আদম ও হাওয়ার গন্ধম খাওয়া নিয়ে তাদের কথোপকথন এর কথা বলছিলাম ধর্ম পড়াতে গিয়ে। ছাত্রী বলল, ‘স্যার গতকাল আপনি সমাজ পড়াতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আদিম মানুষ কথা বলতে পারতো না’, আজ ধর্ম পড়াতে গিয়ে বলছেন, ‘আদম হাওয়া কথা বলছে’।
আমি শুধু বলেছিলাম, ধর্ম পড়ার সময় বিশ্বাস নিয়ে পড়বে আর সমাজ-বিজ্ঞান পড়ার সময় যুক্তি-প্রমাণসহ পড়বে।
বাংলায় শব্দ দুটির মধ্যে অনেক মিল। দুটোই বি দিয়ে শুরু এর পর একটি যুক্তাক্ষর সাথে ‘আ’ কার এবং শেষে একটি অক্ষর। অথচ এরা বিপরীত মেরুর। নিউটন ও আইনস্টাইনের কোন সূত্রে বিশ্বাস স্থাপন করার সুযোগ নেই। প্রমাণ ছাড়া সূত্র টিকবে না। যখনই ভুল প্রমাণ হবে সাথে সাথেই বাতিল। অনেকেই ধর্মগ্রন্থের সাথে বিজ্ঞান মিলাতে চান৷ দাবি করে বসেন, ‘পৃথিবীর যাবতীয় আবিস্কার তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ থেকেই হয়েছে’। তাদের দাবি করতেতো প্রমাণ লাগে না৷ বোকা অনুসারীরা অন্ধভাবেই বিশ্বাস করেন৷ তারা প্রতারণামূলকভাবে বা না জেনে, না বুঝেই মিলাচ্ছেন। মাত্র তিনটি পার্থক্য তুলে ধরছি-
১। বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, পৃথিবী গোলাকার। চন্দ্র পৃথিবীর চার দিকে আর পৃথিবী-চন্দ্র মিলে সূর্যের চারদিকে আবর্তিত হয়। মহাবিশ্বে কোটি কোটি গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে যা সম্প্রসারণশীল। ধর্মগ্রন্থে বলা হচ্ছে, পৃথিবী সমতল। স্থলভাগের পরে রয়েছে অফুরন্ত জলরাশি। সকালে দেবতা/ফেরেশতা সূর্যকে টেনে পূর্ব দিগন্ত থেকে পশ্চিমে টেনে নিয়ে যায়। সূর্য কর্দমাক্ত জলাশয়ে অস্ত যায়৷ রাতে সূর্য স্রষ্টার আসনের নিচে বসে আরাধনা করে। চন্দ্র ও সূর্যের জন্য নির্দিষ্ট পথ করা হয়েছে যাতে একটি আরেকটিকে অতিক্রম করতে না পারে। তারকামণ্ডলী সৃষ্টি করা হয়েছে আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য।
২। বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, সাড়ে চার শ কোটি বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান মানুষ তিন লক্ষ বছর আগে এসেছে। বিপরীতে বাইবেল বিশ্লেষণ করে, পাদ্রিরা বলছেন, যিশুর ৪ হাজার বছর আগে ঈশ্বর এডাম ও ইভকে তৈরি করেছেন। অন্য ধর্মে বিভিন্ন নবী ও ধর্মপ্রচারকদের আয়ুষ্কাল বিশ্লেষণ করে কাছাকাছি পৌঁছানো গেলেও হিসাব মেলানো যায় না। ছয় দিনে মহাবিশ্ব, চন্দ্র-সূর্য, পৃথিবী, পশু-পাখি ও মানুষ সৃষ্টি হয়েছে।
৩। বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, মানুষ কোষ দ্বারা তৈরি। কোষের সম্মিলিত শক্তিই তাকে চালিত করে। শরীরে আত্মা, রুহু বলতে কিছু নেই। ধর্মগ্রন্থগুলো বলছে, ঈশ্বর আত্মা বা রুহু সৃষ্টি করে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। আত্মা বা রুহু অবিনশ্বর। মৃত্যু মানে শরীর থেকে রুহু বা আত্মা বের হয়ে যাওয়া। শরীর মাটি দিয়ে তৈরি।
যার ধর্ম তার তার কাছে, বিশ্বাসও যার যার তার তার। অসুবিধা কি? চলুক যতদিন চলে। শুধু বিতর্কটা করতে দিন৷ মানুষ সত্য মিথ্যা যাচাই করেই জীবনের পথ বেছে নিক৷ কিন্তু দুটোকেই এক করতে গেলে কিছু সমস্যা তৈরি হবে। যারা লেখাপড়া শিখে একটু সচেতন হবেন, যারা বিজ্ঞান বুঝবেন তাদেরকে যখন বলবেন ধর্মগ্রন্থ থেকেই বিজ্ঞান গ্রন্থের উৎপত্তি হয়েছে আর বিশ্বাসই বিজ্ঞান তখন সে লোক কিন্তু ঠিকই আপনাকে বুঝে ফেলবে। আপনার সম্পর্কে একটা ধারণা পোষণ করবে যে আপনি অজ্ঞ, বোকা, মূর্খ ও প্রতারণার শিকার অথবা প্রতারক৷ মৌলবাদী হওয়া গর্বের কিছুতো নয়৷
কয়েক বছর আগে আমাদের সরকারি শ্রীনগর কলেজের পদার্থবিদ্যার এক শিক্ষক ক্লাসে বলেছিল, ‘পদার্থ বিদ্যার সব সূত্রই এসেছে কোরআন থেকে’৷ আমি তাকে ‘নোবেল দেয়ার দাবী জানিয়ে’ কটাক্ষ করে পোস্ট দিয়েছিলাম৷ ওনি ভয় পেয়ে প্রথমে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়৷ আমাকে কে জানিয়েছে তাকে দেখে নিবে বলে৷ সে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে ‘দেখে নেয়ার’ কথা যেন আমাকে না জানায়৷ এটুকু প্রতিবাদে সে এমন মিথ্যাচার আর করেননি৷
আপনি অন্ধ বিশ্বাসে থাকুন! তাতে সমস্যা নেই কিন্তু বিজ্ঞানের প্রমাণিত সত্যের সাথে অপ্রমাণিত ও অনুমান নির্ভর মিথ্যাকে মিলাতে যাবেন না৷