ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ঢাকার বাসিন্দারা। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৬৭৮ জন আক্রান্ত ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে ভাইরাসটিতে, যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ঢাকায় সর্বোচ্চ লার্ভা শনাক্ত হয়েছে। রাজধানীর দুই সিটির ১১৯ ওয়ার্ডের ৫৭টি বা প্রায় অর্ধেক এলাকা আক্রান্তের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মশার ঘনত্ব বেড়ে চরমে পৌঁছাবে। এমনকি ঢাকার সব মানুষের আক্রান্তের ঝুঁকি তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞানের ছাত্রী ইলমা জাহান। আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। পাঁচ দিন আগে তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল। ইকবাল কবির ও মাকসুদা আক্তার জাহান দম্পতি একমাত্র মেয়ে ইলমা ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর মালিবাগে বসবাস করতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত জরিপে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮ ও উত্তর সিটির ২৭টি ওয়ার্ড ডেঙ্গু আক্রান্তের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। উত্তরের ৫৪ ও দক্ষিণের ৭৫টি মিলিয়ে ঢাকায় মোট ওয়ার্ড ১১৯। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ২৭ জুন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে বর্ষা মৌসুম-পূর্ববর্তী এ জরিপ করা হয়।
জরিপে ডিএনসিসির ৪০ ও ডিএসসিসির ৫৮টি ওয়ার্ডের ৪ হাজার ১৪৯ বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ডিএনসিসির ২৭২ ও ডিএসসিসির ২৭৮ বাড়িতে মিলেছে লার্ভা। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কোনো এলাকায় এডিস মশার ঘনত্বের একক হলো ব্রুটো ইনডেক্স। ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়। জরিপে দুই সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে এডিস মশার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ডিএনসিসির ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। একই অবস্থা ডিএসসিসির ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীর বলেছেন, সিটি করপোরেশনের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। তবে ডেঙ্গুর অবস্থানেও এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এবার বহুতল ভবনে ৪৩ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একাধিকবার আক্রান্ত ও দেরিতে হাসপাতালে আসায় মৃত্যু বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃত্যু প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষ করে মুগদা হাসপাতালে সর্বোচ্চ রোগী। এ হাসপাতালসহ দেশের সব হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু চলতি বছর দেশে এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির রেকর্ড হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু দাঁড়াল ৬১ জনে। আর চলতি জুলাইয়ের প্রথম চার দিনেই মারা গেলেন ১৪ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশে মোট ১ হাজার ৬৬৯ ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আছেন ১ হাজার ১০০ জন। এ ছাড়া চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান গত বছর– ২৮১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে সাতজন ও ২০২১ সালে ১০৫ জন মারা যান।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট