প্রাচীন পুণ্ড্রের এই অমেয় তীর্থভূমি, আজকের বগুড়ায় তৃতীয় বারের মত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো দুইদিনব্যাপী তৃতীয় গুণীজন ও শিল্পী মহাসম্মেলন–২০২৩।
সেখানে গতকাল শনিবার শেষদিনে শহীদ টিটু মিলনায়তন মঞ্চে বগুড়ার ২০ টি সংগঠনের ৩০ জনের অধিক মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক কর্মীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে মঞ্চায়িত হলো কিত্তনখোলা নাটকটি। তৃতীয় গুণীজন ও শিল্পী মহাসম্মেলনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অর্জন এত গুলি ভিন্ন ভিন্ন দলের সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে নাটকের মঞ্চায়ন। সবখানেই যখন বিভেদের খান্ডবদাহন তখন বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মীরা সারা বাংলাদেশের কাছেই এক অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করলো এমন বৃহৎ আয়োজনে একমঞ্চে এক হয়ে, একসুরে এক তালে। সেলিম আল দীন রচিত ‘কীত্তনখোলা‘ নাটকটির বিষয় হলো ‘লোকায়ত জীবন সংস্কৃতি‘। এই নাটকে মেলায় আসা যাত্রাদলের অভ্যন্তরীণ প্রেম, ভালবাসা, বিরহ যেমন তুলে ধরা হয়েছে, ঠিক তেমনি তুলে ধরা হয়েছে মানুষের বিভিন্ন পর্যায়ে রূপান্তরের কাহিনী। কিত্তনখোলা সামাজিক ও পেশাগত রূপান্তরের নাটক। কিত্তনখোলা নাটকে নাট্যকার রূপান্তরবাদকে প্রয়োগ করে প্রাচীন বাংলার জনজীবনকে স্বার্থকভাবে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ সামগ্রিক অর্থে একটি বড় গ্রাম। এই দেশে বসবাস করে যেসব মানুষ, তারা বিভিন্ন ধর্মে, বর্ণে, গোত্রে বিভাজিত হলেও তাদের প্রাচীন সমাজ–সংস্কৃতি–সভ্যতা ছিল এক ও অভিন্ন। গ্রামীণ মেলার বিভিন্ন অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ করলে তা স্পষ্ট হয়। কারণ এ দেশ অসাম্প্রদায়িক। মনাই বাবার মাজার তার প্রমাণ। যেখানে সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলা বসে।
সেলিম আল দীন দেশের মাটি ও মানুষের জন্য নাটক লিখেছেন, কিন্তু তাঁর দেশ ভাবনা ছিল বিশ্বভূগোলের আলোকে। দেশীয় ঐতিহ্যকে যিনি বিশ্ব আলোকে আলোকিত করতে চেয়েছেন দেশজ রীতিতে। প্রাচ্য দর্শনেই তিনি পরিপূর্ণ জীবন খুঁজে পেয়েছেন। তাই তিনি প্রাচ্য শিল্পতত্ত্ব দিয়ে পাশ্চাত্য শিল্পের অপূর্ণাঙ্গতাকে তুলে ধরেছেন। তাই তাঁর নাটকে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের সমান্তরাল অথচ স্বতন্ত্র এক শিল্পের দেখা মেলে।
কিত্তনখোলা নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সভাপতি ও বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন তৌফিক হাসান ময়না। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন যেসব সংগঠনের সদস্যরা তাঁরা হলেন– রহমত গাড়িওয়ালাঃ বেলাল হোসেন (সুরতীর্থ), করিম ঃ আবু সাঈদ সিদ্দিকী (বগুড়া বাউল গোষ্ঠী), ছায়ারঞ্জনঃ শাহাদাত হোসেন (বগুড়া থিয়েটার) , রবিদাসঃ কনক কুমার পাল অলক (বগুড়া থিয়েটার) , বৃদ্ধঃ আব্দুল হান্নান (কাহালু থিয়েটার) , ছুটনিঃ বৈশালী (প্রকাশ শৈলী), আলতুঃ শাহারিয়ার সিফাত (কলেজ থিয়েটার), সোনাইঃ বিধান কৃষ্ণ রায় (বগুড়া থিয়েটার), বছিরঃ এইচ,আলিম (শব্দকথন সাহিত্য আসর), ইদু কন্ট্রাক্টর খলিলুর রহমান চৌধুরী (নান্দনিক নাট্যদল), মালেকঃ সাদেকুর রহমান সুজন (সংশপ্তক থিয়েটার),ওদ্দাঃ আসাদুর রহমান খোকন (স্বপ্নচূড়া শিল্পী গোষ্ঠী), সুবল ঘোষঃ জাহেদুর রহমান মুক্তা (নাট্যগোষ্ঠী) , বায়োস্কোপওয়ালাঃ আলমগীর কবির (মন্দিরা সাংস্কৃতিক পরিষদ), হাজির আলীঃ এ,বি,এম জিয়াউল হক বাবলা (আনন্দকন্ঠ), ডালিমনঃ পূর্ণিমা সরকার নিভা ( সংশপ্তক থিয়েটার) , মালকাঃ লুবনা জাহান (প্রকাশ শৈলী), রুস্তমঃ রবিউল,আলম অশ্রু ( অ আ সাহিত্য সংসদ), বনশ্রী বালাঃ গাজী আশা ( বগুড়া থিয়েটার), কাশেম আলীঃ রবিউল করিম (কলেজ থিয়েটার) ,মোহাদ্দেসঃ সর্দার হামিদ (বগুড়া থিয়েটার), জনৈকঃ সোহাগ বাবু (বগুড়া থিয়েটার), বিশাল চাকী (কলেজ থিয়েটার) সোবহানি বাপ্পী (বগুড়া থিয়েটার) , কথকঃ ঐশী রায় (কলেজ থিয়েটার)।
বগুড়ায় এটিই প্রথম কোন একটি নাটকে ২০ টি সংগঠনের কর্মীরা একমঞ্চে অভিনয় করলেন। এ বন্ধন সবসময় অটুট থাক সেটিই সকলের প্রত্যাশা। উল্লেখ্য, ২০ ও ২১ জানুয়ারি দুইদিনব্যাপী এ আয়োজনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বগুড়ার সাত শতাধিক শিল্পী ও গুণীজন রেজিস্ট্রেশন করে অংশগ্রহণ করেছিল। শত গুণী ও শিল্পীকে পুণ্ড্র পদকে ভূষিত করা হয়।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট