মজিব রহমান
ধর্মীয় বিশুদ্ধ বর্ণনা অনুসারে যে ছয় দিনে জগৎ সৃষ্টি করা হয়েছে— তা হল রবিবার থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার। রবি ও সোমবার— এ দুই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবার ভূমণ্ডলের সাজসরঞ্জাম— পাহাড়, নদী, খনি, বৃক্ষ, সৃষ্টজীবের পানাহারের বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার সাত আকাশ সৃষ্টি করা হয়েছে। মুসলিম ও খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে জগৎ সৃষ্টির জন্য ছয় দিনের কথাই বলা হয়েছে৷ তাফসীরগুলোতেও দেখি দিন বলতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কালকেই বুঝানো হয় অর্থাৎ কমবেশি ১২ ঘণ্টা৷ মানুষ ও যাবতীয় প্রাণি সৃষ্টির পার্থক্য ধরে নিতে পারি কমবেশি ২৪ ঘণ্টা৷ অর্থাৎ জলে-স্থলে-আকাশের সকল প্রাণি ও উদ্ভিদের জন্ম একদিন আগে-পরে বা একই দিনে৷ বাইবেল বিশ্লেষণ করলে সময়টা ৬ হাজার বছর আগে ঘটেছিল৷
আমরা ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে বিবর্তন মিথ্যা প্রমাণ করতে পারি— যদি বাস্তবিক সব প্রাণের উৎপত্তি এক বা দুইদিনে হয়৷ আবার বিজ্ঞান বলছে পৃথিবী সৃষ্টি ৪৫০ কোটি বছর আগে৷ প্রাণের সূচনা এর ১০০ কোটি বছর পর৷ এরপর বিভিন্ন যুগ রয়েছে৷ যেমন— প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে থাকার কথা কতকগুলো আদিম সরল প্রাণ – যেমন নীলাভ সবুজ শৈবাল, সায়নোব্যকটেরিয়া ইত্যাদি৷ এগুলোর সাথেই ধর্মমতে আজকের মানুষ বা খরগোশেরও জন্ম হয়েছে৷ তাদের আবির্ভাবের বয়সও সমান৷ এটা প্রমাণ করতে পারলেই বিবর্তন বাতিল! আমাদের কেবল আদি স্তরে শৈবালের সাথে খরগোশ খুঁজে পেতে হবে৷
বিবর্তনের পক্ষে অন্যতম জোরালো প্রমাণ হল – কোন ফসিলই ‘ভুল স্তরে’ পাওয়া যায়নি। একবার বিজ্ঞানী জেবি এস হালডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কিভাবে বিবর্তনকে ভুল প্রমাণ করা যায়? তিনি উত্তরে হালডেন বলেছিলেন, “কেউ যদি প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল খুঁজে পায়”। খরগোশ যেহেতু একটি পুরোপুরি স্তন্যপায়ী প্রাণী, সেহেতু সেটি বিবর্তিত হয়েছে অনেক পরে এবং বিভিন্ন ধাপে (মাছ থেকে উভচর, উভচর থেকে সরিসৃপ এবং সরিসৃপ থেকে শেষ পর্যন্ত খরগোশ), তাই এতে সময় লেগেছে বিস্তর। প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল পাওয়ার কথা নয়, কারণ বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী এ সময় (প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে) থাকার কথা কতকগুলো আদিম সরল প্রাণ – যেমন নীলাভ সবুজ শৈবাল, সায়নোব্যকটেরিয়া ইত্যাদি (ফসিল রেকর্ডও তাই বলছে)। আর স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে ট্রায়োসিক যুগে (প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগ শেষ হওয়ার ৩০ কোটি বছর পরে)। কাজেই কেউ সেই প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল খুঁজে পেলে তা সাথে সাথেই বিবর্তনতত্ত্বকে নস্যাৎ করার জন্য যথেষ্ট হত। খরগোশ বা শশক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের “ল্যাগোমর্ফা” বর্গের “লেপরিডি” গোত্রের সদস্য প্রাণীদের সাধারণ নাম। এই গোত্রটিতে প্রায় ৫২টি প্রজাতির খরগোশ অন্তর্ভুক্ত। এর একটিও যদি পাওয়া যায় নীলাভ সবুজ শৈবালদের আগমনের যুগে! যদি দেখা যায় শিলার ওই স্তরে মিলেমিশে আছে শৈবাল, খরগোশ ও মানুষ!— তাহলেই বাতিল বিবর্তনবাদ৷ ফর্মুলাতো পাওয়া গেল৷ এখন চেষ্টা করতে পারেন৷ শর্টকার্ট বা অলৌকিক কোন পথ নেই৷ প্রমাণ করতে হবে৷ বিবর্তনকে অস্বীকার করার আগে প্রমাণ করুন৷