স্বামী সবকিছুতেই সন্দেহপ্রবন৷ কারো সাথে কথা বলা, মোবাইলে বিজি পাওয়া, কোথাও থেকে আসতে অধিক সময় লাগা ইত্যাদি কারণে স্ত্রীকে সন্দেহ করতে থাকেন৷ সংসারে চূড়ান্ত বিবাদ এবং পরিণতিতে ডিভোর্সে মুক্তি৷ মেয়েটির স্বামী সন্দেহ-বাতিকগ্রস্থ হলেও তিনি প্রশ্ন করতে পারেননি৷ সঠিক প্রশ্ন করতে পারলেই তিনি সঠিক তথ্য মানে জ্ঞান পেয়ে যেতেন৷ প্রেম করে বিয়ের সংসারটাও সুখের হত তাদের৷ জুৎসই প্রশ্ন করতে পারলে পরী-রাজের সংসারটাও সুখের হতে পারতো৷
এথেন্সে আমরা দার্শনিকদের মধ্যে এমনটা দেখতাম৷ ওই সময়ে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ ছিল না৷ তারা সন্দেহ করে তার উপর প্রশ্ন করেই জ্ঞানের অনুসন্ধান করেছেন৷ সম্রাট কনস্টান্টাইন যখন দাস-বিদ্রোহ দমনের জন্য মৃতপ্রায় খৃষ্ট ধর্ম চাপিয়ে দিলেন তখন সন্দেহ করার আর সুযোগ থাকলো না৷ ইসলাম আগমনে বিশ্বাস আরো প্রকট হল৷ একসময় বাগদাদ কেন্দ্রিক জ্ঞানচর্চা দেখেছি— যাকে আমরা ইসলামিক স্বর্ণযযুগ বলি৷ কিন্তু শাসক আর কাঠমোল্লারা কঠোরভাবেই তা দমন করে৷ প্রথমে ইমাম গাজ্জালী আরও পরে সালাফিবাদ ইসলামে জ্ঞানচর্চার পথ রুদ্ধ করে দেয়৷ ইসলাম একটি প্রশ্নহীন সমাজ তৈরি করে দেয়৷
রেনেসাঁর মাধ্যমে পাশ্চাত্যে অন্ধকার যুগের অবসান ঘটলেও মুসলিম অঞ্চলে অন্ধকার এখনো জাকিয়ে বসে আছে। তালেবান, আইএস, বোকো হারাম, আল শাদাব, হেফাজতে ইসলাম, জামাতে ইসলাম, ব্রাদারহুডসহ বহু সংগঠন জ্ঞানের আলোকে কঠোরভাবেই প্রতিহত করছে৷ কারো মধ্যে সন্দেহ হলেও তরবারি-চাপাতি দেখায় আর প্রশ্ন করলেই তা গর্দান বরাবর নামিয়ে আনে৷ নাগিব মাহফুজ, সালমান রুশদি ও হুমায়ুন আজাদকে কেন গর্দানে আঘাত করা হয়? জ্ঞানের আলোহীন মুসলিম জাহানে প্রাকৃতিক সম্পদ ভরপুর থাকলেও তা মানুষের উন্নয়নে কাজে আসছে না৷ ১৮০ কোটি মুসলিম কোনভাবেই পেরে উঠছে না দেড় কোটি ইহুদির সাথে৷ মুসলিমরাও যদি কেনান অঞ্চল নিয়ে সন্দেহ করতো এবং প্রশ্নে প্রশ্নে সমাধান খুঁজতো তাহলে সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিতেই তারা বসবাস করতে পারতো৷
সামাজিক রীতি, অর্থনীতি, দর্শন, ধর্ম, তত্ত্ব ইত্যাদি বহু দিকেই আমরা সন্দেহ করতে পারিনি৷ পৃথিবী সমতল না গোলাকার? পৃথিবী ও সূর্য কে কার চারদিকে ঘুরে? সূর্য কর্দমাক্ত জলাশয়ে ডুবে? না তখন আফ্রিকায় আলো দেয়? রাতে স্রষ্টার আরাধনা করে না আমেরিকাকে আলোকিত করে? কেন এতো বৈষম্য? ধনী দরিদ্র কি স্রষ্টাই নির্ধারণ করে না ভুল অর্থনীতি করে? শাসকরা কতটা শোষণ করে আর কতটা লুটপাট করে? এমন লক্ষ লক্ষ দিকে আমরা সন্দেহ করতে শিখিনি৷ আমরা প্রশ্নহীন মনে করেছি এসবকে৷ ফলে যথারীতি জ্ঞানের আলো আমাদের স্পর্শ করেনি, করছে না৷
প্রশ্নহীন সমাজে জ্ঞানের আলো উঁকি দিতে পারে না। সেখানে অন্ধকার জাঁকিয়ে বসে থাকে। কেউ আলোর কথা বললেই তাকে কতল করতে মূর্খের দল ঝাপিয়ে পড়ে। সত্য ও যৌক্তিক প্রশ্নকেও তারা মোকাবেলা করতে চায় চাপাতি দিয়ে। সন্দেহ করতে না শিখলেতো প্রশ্ন করার মানসিকতা তৈরিই হবে না। তাহলে জ্ঞানের সন্ধান পাবো কি করে? রেনেসাঁর সময় ইউরোপে যত অগ্রসর চিন্তার মানুষ ছিল এখন দক্ষিণ এশিয়ায় তার চেয়ে অনেক বেশিই রয়েছেন। তারা সন্দেহ করেন ঠিকই কিন্তু সেটা প্রকাশ করে প্রশ্নটা আর করেন না। কেন? ভয়ে অবশ্যই। হিন্দু ও মুসলিম ধর্মান্ধদের কাছে প্রশ্ন করাকেই বড় অপরাধ হিসেবে প্রতীয়মান হয়৷ জবাব না দিয়ে তারা চাপাতি দেখায়! সমাজটা বদলাতে চান অনেকে। বদলানোর জন্য প্রশ্ন করাটাই জরুরী। শুরু করতে হবে এখনি। নইলে দক্ষিণ এশিয়া থেকে অন্ধকার দূর হবে না৷