আজ বৃহস্পতিবার ২৫ মে ২০২৩ সকাল ১১ টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গণসাক্ষরতা অভিযান, সেভ দ্য চিলড্রেন, ফ্রেন্ডশীপ এর যৌথ আয়োজনে হেমপেল ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় শিখন অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযান এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরমা দত্ত এমপি।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। তিনি বলেন, আমাদের শিশুরা এতটাই মেধাবী যে তাদের যদি সুযোগ দেয়া হয় তারা বিশ্বের যেকোনো মানদন্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। কাগজের যুগের বদলে আমাদের এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করতে হবে। আমাদের ই-কন্টেন্টের উপর অনেক বেশি জোর দিতে হবে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিলে অফলাইন অনলাইন উভয় পদ্ধতিতে ক্লাস নিতে পারা সম্ভব। শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা অর্জন করার দিন শেষ। শিক্ষার ডিজিটাল রুপান্তরই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার শেষ ঠিকানা।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ ফরহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন,বছরে ১২ হাজার ট্রাক কাগজ লাগে বই ছাপাতে। তাহলে কত গাছ কাটতে হয়।ই-কন্টেন্ট এর উপর যদি আমরা নির্ভর করতে পারি তাহলে বইয়ের কাগজের জন্য আর গাছ কাটতে হবে না।
নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য সেভ দ্য চিলড্রেন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভান ম্যানেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যামিরেটাস ও এডুকেশন ওয়াচ এর মূখ্য গবেষক ড.মনজুর আহমেদ,ফ্রেন্ডশিপ এর সিনিয়র ডিরেক্টর ও শিক্ষা কর্মসূচির প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) ইলিয়াস ইফতেখার রসুল, জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম, ঢাকা মোহাম্মদপুর থানা শিক্ষা অফিসার মমতাজ বেগমসহ কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন গণসাক্ষরতা অভিযান এর উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযান এর নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী।
কর্মসূচির পরিচিতি, অর্জন ও সম্ভাবনা বিষয়ক মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন এর এম্পাওয়ারিং গার্লস থ্রু এডুকেশন (ইজিই) কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক শাহিন ইসলাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক ড. হ্যাপী কুমার দাশ। মূল্যায়নে দেখা যায়, মেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফলভাবে সমাপ্তিতে সহায়তা করা এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহযোগিতা করার লক্ষ্য নিয়ে কর্মসূচিটি শুরু হয়। এই কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম এবং জামালপুরের ১২০ টি বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ১২৫৩৬ জন মেয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি সময়ের আগে ও পরে ভার্চুয়াল শিখন প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে ই-কন্টেন্ট ব্যবহার করে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত শিক্ষায় সহায়তা প্রদান করা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মেয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে ট্যাবলেট ব্যবহার করে স্কাইপি সেশনের মাধ্যমে সংযোগ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করা, ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য অর্জনে মেয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করা, বিদ্যালয়ের বাইরে দলগত সহায়তা প্রদান করা এবং বাড়ির কাজ প্রস্তুতিতে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বাড়িতে গিয়ে সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রকল্পের আওতায় মেয়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ভিত্তিক শিখন অধিবেশন ও ফোন ফলোআপ সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব, আইসিটি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বাল্যবিবাহের কুফল এবং শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বাবা মায়ের ভূমিকা বিষয়ে অবহিত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে সাক্ষাৎ করা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার উপকারিতা এবং বাল্যবিবাহের অপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, মোবাইল মেসেজিং, স্কাইপি সেশন, সরকারি কর্মকর্তা, কমিউনিটির সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাথে পরামর্শ ও সমন্বয় সাধন করে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ফলস্বরুপ, কর্মসূচির উপর জরিপের মাধ্যমে অন্যান্য এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে ইজিই কর্মসূচির আওতাধীন শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সংখ্যা, প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিকে ভর্তির হওয়ার সংখ্যা এবং এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে সফলভাবে কৃতকার্য হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় শতভাগে পৌঁছে গেছে। সেইসাথে আশ্চর্যজনকভাবে ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিবাহের সংখ্যা (০) শূন্য তে নেমে এসেছে।
মতবিনিময় সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষক সংগঠন, প্রকল্পের কর্ম এলাকার স্কুল শিক্ষক, অভিভাবক, গণসাক্ষরতা অভিযান এর কাউন্সিল (বোর্ড) মেম্বার, সহযোগী সংস্থা (ফ্রেন্ডশীপ), সেভ দ্য চিলড্রেনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দেশি বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সহযোগী সংগঠনের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট