পরিবেশবান্ধব তৈজস বানাতে উদ্যোগ নিয়েছেন চরফ্যাশনের তিন যুবক। সুপারি পাতার ঝরে পড়া খোল দিয়ে তৈরি করছেন নতুন ওয়ান টাইম প্লেটসহ ১৪ ধরনের তৈজস। প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প হিসেবে এসব তৈজস বাজারজাত করছেন তাঁরা। সম্প্রতি উপজেলার জনতা বাজার এলাকায় ভিন্নধর্মী এই কারখানার উদ্বোধন করেন চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান।
কারখানা উদ্বোধনের পর ইউএনও বলেন, ‘ঝরে যাওয়া খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব প্লেট, বাসন, ট্রে ও বাটিসহ নানা রকম নান্দনিক তৈজস তৈরি ও বাজারজাত করছেন চরফ্যাশন উপজেলার মো. সোহেব মিয়া, নূরে আরাফাত ও রিফাত ভূঁইয়া। প্রথম দিকে কারখানাটিতে ৮-১০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা এটাকে বাণিজ্যিকভাবে নিতে কাজ শুরু করেছেন। স্বল্প সময়ে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করলেও এখনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে পারছেন না তাঁরা। তবে আশা করি, এখানে তৈরি প্লেট একসময় সারা দেশে যাবে।’
উদ্যোক্তারা জানান, ইউটিউব ভিডিও দেখে তাঁরা ভিন্নধর্মী এই উদ্ভাবনের কথা মাথায় নেন। পরিবেশ সুরক্ষায় জীবন বাঁচবে, পরিবেশ সাজবে, বাস্তবায়নে সুপারির খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব তৈজস উৎপাদন করা সম্ভব মনে করে প্রাথমিকভাবে মেশিন কিনে কাজ শুরু করেন তাঁরা। শুরুর পর থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়ে তাঁদের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। এরপর তাঁরা বাণিজ্যিকভাবে এসব তৈজস তৈরি করতে বড় পরিসরে উদ্যোগ নেন। তাঁরা জানান, ভোলা জেলায় প্রচুর পরিমাণে সুপারির চাষ হওয়ায় অনেক ঝরা পাতা বের হয় বাগানগুলো থেকে; যা বাগানিরা নষ্ট করে ফেলেন। তবে তাঁদের এই উদ্ভাবনের কারণে এখন এসব খোল আর বিনা কারণে নষ্ট না হয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি হবে, যা প্লাস্টিকের চেয়ে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। এই কারখানা শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, এই কারখানাটির মাধ্যমে এ দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া যেসব পাতা আগে নষ্ট করত বাগানিরা এখন সেসব পাতা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।
উদ্যোক্তারা আরো জানান, আপাতত ১৪টি আইটেমের নান্দনিক তৈজস উৎপাদন করতে সক্ষম তাঁরা। ভোলায় এই সর্বপ্রথম পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্রের কারখানার খবর শুনে একনজর দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। স্থানীয়রা জানান, ‘আমরা জানি প্লাস্টিকের কারখানা ছাড়া কোনো কারখানা হয় না। এখন আমাদের এলাকায় সুপারি পাতার খোল দিয়ে প্লেটসহ ১৪ ধরনের তৈজস তৈরি হচ্ছে। যে পাতাগুলো আবর্জনা হিসেব পড়ে থাকত আমরা এখন সেগুলো বিক্রি করে আয় করতে পারছি। এই কারখানা টিকে থাকতে আমরা এলাকাবাসী সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’