এবারের ঈদে যারা রেলে ভ্রমণ করতে চায় তারা অনলাইনে চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে টিকিট পেয়ে যাবে। আর রেলের প্রতিদিনের সব টিকিট বিক্রি হতে ১০ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, ঈদের সময় ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন মোট ২৫ হাজার ৭৭৮টি আসনের বিপরীতে টিকিট বিক্রি করা হবে। এই টিকিটের পুরোটাই বিক্রি করা হবে অনলাইনে।
আর আন্ত নগর ট্রেনের শোভন শ্রেণির (নন-এসি) মোট আসনের বিপরীতে ২৫ শতাংশ দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট বিক্রি করা হবে। সেই টিকিট দেওয়া হবে কমলাপুরসহ রেলের বিভিন্ন কাউন্টার থেকে।
চুক্তি অনুযায়ী, রেলের এই অগ্রিম টিকিটসংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে সহজ ডটকম। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবার তাঁরা অনলাইনে কিউ সিস্টেম রেখেছেন। তাতে প্রতি মিনিটে পাঁচ লাখ মানুষ সাইটে অবস্থান করতে পারবে। অন্য আগ্রহীরা অপেক্ষায় থাকবে। যাদের টিকিট কাটা হয়ে যাবে তারা যতজন সাইট থেকে বের হবে, অপেক্ষায় থাকা ঠিক ততজন নতুন করে সাইটে ঢুকতে পারবে।
রেলওয়েসহ আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া চললে প্রতিদিন প্রথম ১০ মিনিটেই নির্ধারিত সব টিকিট শেষ হয়ে যাবে। কারণ যে পাঁচ লাখ লোক শুরুতে ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবে, তাদের মধ্য থেকেই ২৫ হাজার ৭৭৮ জন টিকিট পাবে। এতে এর বেশি সময় লাগার কথা নয়।
গত বছরের ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল। ওই সময়ের হিসাব বলছে, ৩ জুলাই সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কোটি হিট হয়েছিল রেলের টিকিট কেনার সাইটে।
তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির কালের কণ্ঠকে বলেন, চাহিদার তুলনায় টিকিট খুবই কম। সাইট সচল থাকলে ২৫ হাজার টিকিট পাঁচ মিনিটেই সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায়, যারা টিকিট নিতে সাইটে আসবে তারা সবাই আগে থেকে নিবন্ধন করে রেখেছে।
সুমন আহমেদ বলেন, কিউতে যে পাঁচ লাখ লোক থাকবে তারাও তো সবাই টিকিট পাবে না। যারা দ্রুত সাইটে ঢুকতে পেরেছে তারা যেন নির্বিঘ্নে টিকিট নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে পারা গুরুত্বপূর্ণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সহজ ডটকমের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, যদি টিকিটপ্রত্যাশীর ইন্টারনেট সংযোগ ভালো থাকে তাহলে একটি নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট থেকে দুই মিনিটের কম সময়ে টিকিট কেনা সম্ভব। টিকিট কেনার জন্য সাইটে প্রবেশ করে যাত্রার তারিখ, সময়, ট্রেন ও আসন বুক করতে হয়। যে টিকিট কিনবে, সে আগে থেকেই এসব তথ্য জানে। ৩০ সেকেন্ডেই এসব তথ্য পূরণ করা যায়। এরপর শুধু টাকা পরিশোধ করতে হবে। এটাও এক মিনিটে সম্ভব। গ্রাহক যেখান থেকে টাকা দেবে, সেখানে ওই মুহূর্তে টাকা না থাকলে বা ইন্টারনেট খুব খারাপ অবস্থায় না থাকলে চার মিনিটের বেশি কোনোভাবেই লাগবে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, এক গ্রাহকের সঙ্গে অন্য গ্রাহকের কোনো সম্পর্ক নেই। একসঙ্গে সবাই একই প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে। যার আগে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে সে-ই আগে টিকিট পাবে। সাইট সচল থাকলে পাঁচ মিনিটেই সব টিকিট শেষ হয়ে যেতে পারে। অভিজ্ঞতা বলছে, টিকিট শেষ হতে ২০ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না।
যাত্রীদের বাড়তি ব্যয় ৫০ লাখ টাকা : অনলাইনে একটি টিকিট কেনার জন্য ২০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এমনকি কমলাপুর থেকে বিমানবন্দরের ৪০ টাকার টিকিট কিনতে হলেও অনলাইনে ২০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। স্টেশন থেকে কিনতে এই টাকা লাগত না।
ডিজিটাল সেবায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে অনলাইনে নানা ছাড়ের ব্যবস্থা আছে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে। কিন্তু রেলের বেলায় উল্টো হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বাড়তি টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, সার্ভিস চার্জ রেল নির্ধারণ করেনি। আর এখান থেকে রেল কোনো টাকা পায় না। রেল শুধু ভাড়াটুকু নেয়, সার্ভিস চার্জ নেয় না।
সরদার শাহাদাত আলী জানান, অনলাইনে টিকিট বিক্রির শুরু থেকেই সার্ভিস চার্জ যুক্ত করা হয়। বিটিআরসি এই টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই সার্ভিস চার্জের টাকা বিটিআরসি, সহজ ডটকম, ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে থাকে।
ঈদে কোন তারিখের টিকিট কবে পাওয়া যাবে : ঈদকেন্দ্রিক রেলের কর্মপরিকল্পনায় বলা হচ্ছে, ১০ দিন আগে থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে টিকিট বিক্রি করা হবে। মোট ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। ফিরতি টিকিট বিক্রি হবে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে।
আগামী ৭ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। ৮ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল মিলবে ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল দেওয়া হবে ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিল দেওয়া হবে ২১ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট।
ঈদ উপলক্ষে আন্তর্দেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন ১৮ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আন্তর্দেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ থাকবে ২০ থেকে ২৭ এপ্রিল। তবে আন্তর্দেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করবে।
ঈদুল ফিতরের দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কিছু মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে, তবে কোনো আন্ত নগর ট্রেন চলাচল করবে না।
ঈদুল ফিতরের আগে ২০ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে ঈদের দিন ২২ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া অন্য সব পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি আসনের টিকিট কিনতে পারবে। তবে অনলাইনে টিকিট কেনার সময় সহযাত্রীদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করতে হবে। এ ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণের সময় যাত্রীকে অবশ্যই নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করবেন যেভাবে : রেলওয়ে বলছে, টিকিট সংগ্রহের জন্য যাত্রীর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। তাই টিকিট কেনার আগে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করে নিতে হবে। নিবন্ধনের জন্য মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজিতে বিআর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম সাল-মাস-দিন লিখে ২৬৯৬৯ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন সফল বা ব্যর্থ হয়েছে কি না, তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
এর পরই রেলের ওয়েবসাইট (https://eticket.railway.gov.bd) অথবা রেলসেবা অ্যাপে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য দেওয়া সাপেক্ষে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের ছবি ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারবে। তবে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারবে। ট্রেনে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ (স্ট্যান্ডিং টিকিট) করার ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়।
ঈদ যাত্রার শুরুর দিন ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে না।