1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

হাছন রাজা ও লালন ফকিরের ধর্ম খোয়ানো!

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩
হাছন রাজা ও লালন ফকির
হাছন রাজার প্রথম নাম ছিল দেওয়ান অহিদুর রাজা চৌধুরী কিন্তু মায়ের পছন্দে রাখা হয় হাছন রাজা। কিন্তু হাছন রাজার বাবা কিংবা মা কারো পরিবারই বাঙালি নয়। এমন কি তাদের পূর্বপুরুষ মুসলিমও নন। তাঁর পূর্বপুরুষ ভরদ্বাজ গোত্রীয় ক্ষত্রিয় ছিলেন। রামচন্দ্রসিংহ দেব বারানসিতে রাজ্য স্থাপন করেন। তার অধস্তন এক পুরুষ রায়রেরিলি থেকে অযোধ্যায় বসতি গড়েন। সেখান থেকে ভাগ্যান্বষণে এলাহাবাদ হয়ে বর্ধমান আসেন। সেখান থেকে এক অধস্তন রাজা বিজয় সিংহ দেব যশোরের কাকদীঘিতে রাজধানী স্থাপন করেন। কিন্তু ছোটভাই দুর্জয় সিংহ দেবের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি সিলেটের কুলাউড়ায় বসতি স্থাপন করেন। তার প্রপৌত্র রাজা রণজিৎ সিংহ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা গ্রামের গোড়াপত্তন করেন। তাঁর পৌত্র বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহ দেব ওরফে বাবু রায় চৌধুরী আরবি ও ফারসি ভাষার সুপণ্ডিত ছিলেন। কিন্তু মুসলমানদের সাথে আহার-বিহার করায় হিন্দু সমাজপতিরা তাঁকে সমাজচ্যুত করে কাশীতে গিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে বলেন। এতে বিরক্ত হয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বাবু খাঁ নাম গ্রহণ করেন। একমাত্র পুত্রের এ সংবাদ জেনে পিতা রাজা বানারসি রাম সিংহ দেব তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কৌলিন্য রক্ষা করতে ফৌজদারকে কোন খানদানি ঘরের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। কোরাইশ বংশের ওয়েজ-উদ-দীন চৌধুরীর মেয়ে দৌলত বিবির সাথে বিয়ে হয়। তাদের পুত্র আনোয়ার খাঁ চৌধুরীর পুত্র দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীর পুত্রই দেওয়ান হাছন রাজা চৌধুরী। হাছন রাজার মা ছিলেন নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ির বল্লী গ্রামের জমিদার মজলিশ দিলওয়ারের বংশধর। হুরমত জাহানের আগে বিয়ে হলেও মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তার ৫ সন্তান ও স্বামীর মৃত্যু হয়। আলী রাজার প্রথম স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান ওবায়দুর রাজা। এ অবস্থায় তিনি হুরমত জাহানকে তৃতীয়বার প্রস্তাব দিলে তিনি লক্ষণশ্রীতে থাকার শর্তে রাজি হন।
যাইহোক হিন্দু সমাজপতিদের ধর্মান্ধতা যদি না থাকতো তাহলে বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহ দেব ওরফে বাবু রায় কখনোই বাবু খাঁ হতেন না। সামান্য আহার-বিহার নিয়ে এমন জাত যাওয়াটা ভারতে বিপুলভাবেই ঘটেছে। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে বহু মানুষের জাত চলে যেতো বলেই তারা ধর্মও ছেড়েছে। ভারতের বিখ্যাত গবেষক ও প্রাবন্ধিক জয়ান্তনুজ বন্দ্যোপাধ্যায় তার পিতার মুসলিম পাড়া থেকে মুরগি খেয়ে আসা নিয়ে লিখেছেন। তার মা হায় হায় করে উঠেছিলেন। লোকে শুনলে কি বলবে! অধিকাংশ গবেষকই দাবি করেন লালন ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। তিনি তীর্থ থেকে ফেরার পথে ভয়ানকভাবে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। সহযাত্রীরা ধরেই নিয়েছিলেন লালন মারা গেছেন। তাকে নদীর তীরে ফেলে রেখেই তারা বাড়িতে ফিরে যায়। লালনকে সেবা-শশ্রুষা করে এক মুসলিম পরিবার সুস্থ করে তুলেন। এরপর লালন বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ততদিনে তারা লালনের শ্রাদ্ধও সম্পন্ন করে ফেলেছিল। লালনকে ফিরতে দেখে