আদালত বলেছেন, আপনি একজন সিনিয়র জেলা জজ। দীর্ঘদিন বিচারকাজ করেছেন। আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং করেছেন।
এতে আপনার বুক কাঁপল না? টেম্পারিং করে আপনি ভুল করেননি। আপনি জেনে-বুঝে ক্রাইম করেছেন। একটি অন্যায় ঢাকতে গিয়ে আরো কয়েকটি অন্যায় করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক শুনানিতে এসব কথা বলেন।
অস্বাভাবিক জামিন আদেশের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নিয়ে বুধবার তলবে হাইকোর্টে হাজির হন মোহাম্মদ ইসমাইল। কিন্তু তার আবেদনটি যথাযথ না হওয়ায় তার আবেদনটি গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট।
শুনানির একপর্যায়ে মোহাম্মদ ইসমাইলের দেওয়া জামিন আদেশ নিয়ে হাইকোর্ট বলেন, আদেশে কিছু পরিবর্তন করতে হলে সব পক্ষকে ডেকে তা করতে হয়।
কিন্তু হাইকোর্টে আসার আগে তিনি তার আদেশ টেম্পারিং করেছেন। এর জন্য ক্ষমা চেয়ে বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, আদেশে দুটি শব্দ ভুল হয়েছে…। এর জন্য মাফ চাই।
হাইকোর্ট বলেন, আপনি খণ্ডন (আদেশের অনধিকার পরিবর্তনের বিষয়ে) করতে চাচ্ছেন? আপনার মধ্যে তো কোনো অনুতাপ দেখি না। আপনি বাধ্য হয়ে (ক্ষমা চাওয়ার কথা) বলছেন। অনুশোচনা ভেতর থেকে আসতে হয়। কিন্তু আপনার তা ভেতর থেকে আসেনি।
শুনানির একপর্যায়ে শরীর খারাপ লাগছে জানালে মোহাম্মদ ইসমাইলকে বসতে বলেন হাইকোর্ট। পরে তিনি কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়েন। এরপর মোহাম্মদ ইসমাইলের আরেক আইনজীবী আবেদনের শুনানির জন্য সময়ের আরজি জানালে আদালত ২৭ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ দেন।
জমির দখল নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন।
এই মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করলে গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। নির্দেশমতো গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালত ৯ আসামিকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কিন্তু মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের এ আদেশের আগেই জামিন নামঞ্জুর আদেশের অনুলিপি পাননি উল্লেখ করে আসামিরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন দেন।
আবেদনকারীর আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার মানে হচ্ছে, এ জামিন আবেদনের সঙ্গে হাকিম আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্যান্য কাগজপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি বা প্রত্যয়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। তার পরও জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন। হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করেন জেলা জজ। অথচ ৯ আসামি এক মুহূর্তও হাজতে ছিলেন না।’
পরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মামলার বাদী খোদেস্তা বেগম রিনা। গত ২১ জুন সে আবেদনের শুনানিতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের অস্বাভাবিক জামিন আদেশটি তুলে ধরলে হাইকোর্ট তাকে তলব করেন।