পৃথিবীতে ৪৩০০টি ধর্ম৷ ধর্মগুলো কথিত শালীনতার জন্য বিভিন্নরকম পোশাক নির্ধারণ করে দেয়৷ ধরে নিলাম নিজ নিজ ধর্মের নির্ধারিত পোশাকগুলোই সবচেয়ে শালীন৷ এগুলো পরলেই কি ধর্ষণমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে? মুসলিমদের ধর্মীয় পোশাকের সাথে হিন্দুদের, ইহুদিদের, বৌদ্ধদের বা খ্রিষ্টানদের শালীন পোশাকের কোন মিল নেই৷ তাহলে এক পোশাক সব ধর্মের মানুষকে কিভাবে মুক্তি দিবে?
কাকে বলবো শালীন পোশাক? শালীনতা কি? শালীনতা হল- এমন একটি বিষয় যা অপরকে যৌন আকর্ষণে উৎসাহিতকরণ থেকে বিরত রাখা৷ এটা একতরফা কোন বিষয় নয়৷ পাশ্চাত্যে মধ্যরাতে একাকী একজন নারীকে দেখে একজন যৌন তাড়িত হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে না৷ দক্ষিণ এশিয়ায়তো নারীর কণ্ঠ শুনেই ধর্ষকামী পুরুষ সচকিত হয়ে ওঠে৷ মানে পুরুষের মানসিকতাই মাপকাঠি৷ মাদ্রাসার শিশু ছেলেদের বিপুলভাবে বলাৎকার হওয়ার খবর আসে৷ ওরা কি অশালীন পোশাক পরায় ধর্ষকরা আকৃষ্ট হয়েছিল? আধুনিক পোশাক পরা নারীদের ধর্ষিতা হওয়ার হার খুবই কম৷ দরিদ্র মেয়েরা যথেষ্ট কথিত শালীন পোশাক পরেও ধর্ষণের শিকার হন৷ ধর্ষকরা আধুনিক নারীদের ধর্ষণ করার সাহস পায় না৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রী ঢাকা শহরেই ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন শালীন পোশাক পরেই৷ যদি সে আধুনিক জিন্স ও টি-শার্ট পরা থাকতো তবে ওই ধর্ষক সাহসই পেত না৷ ফেনির নুশরাতকে মাদ্রাসার সুপার ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল৷ তার পোশাকও শালীন ছিল৷
জিন্স ও টি-শার্ট কি অশালীন পোশাক? এক সময় তো ইংরেজি শেখা, মাইকে কথা বলা, ছবি তোলা, টিভি দেখা, ব্যাংকে লেনদেন করা হারাম ছিল৷ এখন এগুলো হালাল হয়ে গেছে? ভারতে মুসলিমরা আসার পরে হিন্দু নারীদের পোশাকে পরিবর্তন আসে৷ একসময় নাঙ্গেলিদের স্তন উন্মুক্ত রাখতে হতো৷ স্তন ঢাকতে হলে ট্যাক্স লাগতো ভারতে৷ উন্মুক্ত বক্ষই শালীন! আদিতে যখন মানুষের পোশাক ছিল না তখনও কি মেয়েরা কেবলই ধর্ষিতা হত? এখন কি বনের মাদীপশুরা কেবলই ধর্ষিতা হয় পোশাক না থাকায়? মানুষ এক সময় সুতা তৈরির কৌশল শিখে এবং কাপড় তৈরি করে৷ এটা ছিল বিজ্ঞান৷ কোনো ধর্মে বা ধর্ম গ্রন্থেই কাপড় তৈরির কৌশল ছিল না৷ অথচ ধর্ম বিশ্বাস এসেছে কাপড় তৈরির আগেই৷
কাপড় তো ঈশ্বর আবিষ্কার করেননি? কাপড় আবিষ্কার যারা করেনি তারাই কাপড় পরার বিধান জারি করলো৷ তাও একেক ধর্মে একেক রকম৷ হিন্দু ব্রাহ্মণরা টিকি, মুসলিমরা দাড়ি, বৌদ্ধরা মুণ্ডিত মস্তক৷ ধর্মান্ধ নারীদের মধ্যে মুসলিমদের, খৃষ্টানদের, ইহুদিদের, বৌদ্ধদের পোশাক আলাদা৷ এক ধর্মের পোশাক আরেক ধর্মে নিষিদ্ধ৷
যৌন আকর্ষণ থেকে বিরত রাখবে কোন পোশাক? নানদের পোশাক কি মুসলিমদের কাছে শালীন? মিয়ামী বীচে রৌদ্রস্নান করা নারীদের ধর্ষিতা হওয়ার খবর পাই না৷ আমাদের সাথে চাকরি করা মেয়েরা সাধারণত সেলোয়ার কামিজ পরে৷ প্যান্ট/জিন্স ও শার্ট/টি-শার্ট পরা মেয়েদের সাথে চাকরি করেছি৷ দেখেছি জিন্স-টিশার্ট পরা নারীদের একটু বেশিই সমীহ করে কামুক পুরুষরা৷ কানাডার মিজ এন প্যান্টের সাথে সার্ট পরতেন৷ আমার কাজ তিনি কিছুকাল তদারকিও করেছেন৷ অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্না নারী৷ কেউ তাঁর দিকে যৌন আকাঙ্ক্ষায় তাকিয়েছে বলে মনে হয়নি৷
আরেকজন বিদেশি নারীর সাথে আমার একটি ছবি দিলাম৷ ওনি বিশ্বব্যাংক এর দক্ষিণ এশিয়া অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞ নাটালিয়া স্টানকেভিচ৷ তাঁর সার্ট কি অশালীন? তাঁর সাথে কথা বলার সময় সম্মানের জায়গাটাই থেকেছে, যৌনতা নয়৷ অর্থাৎ প্যান্ট সার্টও যৌন আকর্ষণ ঘটাচ্ছে না৷ অথচ শিশু ছাত্ররা, ছাত্রী নুশরাতরা যৌন হয়রাণির শিকার হচ্ছে৷ শালীনতা পোশাকের চেয়ে মনসিকতাতেই বেশি সংকট তৈরি করে৷ পাশ্চাত্যের মেয়েরা ওড়না পরে না৷ স্ক্যান্ডেভেনিয়া থেকে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত পাশ্চাত্যের একজন নারী মাঝরাতে গটগট করে রাস্তা দিয়ে নির্ভয়ে হেঁটে যাচ্ছেন৷ আর দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা নিজ পরিবারেই সবচেয়ে বেশি যৌনহয়রাণির শিকার হন৷ এখানকার নারীরাই যৌন হয়রাণির পর সবচেয়ে কম অভিযোগ করেন এবং কম প্রতিকার পান৷ তাহলে শালীন পোশাকই কি আর কেনই বা পোশাককে ধর্ষণের জন্য দায়ি করে ধর্ষকদের দায়মুক্তি দিচ্ছি?