যতোগুলো বইয়ের নাম লিস্ট আকারে লিখেছি এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু বই পড়া হয়েছিল কারাগারের লাইব্রেরীতে। কিন্তু বই গুলো অসম্পূর্ণ পড়া হয়েছে বিধায় সেই সব বইয়ের নাম উল্লেখ করিনি।সাপ্তাহিক ফোন কলের দিন বাড়িতে ফোন দিলে জানতে পারি আমার মামলা নিয়ে কয়েকবার উকিল জামিন চেয়েছে। কিন্তু কোর্ট কোনভাবেই জামিন দিচ্ছে না।মামলায় যে ধারাগুলো ব্যবহার করেছে পুলিশ সেগুলো নাকি বিএনপি – জামাতের মামলা। কয়েকজন অভিজ্ঞ বন্দীকে আমার কেস কার্ড দেখালে তারা সেটাই বললো। আমার কেস পার্টনারদের কাছে জানতে পারলাম তাদের সবাইকে নাকি দ্বিতীয়বার রিমান্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে রিমান্ডের বদলে পাঠানো হয়েছে মানসিক হাসপাতালে। রিমান্ডে তাদের প্রত্যেককেই আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছে জানতে পারলাম ডি বি পুলিশ আমার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেও যখন কিছুই খুঁজে পায়নি তখন নাকি তারা বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করতে লাগলো। কেউ কেউ বিরক্তির সুরে বললো, শালার পাগল ছাগল কই থেইকা ধইরা নিয়া আসছে? আর এইভাবেই দেখতে দেখতে প্রায় ছয় মাস কেটে গেলো। কিন্তু এর মধ্যে আমার জামিনের কোন নামগন্ধও খুঁজে পেলাম না। নিরুপায় হয়ে জেল বন্দী কিছু নেতাদের পেছনে ঘুরতে শুরু করলাম। এনাদের মধ্যে অনেকেই আশ্বাস দিলেন তারা আমার মামলার বিষয়টা দেখবে। কিন্তু বাড়িতে ফোন দিলে পরিবারের লোকজন এ বিষয়টা তেমন একটা আমলে নিলোনা। আর তাছাড়া আমার মামলার উকিলের সঙ্গেও আমার তেমন কোন যোগাযোগ নেই। সম্পূর্ণ যোগাযোগ ছিল পরিবারের সঙ্গে। ছোট ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে কয়েকবার উকিলের নাম্বারটা চাইলাম। কিন্তু ছোট ভাই আমাকে উকিলের নাম্বার দিলো না। পরিচিত অনেকেই বাড়িতে ফোন দিলো। কিন্তু পরিবারের লোকজন কাউকেই পাত্তা দিল না।
আমার পরিবারের লোকজন যে আমাকে জেলখানায় নিয়মিত দেখতে এসেছে আমার খোঁজ খবর রেখেছে বিষয়টা এমনও না। তাদের আচরণে বোঝা গেলো আমি মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছি। তাই তারা আমার কোন কথাকেই তোয়াক্কা করছে না। আমার ওয়ার্ডের মাদক মামলার আসামীদের বিলাস বহুল জীবন যাপন শুধু চুপচাপ দেখে যেতে লাগলাম। অধিকাংশ আসামী সরকারী ফাইলের খাবারের সাথে আলাদা খাবার কিনে খায়। আমার কাছে পয়সা নেই। তাই ঐ সব খাবার টাকা দিয়ে কিনে খাওয়ার মতো যোগ্যতাও আমার ছিল না। ওয়ার্ডের ইমাম বলে অনেকেই তাদের পাশে বসিয়ে খাবারে এটা ওটা শেয়ার করতো। আর দুই একজন উচ্চ মনস্তত্ত্বের অধিকারী জেল বন্দী অল্প স্বল্প হাত খরচ দিয়েও সহযোগিতা করতো। এভাবেই কষ্ট করে জেলখানার দিনগুলো পার করতে লাগলাম।