বগুড়ার শেরপুরে আওয়ামী লীগের উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতাদের অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) রাত দশটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শহরের বাসস্ট্যান্ডস্থ মুন ইরাফী গার্ডেন সিটি নামে মার্কেটে অবস্থিত একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ সময় একে অপরকে লক্ষ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালও করেন। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় চরম উত্তেজনা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। একপর্যায়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর পুলিশ অবরুদ্ধ নেতা-কর্মীদের উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর শেরপুর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ত্যাগী ও পরিশ্রমী কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ করেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি ওইসব কর্মীদের মূল্যায়ন করে দলে স্থান দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু তাদের এই দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে সম্প্রতি উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে স্থান না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এমনকি তারা বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। সেইসঙ্গে অবিলম্বে কমিটি ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বেশকয়েকজন নেতা-কর্মীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।
এ সময় পদবঞ্চিত গ্রুপের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববির নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন। তার সঙ্গে স্থানীয় সরকার দলীয় এমপি পুত্র আসিফ ইকবাল সনি, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ভুট্টোসহ ছাত্রলীগের সাবেক দুই শতাধিক নেতা-কর্মী ছিলেন। এদিকে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সংঘর্ষের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। এভাবে রাত দেড়টা পর্যন্ত চলে উভয় গ্রুপের মধ্যে টানটান উত্তেজনা।
পরে খবর পেয়েই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) সজীব শাহরীন ও শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকারের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। সেই সঙ্গে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। এরপরও মারমুখি অবস্থান থাকেন দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে পুলিশের কঠোর তৎপরতা ও অবরুদ্ধ নেতা-কর্মীদের উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সারোয়ার রহমান মিন্টু বলেন, সম্মেলনে যথাযথ নিয়ম মেনে এবং কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম বা স্বজনীতি করা হয়নি। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা যাকে ভোট দিয়েছেন সেই নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। তাই দলীয় কাউন্সিলে হেরে পদবঞ্চিতরা দিশেহারা হয়ে পাগলের প্রলাপ বকছেন।
উপজেলা আওয়ামী-লীগের সভাপতি অ্যাড. গোলাম ফারুক বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। এ ঘটনার সঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি এই ঘটনার দায়িদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবিও জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, খবর পেয়েই সর্ঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
