এবং মুসলিম পরিবারে আহার করেছে ও সেবা গ্রহণ করেছে বলে তার জাত চলে গিয়েছে৷ তাই স্ত্রী-পরিজন কেউই লালনকে আর গ্রহণ করেনি। লালন ফিরে যায়। সিরাজ সাঁই শিষ্যত্ব গ্রহণ করে এবং একসময় মরমী গায়ক হিসেবে খ্যাতিমান হন। তবে লালন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এমন কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি। সে বাকি জীবন জাতহীন-ধর্মহীন বাউল হিসেবেই জীবন কাটিয়ে দেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারও মুসলিম হয়ে যেতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথের আদিপুরুষ কনৌজ থেকে বর্ধমানের কুশ গ্রামে আসেন। কুশ গ্রামে থাকার কারণে তারা কুশারী হন। সেখান থেকে তারা খুলনায় আসেন। পঞ্চানন কুশারী জ্ঞাতী কলহের কারণে কলকাতার সুতানটির দক্ষিণ দিকের গ্রাম গোবিন্দপুরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তখন জেলে, মালো, পোদ ও কৈবর্ত্যরা বসবাস করতো। একঘর ব্রাহ্মণ পেয়ে তারা তাদের ঠাকুর বলে সম্বোধন করতো। সেই থেকে কুশারীরাও ঠাকুর হয়ে যায়। ওই জ্ঞাতী কলহেই রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ মুসলিম বিষয়ক যাতনায় মুসলিম হতে পারতেন। একজন মুসলিম সাধক জমিদারের একজন হিন্দু কর্মচারী ছিলেন গোবিন্দলাল রায়। গোবিন্দলাল রায়। রমজান মাসে রান্না হচ্ছিল। গোবিন্দ মুসলিম জমিদারকে বললেন, ‘হুজুর ঘ্রানং অর্ধ ভোজনং! রান্নার ঘ্রাণে যেহেতু আপনার অর্ধেক ভোজন হয়েছে তাই আপনার রোজাও নষ্ট হয়ে গেছে।’ কদিন পরে জমিদার বাড়িতে গরুর মাংস রান্ন হাচ্ছিল। গোবিন্দ এসে উপস্থিত হলে, কথাচ্ছলে জমিদার আগের দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘গরুর মাংসের ঘ্রাণ তো পাচ্ছ। যদি ঘ্রাণং অর্ধ ভোজনং হয় তবে তুমিতো অর্ধেক গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে জাত হারিয়েছ।’ সাথে ছিল আরো ব্রাহ্মণ। তারা ঠিকই রটিয়ে দিল। গোবিন্দলাল ভোজন-ঘ্রাণে দুষ্ট হয়ে পিরালী হন। গোবিন্দলালের সাথে জগন্নাথ কুশারীর বিশেষ যোগসূত্র ছিল। তাতে জগন্নাথও পিরালী ব্রাহ্মণ হয়ে যান। অবশ্য আরেক স্থানে পড়েছিলাম এ ঘটনা সরাসরি জগন্নাথ কুশারীর সাথেই ঘটেছিল। পিরালী ব্রাহ্মণদের সাথে কোন ব্রাহ্মণই আত্মীয়তা করতে চাইতো না। তখন দক্ষিণডিহির জমিদার শুকদেব রায়চৌধুরী ছিলেন কন্যাদায়গ্রস্থ। তরুণ জগন্নাথ কুশারী এক দুর্যোগময় ঝড়ের রাতে শুকদেবের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেই রাতেই নিজ কন্যাকে সমাজচ্যুত জগন্নাথ কুশারীর সাথে বিয়ে দেন। এসব নিয়েই অশান্তিতে তারা খুলনা ছেড়ে কলকাতায় এবং আরেকটি অংশ বিক্রমপুরে চলে আসেন। তাদের নামে এখনো শ্রীনগরে কুশারী পাড়া গ্রাম রয়েছে। তবে খুলনা ও বিক্রমপুরে থাকা কুশারীরা আর্থিকভাবে ভাল নেই৷
জাত-পাতের যন্ত্রণায় রবীন্দ্রনাথের পরিবার হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ ও প্রচারে নিয়োজিত থাকেন। জাত খোয়ানোর জ্বালা লালন বুঝেছিলেন। সেই জ্বালা নিয়ে লালন গেয়েছিলেন—
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি/ সবই দেখি তা না না না
জাত গেল জাত গেল বলে/ একি আজব কারখানা
আসবার কালে কি জাত ছিলে/ এসে তুমি কি জাত নিলে
কি জাত হবে যাবার কালে/ সে কথা ভেবে বলো না
ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি/ এক জলে সব হয় গো সুচি
দেখে শুনে হয় না রুচি/ যমে তো কাউকে ছাড়বে না
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়/ তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়
লালন বলে জাত কারে কয়/ সে ভ্রম তো গেল না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews