(পর্ব – ০১)
দিনটি ছিল ১৫ ই অক্টোবর।সাল ২০২১ জুমার দিন।তার সাথে সেদিন ছিল দুর্গাপূজার দশমী। আমি তখন থাকতাম কেরানীগঞ্জের কদমতলী মোড়ে। মানে বাবুবাজার ব্রিজের ঐপারে। ঢাকায় জীবিকা নির্বাহের জন্য কোনরকমে একটা চাকরি যোগাড় করি। ডক্টর টিমস ফার্মাসিউটিক্যাল নামে একটি ঔষধ কোম্পানীর ঔষধ দোকানে দোকানে অর্ডার কেটে বিক্রি করতাম।
প্রতিদিন যা বিক্রি হতো তার থেকে সামান্য কমিশন পেয়ে দিন চালাতাম। ঔষধ বিক্রি হলে পকেটে দুই একশো টাকা থাকতো। আর বিক্রি না হলে পকেট খালি ই থেকে যেতো।এই দিয়ে জীবিকা নির্বাহ একটু কঠিন হয়ে যায়।ফলে আমি কারলো ল্যাবরেটরিজ নামে আরেকটা ইউনানী ঔষধ কোম্পানিতে এম পি ও হিসেবে যোগ দেই। এই কোম্পানিতে যোগ দেয়ার পর দেখা দিল আরেক সমস্যা। কেরানীগঞ্জের কোন দোকানেই এই কোম্পানীর ঔষধ কেনে না। কিছু কিছু দোকানে সাড়া পেলেও অধিকাংশ দোকানেই এই ঔষধের কোন অর্ডার হয় না।যারা মার্কেটে ঔষধ বিক্রি করতে পারে না তারা সরণাপন্ন হন বাবুবাজার মিটফোর্টএর ঔষধের মার্কেটে। সেখানে লস রেটে ঔষধ বিক্রি করে দেয়। নিরুপায় হয়ে আমাকেও সেই রাস্তা ধরতে হয়। কিন্তু এতে আমার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি থাকে বিধায় আমি চাকরিটা ছেড়ে দেবার প্রস্তুতি নেই।অফিসিয়ালি চাকরি না ছাড়লেও আনোফিসিয়াল ভাবে আমি চাকরিটা ছেড়েই দেই।মার্কেটে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমি চলে যেতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে।
সেখানে পথ চিত্রশিল্পী মর্তুজা ভাইয়ের সঙ্গে সারাদিন আড্ডা দিতাম আর রাত হলে ফিরে যেতাম কদমতলী শহীদনগরের সালাম ভাই নামের এক ভাইয়ের ম্যাসে।
১০০০টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ঐ ম্যাসে থাকতাম।যেহেতু চাকরিতে সময় দিতাম না সেহেতু পকেটে টাকাও থাকতো না।মর্তুজার কাছ থেকে আবিষ্কার করতে লাগলাম ঢাকায় বিনে পয়সায় কোথায় খাবার পাওয়া যায়? হাইকোর্ট মাজার মানে সরফুদ্দিন চিশতির মাজারে দুইবেলা শিন্নি,রমনা কালী মন্দিরের বুধবারের রাত্রিকালীন প্রসাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুদুয়ারা নানকশাহীর শুক্রবারের বিশেষ ভোজ।এই ছিল পেট বাঁচানোর সাময়িক পদ্ধতি। (চলবে)