গীর্জার মতে বজ্রপাত হল অবিশ্বাস, গীর্জা মেরামত না করা ও পাদরিকে ঠিকমতো বেতন না দেয়ার ফল। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন আবিষ্কার করেন, দুটি মেঘের মধ্যে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হল বজ্রপাত। এটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও হতে পারে। এ আধানের মান মেঘের উপরের অংশে নিচের অংশের চেয়ে বেশি হয়। এরকম বিভব পার্থক্যের কারণেই ওপর হতে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। ভবনে বজ্রপাত নিরোধক শলাকা বসালেই তাতে আর বজ্রপাত হবে না। চার্চ এ বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে তাদের মিথ্যাচার চালিয়ে যেতে থাকে। তারা গীর্জায় বিদ্যুৎ-নিরোধক শলাকা স্থাপন না করার নির্দেশ জারি করে। শলাকা লাগানো বাড়িগুলো এমনকি পতিতালয়গুলো রক্ষা পেলেও শলাকাহীন চার্চগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতেই থাকে, মারা যেতে থাকে চার্চের শত শত ঘণ্টাবাদক।
হিন্দু ধর্ম মতে বজ্রপাত হল দেবতার অস্ত্র। উত্তর জার্মানির নর্স জাতির মানুষের কাছে ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের একজন দেবতা রয়েছে যার নাম থর। থরের হাতে বিশাল এক হাতুড়ি থাকে যা দিয়ে পাহাড়-পর্বতও গুড়িয়ে দিতে পারে। সেই থর দেবতা থেকেই এসেছে ইংরেজি থার্স ডে মানে বৃহস্পতিবার। গ্রিক পুরানে এই দেবতার নাম জিউস আর রোমানদের এমন দেবতা হল জুপিটার। হিন্দু পুরানে জিউস বা জুপিটার হয়ে যায় ইন্দ্র! দেবরাজ ইন্দ্রর প্রধান অস্ত্রই হল বজ্র! ইন্দ্র যখন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তখনই তিনি বজ্র নিক্ষেপ করেন যা আমরা বজ্রপাত হিসেবে দেখি। হিন্দুরা শাঁখ বাজিয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে খুশি করে। ইন্দ্র খুশি হলে বজ্রনিক্ষেপ বন্ধ করেন।
কোরআন শরিফের সুরা রাদ এর আয়াত ১২-১৩: “তিনিই তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ ভীতিকর ও আশা সঞ্চারক। তিনিই উক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা। তাঁরই ভয়ে তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্রনাদ এবং ফেরেশতাগণ। তিনি বজ্রপাত করেন, অতঃপর যাকে ইচছা তাকে তা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতণ্ডা করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।” হাদিস শরিফে বহু স্থানে বজ্রপাত নিয়ে বলা হয়েছে। ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রের আঘাতপ্রাপ্ত হবে না।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৯২১৩)
আকাশে মেঘের মধ্যে আধান তৈরি হয়। এ ধরনের বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন দুটি মেঘের মধ্যে সাধারণত ঘটে। একটি মেঘ ও ভূমির মধ্যেও ঘটতে পারে। এই সময় উক্ত এলাকার বাতাসের প্রসারণ এবং সংকোচনের ফলে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। যেহেতু আলোর চেয়ে শব্দের গতি অনেক কম তাই আমরা আগে আলো দেখি পরে শুনি শব্দ। বায়ুমণ্ডলের উপরের অংশে নিচের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে, নিচের দিক থেকে উপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হচ্ছে। এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড বলে। অন্যান্য মেঘের মত এ মেঘেও ছোট ছোট পানির কনা থাকে। আর উপরে উঠতে উঠতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে পানির পরিমাণ যখন ৫ মিঃমিঃ এর বেশি হয়, তখন পানির অণুগুলো আর পারস্পারিক বন্ধন ধরে রাখতে পারে না। তখন এরা আলাদা হয়ে যায়। ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের এর সৃষ্টি হয়। আর এ আধানের মান নিচের অংশের চেয়ে বেশি হয়। এরকম বিভব পার্থক্যের কারণেই ওপর হতে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। এ সময় আমরা আলোর ঝলকানি বা বজ্রপাত দেখতে পাই।
বিজ্ঞান এসব প্রমাণ করেই বলেছে৷ বিশ্বাস এসবের সাথে মিলবে না৷ বিশ্বাস করে শলাকা না লাগানোর পরিণতি দেখেছে চার্চের পাদ্রিরা৷ ঘণ্টাবাদকদের পাদ্রিরা মিথ্যা বলে বাঁচাতে পারেননি৷ বাঁচতে হলে শলাকাই লাগাতে হবে৷ বিলগুলোতে প্রতিবছরই বজ্রাঘাতে কয়েকশ লোক মারা যায়৷ তাদের বাঁচাতে ধর্মপ্রচারকদের পাঠাতে বললে কেউ রাজি হবেন না৷ কিন্তু শলাকা বসানোর প্রস্তাবেই মানুষ আশার আলো দেখবে৷ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন আমাদের কাছে রহস্য ফাঁস করেছেন৷ বিপরীতে কিছু মানুষ এখনো টানতে চান অন্ধকার পথে৷