সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলনের শুরুতে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। অহিংস পথেই চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা করতে চাইছে দলটি। দলের কর্ম-কৌশল প্রণয়নকারী নেতারা মনে করেন, হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি এখন আর কার্যকর নয়। এই ধরনের কর্মসূচিতে জনগণের সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায় না, বরং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ বিরক্ত হয়।
গতকাল রবিবার সিলেটে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামী ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশ থেকে এক দফার ভিত্তিতে নতুন ঘোষণা আসবে। সেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নতুন যাত্রা শুরু হবে।’
আন্দোলনে বিএনপির মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, গণফোরাম ও পিপলস পার্টির সঙ্গে গত সপ্তাহে পৃথক বৈঠকে চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মসূচির ব্যাপারে মতামত নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ঢাকামুখী রোড মার্চ ও লং মার্চের মতো নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পাশাপাশি হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাপারেও মত দেন সমমনা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
তবে বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরতালের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের কর্মসূচির নেতিবাচক দিক বেশি। শুরুতে এই কর্মসূচি দেওয়া যাবে না।
দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, দেশি-বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সহিংসতার কর্মসূচি এড়িয়ে চলছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, পদযাত্রাসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছেন দলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করে আসছি। এক দফার ভিত্তিতেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়া হবে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে সেটা কী কর্মসূচি, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
বিএনপির সমমনা জোট ও দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে দেশব্যাপী বিভাগীয় কিংবা মহানগর পর্যায়ে কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।
তেমনটি হলে বিক্ষোভ সমাবেশ কিংবা মিছিল দিয়ে কর্মসূচি শুরু হতে পারে। তারপর পর্যায়ক্রমে সচিবালয়মুখী পদযাত্রা, ঢাকামুখী লং মার্চ, রোড মার্চ, ঢাকামুখী পদযাত্রা, চলো চলো ঢাকা চলো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়মুখী পদযাত্রা, ঢাকা ঘেরাও, ঢাকায় অবস্থান—এ ধরনের শক্ত কিন্তু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ব্যাপারে মতামত আসছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ গণতন্ত্র মঞ্চ ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক আছে। এই দুই দলের মতামত নেওয়ার পর কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, গত বছর বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশে বিএনপি প্রমাণ করেছে যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও সরকার পতন হতে পারে। সে সময় বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায়নি বলে ঢাকায় কয়েক লক্ষাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতেও শক্ত কর্মসূচিতে যায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে বিচ্ছিন্নভাবে নানা কর্মসূচি পালন করলেও এবার গোছালো আন্দোলন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কর্মসূচি শুরু হতে পারে। লাগাতার কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা।
আগামী ১৭ জুলাই খুলনায় এবং ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশের শেষ দুই কর্মসূচি পালন করবে ছাত্র-যুবল-স্বেচ্ছাসেবক দল। তারুণ্যের সমাবেশের মধ্যে আগামী ১৪ জুলাই নোয়াখালীতে পদযাত্রার মাধ্যমে সাত জেলায় কৃষক-শ্রমিক-তাঁতী-মৎস্যজীবীদের সমন্বয়ে কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। নোয়াখালীর পর ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম, ১৯ জুলাই দিনাজপুর, ২৮ জুলাই রাজশাহী, ৫ আগস্ট যশোর, ১২ আগস্ট হবিগঞ্জ ও ১৯ আগস্ট বরিশালে পদযাত্রা। এসব মাথায় রেখে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট