1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৬:০১ অপরাহ্ন

কথাসাহিত্যিক হাবিবা লাবনীর গল্প ‘অপেক্ষা’

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩
-হাবিবা লাবনী
কান্তি কখনো ভাবতেই পারেনি দীপ নামটা তাকে এমন মজবুত গাথুনিতে আবদ্ধ করবে বারবার।
হিউম্যান সাইকোলজি সবসময় চোখের সামনে ভেসে উঠা বিষয়গুলো নিয়ে হরমোনাল সিক্রেশন ঘটায়। কান্তির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
প্রায় বছর খানেক হলো দীপের সাথে কথা নাই। চোখের দেখা যদিও প্রায়ই হতো সেটা মাস ছয়েক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। কোথায় আছে যদিও সেটা জানে তবুও যাবার উপায় নাই। যাই হোক একটা কঠিন অস্থিরতা নিয়ে সময়গুলো পার করছে সে। দীপকে যখন সে তার অনুভূতিতে আনে শরীর মন একসাথে অসার হয়ে উঠে। এর কোন ব্যাখ্যা নাই। যদিও কান্তি জানে যে পথে সে হাটছে তা ভুল। কিন্তু এ ভুলের মাঝে কোন যুক্তিতর্ক খাটেনা। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে তবুও মনে হয় একটা শূণ্যতা তাকে প্রতিটা মুহূর্ত আঁকড়ে ধরে রেখেছে। এখান থেকে মুক্তির উপায়ও মিলছেনা। আর কোন মোহমায়া তাকে এখন আর ডাকেনা। মনে হচ্ছে এখানেই সব শেষ হয়ে গেছে তার। আর যদি দীপের সাথে দেখা না হয় কথা না হয় তবে সে হয়তো আর কোনদিনও আনন্দের মুখ দেখবেনা। এখানেই তবে কি তার জীবন থেমে যাবে!
জীবন বলতে কান্তি বুঝাতে চেয়েছে একটা জেনুইন আবেশ যা তাকে সারাক্ষণ আনন্দে ভরিয়ে রাখে। যা তার একাকীত্বকে ভুলিয়ে পূর্ণতা এনে দেয়। জটিলতা কুটিলতা সবকিছুর উর্ধ্বে যার বিচরণ। মুহুর্ত গুলো অনেক সহজ হয়ে উড়ন্ত পাখির মতো উড়তে থাকে। সব বিপত্তি অতিক্রম করে শুধুই সামনে চলা। সেকাল কিংবা অজানার জন্য আকুল না হয়ে চলতি মুহূর্ত কে পরমানন্দে উপভোগ্য করে তোলা। অনেকটা বোনাসের আনন্দ।
যাই হোক যেভাবেই হোক দীপ যে তার জীবনে এতটা গুরুত্ব বহন করবে তা সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এখন। অনেকবার ভেবেছে সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। পরক্ষণেই সামলে নিয়েছে। বারবার কান্তি শুধু একটা কথাই ভেবেছে, এই যে একটা অমীমাংসিত আবেগ তার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সেটার যদি নেগেটিভ সমাপ্তি হয় তবে তার থেকে খারাপ কিছু তার জীবনে আর কিছু ঘটবেনা। তার থেকে যেমন আছে তেমনই থাক। সবকিছু থাকার পরও একটা অপ্রাপ্তিযোগ প্রতিনিয়ত ভেতরটাকে নাড়া দিতে থাকে।
নিজেকে বড় বেশি ব্যস্ত করে তোলে কান্তি। বেশকিছু কাজে মনোযোগী হয়ে পড়ে। কাজের প্রেশার ;তার উপর আবার সংসারের দায়ভার। নিজেকে এত বেশি আইসোলেটেড করে ফেলেছে যে দীপ শব্দটাই আর শোনেনা সে। একেতো চোখের দেখা নাই আবার তার সম্মন্ধে কোন শব্দও নাই। সব মিলিয়ে দীপের ভাবনা সময়ের সাথে মিলিয়ে যেতে থাকে।
স্বাভাবিক একটা সময় পার করছে এখন কান্তি। ব্যস্ততাই একমাত্র সুস্থতা এই লাইনটা তাকে আরো বেশি উদ্যমি করে তুলে তার পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে। ঘুরাঘুরির সখটাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আজ এখানে তো কাল সেখান। যমুনা নদীর তীরে ঘুরতে গিয়ে কেমন একটা ফিল হতে থাকে। দীপের সাথে বলা শেষ কথাগুলো বারবার কানে বাজতে থাকে।
কান্তি দীপের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল
–আমি তোমার সাথে অন্য কোথাও দেখা করতে চাই।
দীপের সহজ উত্তর,–আমি বলবো।
কান্তি অনেকটা অস্থির হয়ে বলে,– সেটা কবে?
একই উত্তর,–আমি বলবো।
যাওয়ার আগে কিছু বলে যায়নি। দেখাও হয়নি। এ কেমন চলে যাওয়া। যার কোন বিদায় বেলা নাই। কী নিয়ে থাকবে সে। এ কেমন স্মৃতি যার কোন শেষবেলা নাই। সাগরের মাঝখানে ফেলে যাওয়ার মতো। কোন তল খুজে পাওয়া যায়না। এ বড় বেশি অসহ্যকর অবস্থা!
