পদ্মা সেতু পুরো দক্ষিণাঞ্চলকে যুক্ত করেছে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে। যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। দূরত্ব কমে গেছে। গতির সঙ্গে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে জেগেছে নতুন সম্ভাবনা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর স্বপ্নও জোরালো হচ্ছে। এই সেতুর সমীক্ষাও করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই সমীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। সমীক্ষা শেষে মূলত সেতুর প্রান্ত নির্ধারণ করা হবে। সেই সঙ্গে কোন কোন এলাকা দিয়ে সেতুর সংযোগ সড়ক যাবে, সেটিও তখন ঠিক করা হবে।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মিত হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের একাংশ এবং যশোরের দূরত্ব কমে আসবে। এই সেতুতেও যদি রেল যুক্ত করা হয় তাহলে রেলের নেটওয়ার্ক আরো বিস্তৃত হবে।
জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, যেকোনো যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিকল্প থাকা জরুরি। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল, বাংলাদেশ তা করেছে। দ্বিতীয় সেতুও হতে পারে। সম্ভাবনা সব সময়ই থাকবে। মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত আসতেই পারে।
মনজুর হোসেন আরো বলেন, ‘এর আগে একটা প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল। সেটা আমাদের কাছে আছে। তার ওপর ভিত্তি করে এখন আবার পর্যালোচনা হচ্ছে। এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আর্থিক নিশ্চয়তার বিষয়গুলোও রয়েছে। সব নিশ্চয়তা ও সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে আমরা কাজ শুরু করতে পারব।’
১৯৯৯ সালের মে মাসে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই (প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি) সমীক্ষা শুরু হয়। জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ২০০৩ সালের মে থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শুরু হয়।
১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করা হয়, সেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য উপযুক্ত দুটি পথ চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পথটিকে সেতু নির্মাণের জন্য তখন বেছে নেওয়া হয়। ওই সময়ই আরেকটি নির্বাচিত পথ ছিল মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া। এখন পর্যন্ত ওই জায়গায়ই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে।
বিবিএ সূত্র বলছে, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে তিন ধরনের অ্যালাইনমেন্ট আলোচনায় আছে। এর মধ্যে ওয়াই আকৃতির সেতু নিয়েও কথা হচ্ছে। এতে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও পাবনা তিন জেলায় সেতুর তিনটি প্রান্ত থাকবে। এ ক্ষেত্রে সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ১২ কিলোমিটার।
আবার উল্টো ‘সেভেন’ আকৃতিতে তিন জেলাকে যুক্ত করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে খরচ অনেক কম হবে। আর যদি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার মাঝে সেতুকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয় তাহলে প্রকল্পের খরচ ৩০ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে আসবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিবিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌস বলেন, ‘সেতুর নকশা অ্যালাইনমেন্ট কেমন হবে সেসব এখনো অনেক পরের ভাবনা। প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে সরকারের নির্দেশ পেলে আগানো হবে। আমাদের আরো অনেক জায়গায় সেতু করা প্রয়োজন। এসব বিবেচনা করে একসঙ্গে একটা সমীক্ষা করা হচ্ছে।’
বিবিএ সূত্র বলছে, যদিও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পথে করা প্রথম সমীক্ষায় ধারণা করা হয়েছিল খরচ হবে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এই পথে সেতু হলে দৈর্ঘ্য হবে ৪.৮ কিলোমিটার। আর প্রস্থ হবে ১৮.১ মিটার। দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক হবে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার। নদীশাসনের কাজ হবে দুই প্রান্তে প্রায় ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট