প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজকের শিশুদের এটুকুই বলব যে খেলাধুলা, শরীরচর্চা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, শিক্ষকদের কথা মান্য করা, অভিভাবকদের কথা মান্য করা এবং প্রতিটি শিশুকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। সবাইকেই উন্নত মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হতে হবে। যারা প্রতিবন্ধী বা অক্ষম, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।’
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি হয়। জাতীয় শিশু দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’।
শিশু প্রতিনিধি স্নেহা ইসলামের সভাপতিত্বে দুই শিশু রুবাবা তোহা জামান ও এ এল শরফুদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে কোনো শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না, কোনো মানুষই ভূমিহীন-গ্রহহীন থাকবে না। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হবে না, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলব।’
তাঁর সরকার শিশুদের সুরক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। ২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়তে চাই এবং আজকের শিশুরাই হবে সেই আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। যারা এই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে আজকের শিশুদের উন্নত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করলে শরীর ভালো থাকবে, মনমানসিকতা ভালো থাকবে এবং সবাই একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠবে। সেটাই আমি চাই।’
“‘অন্ধকে অন্ধ বলিও না, আর পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না—এটা তো ছোটবেলার শিক্ষা’, কাজেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমরা তাদের ভাতা দিই এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বৃত্তিও দিয়ে থাকি। কাজেই সবাই একই সমাজের, সবাই একই সংসারের।”
তিনি বলেন, “জাতির পিতা শিশুদের ভালোবাসতেন এবং শিশুদের জন্য তাঁর অত্যন্ত দরদ ছিল এবং শিশুদের সঙ্গে খেলা করতেও তিনি ভালোবাসতেন। এ জন্য তাঁর জন্মদিনকে আমরা ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। কারণ শিশুরা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং তারা যেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্মস্থান। এই মাটিতে তিনি জন্ম নিয়েছেন, বড় হয়েছেন এবং এই মাটিতেই তিনি শায়িত। নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য। তাঁর ভেতর যে মানবিকতা রয়েছে, মানুষের প্রতি দরদ, শিশুকাল থেকেই সেটা দেখা গেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা শুধু স্বাধীনতাই এনে দেননি। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানেই শিশু অধিকারের কথা বলা আছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান, অসচ্ছল মেধাবী শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক অনুদান বিতরণ করেন। পরে তিনি শিশু শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং শিশু শিল্পীদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বইমেলার উদ্বোধন ও স্টল পরিদর্শন করেন।
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে, বেজে ওঠে বিগউলের সুর। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী এমপি, আমির হোসেন আমু এমপি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান এমপি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি, বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম এমপি, এস এম কামাল হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে রাষ্ট্রপতি পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। এরপর রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী ও পরিবারের সদস্যরা ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সব কর্মসূচি শেষ করে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান