এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শাহীন মীরধা। জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক।
২০১৩ সালের শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলার সময় কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তারা ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে। পরে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়।
এ সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত যানবাহনে ভাঙচুর চালায় বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ তাণ্ডবের পর ঢাকাসহ সাত জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয়।
হেফাজত ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় এই ৮৩টি মামলার অধিকাংশরই তদন্ত থেমে আছে। শাহবাগ থানার মামলায় আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করলে রবিবার আদালতে হাজির হন তদন্ত কর্মকর্তা।
তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, এ মামলায় অনেক আসামি। তাদের প্রত্যেকের তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আসামি আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অ্যাজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের অভিযোগ রয়েছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, সে ইসলাইল যাক বা আমেরিকা যাক, এ মামলায় এসব আমরা দেখব না।
হাইকোর্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হতে সময় লাগবে। এক মাসে তদন্ত শেষ করা সম্ভব না। এ মামলায় ১৮০ জন আসামি। তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেক সময় প্রয়োজন।
এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, নাশকতার এক মামলায় হাইকোর্ট আসলাম চৌধুরীকে জামিন দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সেই জামিন স্থগিত করেছেন। সরকার উৎখাতে আবার তারা আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে।
তখন হাইকোর্ট এ আইন কর্মকর্তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, এসব প্রসঙ্গ আদালতে নিয়ে আসবেন না। এসব কোর্টের বাইরের বিষয়। এই কোর্ট ১৮ কোটি মানুষের কোর্ট। পরে আদালত এ মামলায় পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় দেন।
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১৪ সালে শাহবাগ থানায় মামলা হয় আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকার খিলখেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।