হাই ব্লাড প্রেশার বা হাইপারটেনশন কদাচিৎ মানুষের মধ্যে অসুস্থতাবোধ সৃষ্টি করে। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই হাই ব্লাড প্রেশার আছে কিনা জানার একমাত্র উপায় রক্তচাপ মাপা।
খুব অল্প সংখ্যক লোকের হাইব্লাড প্রেশারের কারনে মাথা ব্যাথা হতে পারে, যদি প্রেশার অত্যন্ত থাকে। দৃষ্টি শক্তির সমস্যা, শ্বাস কষ্ট, নাক দিয়ে রক্ত পড়া কখনো কখনো হাইব্লাড প্রেসারের উপসর্গ হতে পারে।
দক্ষিন এশীয় প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতি চারজনে এক জনের হাই ব্লাড প্রেশার হয়ে থাকে। এটা অল্প বয়স্ক লোকদের বেশী হয়ে থাকে।
★হাই ব্লাড প্রেশার কেন ক্ষতিকর ?
সোজা কথায় বলতে গেলে ব্লাড প্রেশার যত বেশি হবে, সম্ভাব্য জীবনকাল ও তত সংক্ষিপ্ত হবে। যাদের হাই ব্লাড প্রেশার থাকে তাদের হার্ট এ্যাটাক অথবা ষ্ট্রোক হওয়ার আশংকা থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে বিনা চিকিৎসায় রেখে দিলে হাই ব্লাড প্রেশার কিডনির কর্মকক্ষমতা এমনকি দৃষ্টি শক্তি নষ্ট করে দিতে পারে। এটা হার্ট ফেইলিওর ও ঘটাতে পারে যা হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে গেলে হয়। অনিয়ন্ত্রিত হাই ব্লাড প্রেশারের কারনে হার্ট বড় হয়ে গেলে হার্টের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধমনী, যা হার্ট থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত সঞ্চালিত করে, তার মধ্যকার রক্তের চাপ কে বলা হয় ব্লাড প্রেশার।
রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমান চাপ থাকা প্রয়োজন। যদি বড় ধমনী গুলোর প্রাচীর স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে অনমনীয় হয়ে যায় এবং যদি ছোট রক্তনালী গুলো সরু হয়ে যায় তবে হাই ব্লাড প্রেশারের সুত্রপাত ঘটে।
আপনার হার্ট হলো একটি পাম্প যা সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। হৃদস্পন্দনের এই চক্রের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রক্ত প্রবাহের চাপের তারতম্য ঘটে।
*সর্বোচ্চ রক্তচাপ (যাকে সিস্টোলিক প্রেশার ও বলা হয়) তখন ঘটে যখন হার্টের স্পন্দন বা সংকোচন রক্তকে শরীরের মধ্যে সঞ্চালিত করে।
*সর্ব নিম্ন চাপ যাকে ডায়াস্টোলিক প্রেশার বলে, তা হচ্ছে হার্টের বিশ্রামরত অবস্থায় হৃদস্পন্দন গুলোর মধ্যবর্তী সময়ের চাপ।
ব্লাড প্রেশার মার্কারির মিলিমিটার, সংক্ষেপে mmHg দ্বারা মাপা হয়।
★আপনার কাঙ্খিত ব্লাড প্রেশারের মাত্রা
আপনার ব্লাড প্রেশার 140/85mmHg এর নিচে থাকা উচিত। অথবা আপনার যদি ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ, হার্ট কিংবা রক্ত সঞ্চালনের অসুখ থাকে, আপনার কাঙ্খিত মাত্রা হওয়া উচিত 130/80mmHg এর নিচে।
★হাই ব্লাড প্রেশার কি কারনে হয়?
হাই ব্লাড প্রেশারের নির্দিষ্ট একটি কারন থাকে না। নিচের বিষয় গুলো ব্লাড প্রেশারের ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারে।
*যথেষ্ট শারীরিক শ্রম না করা।
*মাত্রাতিরিক্ত ওজন থাকা।
*অতিরিক্ত লবন খাওয়া।
*অতিরিক্ত মদ্যপান করা।
*যথেষ্ট ফল ও সবজী না খাওয়া।
বংশক্রম অন্য একটি কারন। যদি আপনার পিতা মাতার একজনের বা দূজনেরই হাইব্লাড প্রেশার থাকে বা ছিল এমন হয়, তবে আপনার ও এটা হওয়ার আশংকা প্রবল হবে।
খুব কম সংখ্যক লোকের মধ্যে একটি মাত্র কারন পাওয়া যায়।তা হলো কিডনী সংলগ্ন ধমনী সরু হয়ে যাওয়া অথবা এ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডে অস্বাভাবিক হরমোন তৈরী হওয়া। কখনো কখনো আলসার, আর্থারাইটিস বা ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ ও ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে দিতে পারে।
★আপনার ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কি করবেন?
*অধিক শারীরিক শ্রম করুন।
*ওজন মাত্রাতিরিক্ত হলে ওজন কমান।
*লবন খাওয়া কমান।
*অধিক ফল ও সবজী খান।
*যদি মদ্য পানের অভ্যাস থাকে তবে তা পরিহার করুন।
★মানসিক চাপের ব্যাপারে কি করনীয়?
মানসিক চাপযুক্ত পরিস্হিতিতে আপনার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যেতে পারে কিন্তু চাপ মুক্ত হলেই ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক অবস্হায় ফিরে আসে। আয়েশ বা ধ্যান আপনাকে এই স্বল্প স্হায়ী হাই ব্লাড প্রেসার থেকে মুক্ত থাকতে সহায়তা করে। আবার যেসব জিনিস দীর্ঘ স্হায়ী মানসিক চাপের সৃষ্টি করে যেমনঃআর্থিক দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ, এগুলো থেকে ও হাই ব্লাড প্রেসার হতে পারে। তবে এ নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।
ধূমপান করোনারী হার্টের অসুখের একটি প্রধান ঝুঁকি। আপনি যখন ধূমপান করেন তখন আপনার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়।আপনি যদি ধূমপান করেন এবং আপনার যদি হাই ব্লাড প্রেসার থাকে তবে আপনার ধমনী অতি সত্বর সরু হয়ে যাবে। ধূমপান ত্যাগ করা মানে জীবন যাত্রা প্রনালীতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনা।
আপনার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্রেসারের ঔষধ খাবেন না।
যদি ঔষধ সেবন করতে ভুলে যান তবে তার জন্য বাড়তি কোন ডোজ খাবেন না। পরবর্তী সময়ে শুধু মাত্র স্বাভাবিক ডোজের ঔষধ গ্রহন করবেন।
হাই ব্লাড প্রেসারের জন্য এসিই ইনহিবিটরস, এ্যানজিওটেনসিন, এ্যান্টাগোনিস্টস, বিটা ব্লকারস, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস, ক্যালসিয়াম এ্যান্টাগোনিস্টস, ডাই-ইউরেটিকস্, আলফা ব্লকারস এবং কেন্দ্রীয় ভাবে ক্রিয়াশীল ঔষধ সহ কিছু ঔষধ আছে।
.
ডা.মোজাহিদুল হক
মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।