মামলা নিয়ে পরিবারের গাফিলতি দেখে কারাগারে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় কমিয়েই দিয়েছিলাম।
লাইব্রেরীতে বই পড়ে,নিরক্ষরদের শিক্ষা দান করে আর সমমনা ব্যাক্তিদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে কারাগারের দিনগুলো পার করতে লাগলাম। আমার ওয়ার্ডে যে সমস্ত আসামীরা থাকতো এরা অধিকাংশই নিম্নবিত্ত পরিবারের। আর বেশির ভাগই মাদক মামলার আসামী। এদের সঙ্গে ওঠা বসা করা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ হিসেবে অবজ্ঞা করছি না। আচরণগত সমস্যাটার কথা বলছি। যেহেতু তাদের আচরণের সঙ্গে আমার মিলতো না সেহেতু আমি ওয়ার্ডে থাকতাম না। সকাল হলেই নাস্তা সেরে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে আসতাম। ভালো উন্নত বা ভি আই পি ওয়ার্ডগুলোতে থাকতে গেলে টাকা দিয়ে থাকতে হয়। টাকা না থাকায় ভি আই পি ওয়ার্ডে থাকার কথা মাথায় আনতে পারিনি কোনোদিন। অধিকাংশ সময় কাটাতাম মননচর্চা কেন্দ্রে।কারাগারে অনেক মিডিয়াকর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো।যেহেতু আমি একজন মিডিয়াকর্মী সেহেতু মিডিয়াকর্মীদের সঙ্গেই আড্ডা বেশী দেয়া হতো।এরা অধিকাংশই থাকতো মননচর্চা কেন্দ্রে। আর মাঝে মাঝে কিছু সাধারণ জেলবন্দীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে তাদের জীবন কাহিনী শুনতাম। কাস্টডি যখন আট মাস ছুঁই ছুঁই তখন বাধ্য হয়ে সরকারী উকিলের খোঁজ করতে শুরু করলাম। কারাগারে আসার পর থেকে ছোট ভাই একবার শুধু হাসপাতালে এসেছিল দেখা করতে। কিন্তু এর পরবর্তীতে একবারের জন্যেও সাক্ষাতে আসেনি। ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলে নানা ব্যস্ততা দেখায়। তাই পরিবারের ওপর জামিনের সমস্ত আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। আইনি পরামর্শ নিতে গিয়ে জানলাম এই মামলার কাস্টডি সর্বোচ্চ চার সপ্তাহ। কিন্তু আমার কেন এতোদিন কারাগারে থাকতে হচ্ছে সেটা সম্পর্কে আমি অবগত না। মনে হলো সরকারী উকিল না ধরে আরেকটু ধৈর্য্য ধরি। দেখি না কি হয়। পুরো রমজান জেলখানায় পার করে দিলাম। রমজান মাসে ওয়ার্ডে সূরা তারাবী পড়ানোর দায়িত্ব নেই।সম্পূর্ন ঈদুল ফিতর কারাগারেই কাটালাম। ঈদের সময় ও পরিবার থেকে কেউ কারাগারে সাক্ষাৎ করতে আসেনি। কয়েকজন সহনশীল কারাবন্দী ঈদের আগের দিন পাঞ্জাবী উপহার দিলো। সেই পাঞ্জাবী পড়ে ঈদের নামাজ আদায় করলাম জেলখানায়। ( চলবে )