় দিয়ে গানবোটকে ঢেকে দেয়। প্লেনটি কয়েকটা চক্কর দিয়ে কোন কিছু দেখতে না পেয়ে ফিরে চলে যায়।

১২। ভারত থেকে আসার সময় এই গ্রুপের সাথে ২ জন নৌ কমান্ডো কে দেওয়া হয় । সেই নৌ কমান্ডো দুইজনকে ফুলছড়ি ঘাটের কাছে পৌঁছে দেয় মিনুরা এবং নৌ কমান্ডোদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে। অনেক রাতে ঐ নৌ কমান্ডোরা “লিপেট মাইন” ব্যবহার করে “শের আফগান” নামক একটি ফেরি জাহাজ কে ডুবিয়ে দেয়।

১৯৭১ সালের ১১ই ডিসেম্বর ২ জন ভারতীয় সেনা অফিসার, একজন লেঃ কর্ণেল ও অপর একজন মেজর, বগুড়ার ফুলবাড়ী থেকে এই গ্রুপ কে খোঁজ করছিল এবং মানুষজনকে জিজ্ঞাসা করছিল “খোকনকা গ্রুপ কাঁহা হ্যায়?” ১৩ ডিসেম্বর ভোরে এই গ্রুপ ভারতীয় বাহিনীর সাথে দেখা করে। মেজর তাসিরাম ডোগড়া’র সাথে পরিচিত হয় তাঁরা। ভারতীয় বাহিনীর এক গ্রুপকে চেলোপাড়ায় পৌঁছিয়ে দেয়। অপর আর এক গ্রুপের সঙ্গে রাজাবাজার পর্যন্ত এসে যৌথ ভাবে পজিশন নেয়। তারপর ইউ.এন.এ এর একটি গাড়ীতে ২ জন ভারতীয় সেনা অফিসার ও দুই জন বিদেশীসহ তারা সাতমাথার দিকে চলে যায়। এরপর পাকবাহিনীর সেনারা দলে দলে পুলিশ লাইনে এসে অস্ত্র সারেন্ডার করতে থাকে ও লাইন ধরে বসে যায়। এরপর এ গ্রুপের সদস্যরা কমান্ডারসহ সাতমাথায় পর্যন্ত যায় ও সাতমাথায় বাংলাদেশের পতাকা উড়ায়।

এছাড়াও খোকন গ্রুপ ছোট খাট আরো অনেক অপারেশন করেছিল। আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে খোকন গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড বগুড়ায় অবস্থান করছেন। মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিজ শহর বগুড়ায় গিয়েছেন নানা ব্যস্ততা সত্ত্বেও। সতীর্থ কেউ আছে কেউ নাই। তবুও হয়ত একাত্তরের দিনগুলো স্মৃতি থেকে ভেসে উঠে মনের মণিকোঠায়। অদেখা বিশ্ব অনলাইন পোর্টালের পক্ষ থেকে এই বীরমুক্তিযোদ্ধার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা ভাল থাকুক সুস্থ থাকুক।

মূল তথ্যঃ আহসানুল হক মিনু

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews