পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগের প্রমান পাওয়া গেছে। এ বছরের মে মাসে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, লিফট কিনতে তুরস্কে যাচ্ছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন নতুন ভবনের জন্য লিফট কিনতে তাদের যাওয়ার কথা ছিল। বিষয়টি স্থানীয় গণ মাধ্যম, স্যোসাল মিডিয়া সহ জনমনে নানা গুন্জনের জন্ম দেয় । এক পযায়ে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের লিফট কিনতে তুরস্ক সফর স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
2021-2022 শিক্ষাবর্ষের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার তহবিলের গচ্ছিত সমস্ত টাকা ভাগ বাটোয়ারার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিশেষ সুত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড, এএসএম মোস্তফা কামাল খান, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড, কেএম সালাউদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগের ডিন পরস্পরের যোগসাজসে সম্পুর্ন বিধিবর্হিভূত ভাবে প্রথম বর্ষ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সন্মানী হিসবে গ্রহন করেছেন প্রায় 40 (চল্লিশ) লক্ষ টাকা।এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষা তহবিলের ইউজিসি নির্দেশিত চল্লিশ শতাংশ অর্থ যার পরিমান প্রায় 50 (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা করা হয়নি বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
সম্প্রতি শিক্ষা অধিদপ্তর বিভাগের ২০২২-২৩ নিরীক্ষা বছরের অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্টে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একশ’ কোটি টাকার অডিট আপত্তি দিয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প ও একাডেমিক খাতে নানা অনিয়মের কারণে এ অডিট আপত্তি দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাকিলা জামানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি নিরীক্ষক টিম সম্প্রতি এই অডিট সম্পন্ন করে শত কোটি টাকার অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে রিপোর্ট দাখিল করেছেন। এতে বাজেটের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, প্রাপ্যতার অতিরিক্ত ভাতা প্রদান, প্রাপ্যতা ছাড়া ভাতা প্রদান, ইউজিসি’র অনুমোদন ছাড়া বিধি বহির্ভূত চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করা, প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত অনিয়মিত ব্যয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর ও ভ্যাট কর্তন না করা, আর্থিক বিধি লঙ্ঘন করে ফিলিং স্টেশনকে প্রাপ্যতাবিহীন সুবিধা প্রদান, প্রকল্পের জামানত হতে অর্জিত সুদ সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়া, ডিপিপি লঙ্ঘন করে আসবাবপত্র ক্রয়, প্রচার ও বিজ্ঞাপনের বিলে সারচার্জ কর্তন না করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে ডিনের দায়িত্ব প্রদান, চুক্তিমূল্যের অতিরিক্ত অর্থ ঠিকাদারকে প্রদান, ডিপিপিতে নির্ধারিত কাজ বাস্তবায়ন না করা, পদ ছাড়াই অর্গানোগ্রাম বহিভূতভাবে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান, বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত আয় বিশ্ববিদ্যালয় বাজেটে প্রদর্শন না করা, নিম্নমানের বই সরবরাহ প্রভৃতি খাতে শত কোটি টাকার অধিক আর্থিক অনিয়ম হয়েছে মর্মে অডিট রিপোর্টে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দূর্নীতি এবং অনিয়মের খবর প্রায়:শই বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো উচ্চ শিক্ষার গুনগতমান নিশ্চিতকরণ , গবেষনা এবং মেধাবী তৈরীর কাজে ব্যস্ত না হয়ে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পেছনে বেশী সময় ব্যয় করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ শিক্ষকদের রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তির কারণে দূর্নীতি এবং অনিয়মের বলয় থেকে বের হতে পারছেনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণের ফলে তাদেরকে দূর্নীতিমুক্ত করা যাচ্ছে না বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট