জর্জ অরওয়েলের এনিমেল ফার্ম নাটক/উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যে মানুষকে অনায়াসেই পাওয়া যায়৷ বৃদ্ধ শূকর ওল্ড মেজর প্রতিনিধিত্ব করে কার্ল মার্ক্সের৷ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যারা বিপ্লব সম্পন্ন করে তাদের মধ্যেও খুঁজে পাবেন স্ট্যালিন, ট্রটস্কিসহ অন্যদের৷ চরিত্রগুলো কখনো দেশ, মিডিয়ারও প্রতিনিধিত্ব করেছে৷ এছাড়া জঙ্গল বুক, হোয়াইট ফ্যাঙ, ব্লাক বিউটি, মবিডিকসহ আরো কিছু উপন্যাস পড়েছি যেখানে প্রাণি ও মানুষের চরিত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে৷ তবে এসব গ্রন্থে পশুর সাথে মানুষের বিবর্তনীয় সম্পর্ক উঠে আসেনি৷ অন্য অনেক শিক্ষামূলক গল্পে বা বিষয়ে বিবর্তনীয় সম্পর্ক তুলনা করা যায়৷
পশুদের দিয়ে অনবরত কাজ করানোর জন্য মানুষ কিছু কৌশল অবলম্বন করে৷ যেমন ধান মলাই করার সময় গোরুর চোখে ঠুলি পরিয়ে দেয়া হয়৷ ঘানি ভাঙ্গানোর সময় ঘোড়ার চোখে ঠুলি দেয়া হয়৷ ঠুলি হল এক ধরনের টুপি যা গোরু বা ঘোড়াকে দেখতে দেয় না৷ ফলে গোরু বা ঘোড়া বিরামহীনভাবে কাজ চালিয়ে যায়৷ এই ঠুলি থেকেই পুলিশকে ঠোলা বলে৷ এটা একটা ঠার অর্থাৎ সাংকেতিক শব্দ যা পুলিশের মাথায় টুপি অর্থাৎ ঠুলি থাকে বলে বলা হয়৷ টুপি মাথায় থাকা পুলিশ কিন্তু একই রকম কাজ অনবরত করে৷ তবে মানুষের তুলনাটা অন্য কারণে৷ যদি মানুষকেও ঠুলি পরিয়ে অন্ধ করে রাখা যায় তবে তারাও সত্যটা বুঝতে পারে না৷ তারা যে অনবরত বাঁকা পথে বা ভুল পথে হেঁটে যাচ্ছে সে উপলব্ধিটা আসে না৷ তারা দিনের পর দিন অজ্ঞতাকেই সত্য ধরে এগুতে থাকে৷ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা জনগণের চোখে মিথ্যা প্রলোভনের আবরণ দিয়ে ঠুলি পরিয়ে রাখে৷
গাধার সামনে মুলা ঝুলিয়ে রাখলে গাধা দ্রুত মুলা খাওয়ার জন্য দৌড়াতে থাকে৷ কিন্তু গাধা ওই খাবারের নাগাল পায় না৷ গাধার ওই প্রবৃত্তি ঢুকেছে মানুষের মধ্যেও৷ মানুষও সামান্য লোভের বসবতি হয়ে দৌড়াতে থাকে৷ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের দেখানো মুলার পেছনে অনবরত ছুটতে থাকে৷ শেষে সব দোষ দেয় কপালের৷
শূকর ও ভেড়া দলে চলে৷ শূকরকে নৌকায় তোলা কঠিন৷ কিন্তু নেতাটিকে যদি কোনভাবে নৌকায় তুলতে পারা যায় অন্যগুলো সুরসুর করে নৌকায় ওঠে যায়৷ শতশত ভেড়া চড়াতে রাখালও এমন কাজটিই করে৷ শুধু নেতা ভেড়াটির পথ ঠিক করে দেয় বাকিরা পেছনে চলতে থাকে৷ শূকর বা ভেড়ার এমন বৈশিষ্ট মানুষের মধ্যেও দেখি৷ জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করা গেলে খরচ ছাড়াই বহু মানুষকে শূকর বা ভেড়ার মতো ব্যবহার করা যায়৷ দেশ, রাষ্ট্র বা সমাজের যত ক্ষতিই হোক এমনকি নিজের ক্ষতি মেনে নিয়েও সাধারণ মানুষ নেতাকে অনুসরণ করে অন্ধভাবে৷
কাঁকড়া শিকারের কৌশলটা আমরা জানি৷ কাঁকড়া ধরার ফাঁদের ছাদ খোলা থাকে৷ মানুষ জানে কাঁকড়া খোলা ছাদ দিয়ে পালাতে পারে না৷ যখনি একটি কাঁকড়া ওই ছাদের দিকে উঠতে চায় অন্যগুলো তাদের টেনে নামায়৷ তাদের ব্যক্তিগত ভাবনা সামগ্রিক মুক্তি দিতে পারে না৷ বানর ধরার জন্য সরু একটা বাক্সে বাদাম রাখা হয়৷ বানর বাদাম মুঠুবন্ধি করে ফেলে আর হাত বের করতে পারে না৷ শূকর, ভেড়া, কাঁকড়া, বানর.. প্রাণিগুলোর মেধা অতটুকু বিকশিত হয়নি বলেই তারা মানুষের তৈরি ফাঁদগুলো বুঝতে পারে না৷ ইঁদুর ও ডাহুক ধরার ফাঁদগুলোও তুলনায় আনতে পারেন৷ সাধারণ মানুষের সামনেও কিছু চালাক মানুষ এমন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে৷ ফাঁদগুলো বুঝতে হলে মেধার বিকাশ দরকার হয়৷ পাশ্চাত্যের মানুষের মেধা অনেক বেশি বিকশিত বলেই তারা ফাঁদগুলো অধিকমাত্রায় বুঝতে পারে৷ দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ ফাঁদে আটক থেকেও বুঝতে পারে না৷ ইঁদুরের ফাঁদে একটার পর একটা পড়তে থাকে৷ অন্যরা বারণ করতে পারে না আবার নবাগতরাও বুঝতে পারে না৷ আমাদের মতো দেশে মানুষ কতোরকম ফাঁদে আটকে আছে! চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে বা দেখিয়ে দিলেও তারা দেখে না বা বুঝতে পারে না৷