এতে তাহেরের বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের ভাই ও ছাত্রশিবিরের কর্মী আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন ও সালামের আত্মীয় নাজমুলকে অভিযুক্ত করা হয়। ড. তাহেরকে বাসায় হত্যা করে নর্দমায় লাশ ঢুকিয়ে রাখা হয় বলে পরবর্তী সময়ে মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে উঠে আসে।এ মামলায় ৩৯ জনের সাক্ষ্য-জেরার পর ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মিয়া মো. মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুস সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেওয়া হয়।
চার আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার যাবতীয় নথি পাঠানো হয় হাইকোর্টে, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। অন্যদিকে খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ে ড. তাহেরের সহকর্মী ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আর সাজা কমিয়ে আব্দুস সালাম ও নাজমুলকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল ও জেল আপিল করেন আসামিরা। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিদের সাজা বাড়াতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে গত বছর ৫ এপ্রিল রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।রায়ে বলা হয়, বিভাগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রফেসর তাহেরকে বাধা মনে করতেন মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। পদোন্নতি অর্থাৎ অধ্যাপক হওয়ার পথ পরিষ্কার করতেই অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করা হয়। আর এর জন্য মিয়া মহিউদ্দিনসহ আসামিদের চাকরি ও বস্তুগত প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। হত্যার ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন।
সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের সুযোগ পায় দণ্ডিতরা। সে অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে আবেদন করেন মিয়া মো. মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম। সে রিভিউ আবেদনের সঙ্গে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতেও আবেদন করা হয়। শুনানির পর গত বছর ৪ অক্টোবর চেম্বার আদালত মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত করে আবেদন দুটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আবেদন দুটির শুনানি হয়। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি হয়। পরে আজ আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।