তো শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টে গিয়ে কান্তি দেখতে পায় দীপের নামটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। নামটা দেখার পর মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠে। বুকের মধ্যেও কেমন একটা চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হয়। এতক্ষণে সে বুঝতে পারলো কেন দীপকে এতটা মনে পড়ছে। কেন এত কষ্ট হচ্ছে। তার মানে এ জায়গাটায় দীপের পদচারনা আছে। এই হার্ড পয়েন্টের শুভ উদ্বোধন দীপের হাতেই। যমুনা নদী এখন আর শুধু নদী মনে হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে এ যেন তার দীপ। নদীর ঢেউ তাকে আরো উতলা করে তুলে। যমুনা তীর ধরে যতক্ষণ হাটছিল মনে হচ্ছে দীপ তার পাশেই আছে। অদ্ভুত একটা অনুভূতি গ্রাস করছিল তাকে। মিইয়ে যাওয়া আবেগ আবার যেন জেগে উঠলো।
স্মৃতিগুলো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। প্রতিদিনের দেখা হওয়া, কথা বলা, চোখে চোখ রাখা, নীরব চাহনীতে কত না বলা কথা বলা। সব মনে পড়ছে কান্তির। আবার অপেক্ষার পালা শুরু হলো যেন। নীরব অপেক্ষা!অনিশ্চিত অপেক্ষা! যদিও কষ্টকর তবুও প্রেমময়!
কিছুদিন পর একটা অফিসিয়াল সফর পড়ে কান্তির। সেই ভ্রমনে যেখানেই যাচ্ছে প্রায় সবখানেই দীপের নাম। ওর থেকে পালিয়ে বেড়ানো বেশ মুশকিল হয়ে গেল কান্তির। একটা সাইকোলজিক্যাল জড়তায় পড়ে গেছে সে। কিছুতেই সেখান থেকে বের হতে পাচ্ছেনা। আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। খুব বেশি কষ্ট হয় যখন সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। একটা এক্সক্লুসিভ ছবি আছে দুজনের। কান্তি দীপকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে এমন একটা ছবি। ছবিটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে টেরই পায়না সে। এছাড়া আর কীইবা করার আছে তার। সম্মানের পাহাড় ভেদ করার সাধ্য দুজনের কারোরই নাই।
দীপ আর কখনো ফিরবেনা এটা নিশ্চিত জেনেও অপেক্ষা চলতে থাকে। এমনই মিশ্র অনুভূতির সময়ে একদিন হঠাৎ দীপের ফোন
–কেমন আছো?
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন ধরে কান্তির নির্লিপ্ত উত্তর,–যেমন রেখেছো।
দুজনেই নীরব হয়ে গেলো। কে কী বলবে তার কোন আওয়াজ মিলছেনা। এতদিনের জমানো আবেগের বেড়াজালে বন্দী দুজন আর কথা খুজে না পেয়ে ফোন কেটে দিলো।
আর কোন খবর নাই। কান্তির ভেতরটা তোলপাড় করছে। হঠাৎ কথা বলা যেন বুকের ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। বারবার ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার লিখে ডায়াল করার আগেই জমে থাকা অভিমানে ফোন রেখে দিচ্ছে। কান্তির অভিমান হলো দীপ বুঝেনা তার ভেতর কী হচ্ছে!
কয়েক সপ্তাহ পর আবার দীপের ফোন
— ভালো আছো?
এইবার কান্তির ভেতরটা চিৎকার করে উঠলো
–তুমি জানোনা! বুঝোনা! কেন কষ্ট দিচ্ছো আমাকে! আমি আসতে চাই তোমার কাছে।
দীপের সহজ উত্তর
— আসো।
তারপর দিন ক্ষণ ঠিক করে দুজনের দেখা করার সময় হলো।
কান্তি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজেকে সাজালো। এতগুলো দিন পরে দীপের সাথে দেখা হবে। কী বলবে। কী করবে বুঝে উঠতে পাচ্ছিলনা সে। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়েও হয় না শেষ।
আর মাত্র কয়েক মিনিট পরই দুজন সামনা সামনি হবে। কান্তি যখন দীপের সামনে আসলো কেউ কোন কথা বলতে পাচ্ছেনা। আবেগপ্রবন হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। আশেপাশে অনেক লোকজন।
দীপের সেই একই প্রশ্ন
— এই কেমন আছো?
মাথা ঝাকিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো কান্তি।
মিনিট পাঁচেক পর দীপ বললো,
–তোমার সাথে আমার একটা কথা ছিল।
–বলো।
–পরে বলবো।
–কী কথা। কঠিন কোন কথা?
–না আছে। বলবো।
আর কথা নাই। একটু পর দীপ বলে উঠে,
–ঠিক আছে যাও।
রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে কান্তির। এমন করে কাছে ডেকে কিছু না বলেই বিদায় করে দিচ্ছে। আর জীবনেও আসবেনা। এই শেষ দেখা।
দীপ হঠাৎ বলে উঠে
— ফোন দিও।
কান্তি মনে মনে বলে,আর জীবনেও ফোন দিবনা। আর কোনদিন আসবোনা।
কান্তি চলে গেলো। দীপ পেছন থেকে শুধু কান্তির চলে যাওয়া দেখলো।
আবার অপেক্ষা। যে কথা ছিল সে কথা বলার অপেক্ষা। সে কথা শোনার অপেক্ষা। এ যেন অন্যরকম এক অনুভূতি। বিমূর্ত ভালোবাসার এক অন্যরকম অপেক্ষা।আর এই অপেক্ষাই দুজনকে এক সুতোয় গেঁথে রাখে। এর থেকে পালানোর কোন উপায় করোরই জানা নাই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews