দেশের আট বিভাগেই গতকাল শুক্রবার হালকা থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে টানা ১২ দিনের তাপপ্রবাহ থেকে স্বস্তি পেয়েছে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের মানুষ। আজও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় লঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গত ২৮ মে থেকে দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হওয়ায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অনেকটাই কমে আসে। অবশ্য তাপমাত্রা কমলেও ভাপসা গরমের অনুভূতি ও অস্বস্তি পুরোপুরি কাটেনি। গতকালের বৃষ্টিতে ১২ দিন পর তাপপ্রবাহ ও দুর্বিষহ গরম থেকে স্বস্তি মিলেছে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়াও ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। তবে আজ সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়ার আভাস দিয়েছে অধিদপ্তর।
কিন্তু রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, কালও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকবে। তবে আজকের (গতকাল) তুলনায় সেটা কিছুটা কমতে পারে। ফলে তাপমাত্রা আগামীকাল (আজ) আবার কিছুটা বাড়তে পারে। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা জানান, এখন যেহেতু সূর্যের আলো খাড়াভাবে মাথার ওপর আছে, সেহেতু বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে গেলেই তাপমাত্রা বাড়বে।
আবার যখন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে তখন তাপমাত্রা আবার কমে আসবে। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, কাল রবিবার বা তার পর থেকে বৃষ্টি কমে আসতে পারে। এই সময়টায় দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি বেশি হবে।
তবে গতকালের বৃষ্টিতে তাপপ্রবাহ পুরোপুরি যায়নি। গতকালও দেশের তিনটি জেলায় তাপপ্রবাহের খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজও এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে গতকাল রাত ৯টার দিকে আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
মৌসুমি বায়ু ও বর্ষার প্রভাব : আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষাকাল) গতকাল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটি দেশের বাকি অংশে বিস্তার লাভ করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ বলেন, ‘বর্ষা চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু অংশে চলে এসেছে। ধীরে ধীরে এটা আরো অগ্রসর হবে। বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও ধীরে ধীরে বাড়বে। আশা করছি ১৩-১৪ জুনের পর বর্ষাকাল পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে।’
তিন দিনে তাপমাত্রা কমেছে ৪.৫ ডিগ্রি, বেড়েছে বৃষ্টি : গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিনের তুলনায় গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ১.৬ ডিগ্রি। এ সময় ঢাকার তাপমাত্রা কমেছে ১.২ ডিগ্রি। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.১ ডিগ্রি। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, আগের দিনের তুলনায় গতকাল দেশের তাপমাত্রা ১ থেকে ৬ ডিগ্রি কমেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত তিন দিনের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন দিনের ব্যবধানে সারা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ৫.৪ ডিগ্রি। এর কারণ গত দুই দিনের বৃষ্টি। তবে আগের দিনের (বৃহস্পতিবার) তুলনায় গতকাল দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও অঞ্চলের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। রাজধানীতে বৃহস্পতিবার মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও গতকাল ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেশের ছয় বিভাগে বৃষ্টি হলেও গতকাল আট বিভাগেই বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪৪টি স্টেশনের ৩৫টিতে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে টাঙ্গাইলে ৮৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া কুমিল্লায় ৮৩ মিলিমিটার, সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ৬৩ মিলিমিটার, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৫৬ মিলিমিটার, রংপুরে ৫০ মিলিমিটার ও ঢাকায় ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট