পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ও চরতারাপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের কৃষকরা কলা , পেয়ারা, চিনাবাদাম এবং কুল বড়ইসহ বিভিন্ন বিকল্প ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মুল ভুমি থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরের মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ গতনুগতিক কৃষি আবাদে অভ্যস্থ ছিল। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের মত নিয়মিত দুর্যোগ সাথে বসবাস করা এই অঞ্চলের মানুষকে কৃষি কাজে প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় আগাম বন্যা হওয়ার কারণে প্রায় প্রতি বছরই কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারে না । বেলে মাটি হওয়ার কারণে বেশীর জমিতে ফসল ভাল হয় না। এ সমস্ত পতিত এর্ং আধা পতিত জমিতে অনেকেই কলা, পেয়ারা, কুল বড়ই এবং বাদাম চাষ করতে শুরু করেছে ।
এদের মধ্যে প্রধান উদ্যোক্তা হিসাবে চরের পতিত জমিতে কলা চাষের ঝুকি নেন মো: আব্দুল মালেক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে এমএ পাশ করে দীর্ঘদিন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় চাকুরী করেন। একসময় তিনি চাকুরী ছেড়ে নিজের গ্রামে নিজেদের জমিতে পুকুর কেটে মাছ চাষ এবং পুকুর পাড়ে কলা চাষ শুরু করেন। এতে সাফল্য পেয়ে তিনি কলা চাষ সম্প্রসারনের উদ্যোগ নেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দূর্গম চরাঞ্চলে শুরু হয় কলা চাষ। প্রথম বছর তিনি ৩ বিঘা জমি লীজ নিয়ে কলা চাষ শুরু করেন। পরবর্তী বছরে আরো জমি লীজ নিয়ে কলা চাষ সম্প্রসারন করেন। বর্তমানে আব্দুল মালেক প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে কলা চাষ করছেন।
তার কলা চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়ে চর অঞ্চলের মুক্তার হোসেন , মোখলেছ, আব্দুল মতিন , আলিম উদ্দিন সেখ সহ অনেকেই কলা চাষ শুরু করেছেন।এ ছাড়া সদর উপজেলার খয়েরবাগান গ্রামের মো: জিলাল উদ্দিন তার পাঁচ সহযোগী সহ চরের ৩০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে কলা চাষের পাশাপাশি পেয়ারা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে উন্নাত জাতের পেয়ারা চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। দূর্গম চরাঞ্চলে এ সমস্ত ফসল আবাদে প্রধান সমস্যা হলো যাতায়াত ব্যবস্থা। চর এলাকার মানুষের পায়ে হাঁটা ছাড়া যাতায়াতের জন্য অন্যকোন যানবাহনের ব্যবস্থা নাই এবং কৃষকদের উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করণের জন্য একমাত্র পরিবহন হিসাবে ঘোড়ার গাড়ীর উপর নির্ভর করতে হয় । ফলে পরিবহন ব্যয় অত্যাধিক হওয়ার কারণে কৃষকরা তাদের পন্যের নায্য মুল্য তারা পায় না। চরাঞ্চলে সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় অনেক কৃষকই কলা এবং পেয়ারা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাদের কয়েকজনের সাথে আলাপে জানা যায় চর এলাকার অনেক কৃষকই এ ধরনের কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে চায় কিন্ত পুঁজির অভাবে তারা করতে পারছে না কারণ কলা ও পেয়ারা চাষে বিঘা প্রতি প্রাথমিক পুঁজি লাগে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা ।
একজন ক্ষুদ্র কষকের ইচ্ছা থাকা সত্বেও আর্থিক সামর্থ না থাকায় তারা এই লাভজনক কৃষিতে আসতে পারছে না। খবর নিয়ে জানা যায় চর এলাকার যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতার কারণে কোন এনজিও বা ব্যাংক এখানে কোন ঋন কার্যক্রম পরিচালনা করে না। ফলে চরের অধিকাংশ কৃষককেই মহাজনী ঋণের উপর নির্ভর করতে হয়। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় জানা যায় বর্তমানে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ-চরে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে কলা চাষের পাশাপাশি পেয়ারা এবং কুল বড়ই চাষের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে চর এলাকায় কৃষি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । সরকারি এবং বেসরকারি সহযোগিতা পেলে সম্ভাবনাময় এই কৃষি সম্প্রসারিত হবে এবং চর এলাকার অনাবাদি কৃষি জমি যেমন আবাদের আওতায় আসবে তেমনি চরের মানষের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নয়ন ঘটবে বলে চর এলাকার মানুষ মনে করেন ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট