তাদের মধ্যে ইসতিয়াক ছাড়া বাকি তিনজন ঢাকা কলেজের আবাসিক ছাত্র। মামলার এজাহারে চারজনেরই শুধু ডাকনাম বলা হয়েছে এবং সবার বয়স ২৪ উল্লেখ করা হয়েছে।
গত রবিবার করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুন রাতে আসামিরা ঢাকা কলেজের ফটকের সামনে শুভ্র মাহমুদ জ্যোতি (৩১) নামে একজনকে মারধর, শ্লীলতাহানি করে তার সোনার চেইন ও ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জ্যোতি।
মামলার বাদী জ্যোতি মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানীর বাঙলা কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২২ জুন রাত পৌনে ১টার দিকে পরিচিত ছোট বোন মৌসুমী আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়ে হাজারীবাগের তল্লাবাগের বাসায় যাচ্ছিলেন। রিকশাটি ঢাকা কলেজের সামনে গেলে দুইজন হাত উঁচু করে ‘খারাপ অঙ্গভঙ্গি করে শিস দিয়ে’ ডাক দেয়। তাদের উপেক্ষা করে যাওয়ার পরও সেই দুইজন মোটরসাইকেল দিয়ে সামনে গিয়ে তাদের বলেন, ‘বড় ভাই আপনাদের গেইটে ডাকছে, চলেন।
বাদীর ভাষ্য, পরে দুই বাইকার রিকশাওয়ালাকে ঘুরিয়ে গেটে নিয়ে যান। এ সময় দুই তরুণী তাদেরকে ডাকার কারণ জানতে চাইলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়, চড়-থাপ্পড় মারা হয়, জামাকাপড় ধরে টানাটানিও করা হয়।
মামলার এজাহারে জ্যোতি লেখেন, এ সময় তারা আমার গলার চেইন টান দিয়ে নিয়ে যায় আর আমি কী করি তা তল্লাশি করার জন্য আমার ব্যাগও নিয়ে নেয় তারা। পরে ব্যাগ ফেরত দেয় এবং বাসায় গিয়ে দেখি ব্যাগে থাকা ৬০ হাজার টাকা নেই।
এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিন্টু মিয়ার ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া থানার ওসি শফিকুল গনি সাবুকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. রেফাতুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা নেওয়ার পরপরই তাদের আটক করে থানায় আনা হয়। পরে মামলার এজাহারের ঘটনার বিবরণের সঙ্গে সিসিটিভির ফুটেজ যতটুকু পাওয়া গেছে এর মিল পাওয়া যায়নি। তবে এর তদন্ত আমরা অব্যাহত রেখেছি। যেহেতু তাৎক্ষণিক এটা পাওয়া যায়নি, তাই অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। এ জন্য চারজনকে আইন মেনেই নিজ নিজ মুচলেকা প্রদানপূর্বক মুক্তি দেওয়া হয় এবং আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। তারা পরবর্তী যেকোনো সময় তদন্ত সাপেক্ষে ডাকা মাত্রই হাজির হবেন বলে মুচলেকা দিয়েছেন।’
ঢাকা কলেজের এই চার শিক্ষার্থীকে থানায় ধরে আনার পর নিউ মার্কেট থানায় অন্তত ২০ জন ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষক হাজির হন। পরে আনোয়ার হোসেন নামে এক শিক্ষকের কাছে ওই চারজনকে জিম্মায় দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী শুভ্র মাহামুদ জ্যোতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এজাহারভুক্ত আসামি শনাক্তকরণের পর গ্রেপ্তার করে কিভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়? সবগুলো সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করলেই তাদের কার্যকলাপগুলো প্রকাশ পাবে। আর সিসিটিভির ফুটেজ না থাকলে কি বিচার হবে না? কিন্তু এগুলোর কিছু না করে আমাকে বলা হচ্ছে, তাদের না ছাড়লে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করবে এবং ওপর মহলের চাপ আছে-এসব কথা। তাহলে ঘটনার পর এত দিন ধরে মৌখিকভাবে থানা পুলিশকে জানানোর পরও ১৮ দিনেও কেন তারা তদন্ত করতে পারেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি থানা পুলিশের কাছে বিচার না পেলে আরো উপরমহল এবং আদালতের দ্বারস্থ হব। নিশ্চয়ই তারা আইনের বাইরে না।’