নিত্যপণ্যের দাম, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে চলায় সাধারণ মানুষের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় ভাড়াটিয়ারা হঠাৎ বাসাভাড়া বাড়ানোর নোটিশ পেতে শুরু করেছেন। বাড়তি চাপে পড়ে অনেক ভাড়াটিয়া বাসা পাল্টে ছোট বাসায় উঠছেন। কেউ বা পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে উঠছেন মেসে। এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী জাফর আলম থাকেন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায়। এত দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুই রুমের একটি বাসায় থাকতেন। সার্ভিস চার্জসহ ভাড়া দিতেন ১২ হাজার টাকা। গত জানুয়ারি থেকে বাড়িওয়ালা এক হাজার টাকা বাসাভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিলও আলাদা দিতে হচ্ছে। বেকায়দায় পড়া জাফর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বছর বছর এভাবে ভাড়া বাড়ানো আমাদের মতো ভাড়াটিয়াদের ওপর জুলুম।’
রাজধানীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁদের আয়ের বড় একটা অংশ চলে যায় বাসাভাড়ায়। ভাড়াটিয়া পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে রাজধানীতে বাসাভাড়া বেড়েছে ১৫০ শতাংশের বেশি (অর্থাৎ১০ বছর আগে যে ভাড়া ১০ হাজার টাকা ছিল সেটি বেড়ে এখন ২৫ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে)। ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষায় বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। বাড়িওয়ালাদের কথাই যেন বাসাভাড়ার আইন। অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে বাসাভাড়ার চুক্তিও করেন না। ফলে ভিন্নমত দেখা দিলেই বিনা নোটিশে বাড়ি ছাড়তে হয় ভাড়াটিয়াদের। এ পরিস্থিতিতে লিখিত চুক্তি, বাসাভাড়ার পরিমাণ, ভাড়া আদায়ের পদ্ধতি, বাসাভাড়া বাড়ানোর আইন বাস্তবায়ন করা জরুরি।
আর কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে রাজধানীতে দুই রুমের পাকা বাসার ভাড়া ১১৮ শতাংশ, আধাপাকা (টিনশেডের) বাসার ভাড়া ৯৫ শতাংশ, মেস বাড়ির ভাড়া ১০২ শতাংশ এবং বস্তিতে ভাড়া ১৭৪ শতাংশ বেড়েছে।
ভাড়াটিয়ারা বলছেন, যেভাবে প্রতিবছর বাসাভাড়া বাড়ানো হচ্ছে, সে অনুপাতে বাড়ছে না তাঁদের আয়। এ পরিস্থিতিতে বাসাভাড়া, পরিবারের সদস্যদের খাবার খরচ, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিবারের কর্তা।
তবে একাধিক বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর তাঁরা বাসাভাড়া বাড়াননি। সম্প্রতি তাঁরা বাসাভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিচ্ছেন। পুরনো ভাড়াটিয়া বদল হলে নতুন ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে সহজে বাড়তি ভাড়া পান বলেও স্বীকার করেন তাঁরা।
রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাড়ির মালিক সাঈদ হোসেন বলেন, ‘করোনার সময় কয়েক মাস আমার বাড়ির একাধিক ফ্ল্যাট ফাঁকা ছিল। ফলে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আলোচনা করে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বাসাভাড়া বাড়িয়েছি আমি। আমরা তো এই বাসাভাড়ার ওপরই নির্ভরশীল।’
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, ‘রাজধানীর ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। কিন্তু এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিকারের কথা কেউ ভাবে না।’