চলতি বছরের ১৮ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চার হাজার ৯০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়, মারা যায় ৩৪ জন। আর এ মাসের প্রথম ১৮ দিনেই মারা যায় ২১ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৬২ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি হয় দুই হাজার ৮৮৬ জন, যা মোট রোগীর প্রায় ৫৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যু অনেক বেড়ে গেছে।
এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জুলাই থেকে পরবর্তী তিন মাসে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩০৫ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৩২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৩ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
আগের দিন শনিবার চলতি মাসে ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও আক্রান্ত দেখেছে দেশ। এ সময় ৪৭৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়, মারা যায় চারজন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক মশার প্রজননস্থল শনাক্ত, পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১০ দিনব্যাপী কার্যক্রমটি চলবে আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) অর্থায়নে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার ৯৮টি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম চলবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধ্যাপক কবিরুল বাশারের কারিগরি সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ববিদরা এই কাজ করছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে আমরা কাজ করছি। আমরা এডিস মশার ঘনত্ব ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যা দেখছি তাতে দেখা যাচ্ছে যে পরিস্থিতি আসলে ভালো নয়। যদি আমরা এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
জুলাই মাসে এটি আরো বাড়ার আশঙ্কা করছি। বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস আমাদের জন্য খুব ভয়ংকর হবে বলে মনে হচ্ছে।’
প্রথম দিনের কাজের ফলাফল সম্পর্কে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, ‘চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়ার জন্য আমাদের ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাচ্ছি বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায়।’
এই সময়ে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে কবিরুল বাশার বলেন, ‘গত বছরের একটা প্রভাব এখানে আছে। প্রকৃতিতে গত বছরের ডেঙ্গু রোগী যেহেতু ছিল সে জন্যও এটা বেড়ে গেছে হঠাৎ। এ ছাড়া পানি জমার কিছু উৎস সারা বছরই থাকায় এডিশ মশা সারা বছরই আমরা পাচ্ছিলাম। আবার এখন বৃষ্টি শুরু হওয়ায় পানি জমার স্থান আরো বেড়েছে। ফলে এটা (ডেঙ্গু) ধীরে ধীরে জ্যামিতিক হারে বাড়তে শুরু করবে।’
চলতি বছর জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩ এবং মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট