যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতি বদলায়নি বলে জানিয়েছেন সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা। গতকাল রোববার রাজধানীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চার মন্ত্রী বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী যেহেতু এখন নিষিদ্ধ হয়নি, সে কারণেই তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষা করুন, আরও দেখবেন কী হয়। একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, জামায়াত সমাবেশের সুযোগ পেয়ে বক্তব্যে আস্ফালন করেছে।
এগুলো আসলে বিএনপির বক্তব্য। সুযোগ দিলে তারা কী করতে পারে– সেটিও তাদের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে।১০ বছর পর গত শনিবার প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীকে প্রকাশ্য সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে খ্যাত জামায়াত এদিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো এই দলটির সমাবেশ করা নিয়ে রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রোববার সরকারের মন্ত্রীদের এমন মতামত এলো।
যদিও শনিবারই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছেন, জামায়াত মাঠে নামেনি, তাদের মাঠে নামিয়েছে তাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি। আবারও আগুন সন্ত্রাসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। তাঁর এ বক্তব্যের পরদিন সিনিয়র মন্ত্রীরা দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
সমাবেশের অনুমতি দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : কৃষিমন্ত্রী
রোববার সচিবালয়ে জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফার্ডিনান্ড ফন ভেইহের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। অপেক্ষা করেন, আরও দেখবেন কী হয়। তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক ব্যাপার, রাজনৈতিক কারণে। দেখা যাক এটি সময়ই আমাদের বলে দেবে।
জামায়াত রাজনৈতিক দল। তবে হাইকোর্টেরই পর্যবেক্ষণ ছিল– সংবিধানের সঙ্গে তাদের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক ও গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের তো অনেক জনসমর্থনও আছে। এ পরিস্থিতির আলোকে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় রাজনীতিতে অনেক পদক্ষেপ নিই, এটি নিতে হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক প্রতিকূলতার মাঝে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সুপরিকল্পিতভাবে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য, দেশটিকে পাকিস্তানের ধারায় নেওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে। এ দেশে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া যায়নি, বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে আনা যায়নি। এমন পরিস্থিতি ছিল যে সামরিক স্বৈরাচাররা এরশাদের আমলে, জিয়ার আমলে এগুলো করেছে। তখন আমাদের পরিস্থিতির আলোকে অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সেটিই আমি বলতে চেয়েছি।
সুযোগ পেয়ে তারা বিএনপির মতো আস্ফালন করেছে : তথ্যমন্ত্রী
একই দিন সচিবালয়ে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু : জুলিও কুরি ও এশীয় শান্তি সম্মেলন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, জামায়াত এখনও যেহেতু নিষিদ্ধ হয়নি এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আবেদন করেছে, সেজন্য তাদের সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের সমাবেশ থেকে আস্ফালন করে যেভাবে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, এগুলো আসলে বিএনপিরই বক্তব্য।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে শত শত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, সেটারই ইঙ্গিত জামায়াত দিয়েছে। বিএনপি জোটের প্রধান শরিক জামায়াতকে দিয়ে তারা এই কথাগুলো বলিয়েছে। সুযোগ দিলে তারা কী করতে পারে– সেটিও তাদের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে।
এটা নীতি-আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় : আইনমন্ত্রী
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া সরকারের নীতি-আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
তিনি বলেন, তাদের (জামায়াত) সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার মালিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা কী বিবেচনায় অনুমতি দিয়েছেন, তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন।
আইনমন্ত্রী বলেন, অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করার জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তবে বিচারের চূড়ান্ত রায়ে দোষী না হওয়া পর্যন্ত তাদের অপরাধী দল হিসেবে বলা যাবে না, তাদের নিষিদ্ধও করতে পারি না। তবে জামায়াতের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এটি আগামী কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
অনিবন্ধিত দল হিসেবে সভা-সমাবেশ করতেই পারে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
একই দিন রাজারবাগ হাইওয়ে পুলিশের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জামায়াত বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতি বদলায়নি। অনিবন্ধিত দল হিসেবে জামায়াত ইনডোরে সমাবেশ করতেই পারে।
তিনি বলেন, জামায়াত বর্তমানে একটি অনিবন্ধিত দল। দেশের অনেক অনিবন্ধিত দলই বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশের আয়োজন করে। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে তারাও সভা-সমাবেশ ইনডোরে করতেই পারে। এতে কোনো বাধা নেই। এতে আওয়ামী লীগের কোনো নীতির পরিবর্তন হয়নি।
তিনি বলেন, জামায়াত জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল। এখানে তারা প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে থাকে। এসব সমাবেশে অনেক সময় দেখেছি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়েছে। এবারও জামায়াত সেখানে সমাবেশ করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল। এসব বিষয় মাথায় রেখেই কমিশনার যাচাই-বাছাই করে তাদের ইনডোর সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট