সিনহা হত্যা মামলার বাদী তাঁর বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের প্রত্যাশা, বিচারিক আদালতের মতো উচ্চ আদালত, এমনকি সর্বোচ্চ আদালতে মামলাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। আর এ দুই ধাপের বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রপক্ষ যথাযথ ভূমিকা রাখবে।
হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স ও পেপারবুক শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন ২০১৮ সালের ডেথ রেফারেন্স মামলার পেপারবুক তৈরির কাজ চলছে। সিনহা হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পেপারবুক যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। ক্রম অনুযায়ী এসব মামলার পেপারবুক তৈরি হয়। পেপারবুক প্রস্তুত হলে আইন ও নিয়ম অনুযায়ীই মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হবে।
বরখাস্ত ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ মামলাটি পেপারবুক শাখায় আছে। কোনো অগ্রগতি নেই।’
ডেথ রেফারেন্স মামলা যে বেঞ্চেই পাঠানো হোক না কেন, প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে তা গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি। বর্তমানে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলার চারটি নিয়মিত বেঞ্চ রয়েছে।
ক্রম অনুসারে ২০১৭ সালের ডেথ রেফারেন্সের মামলার বিচার চলছে এসব বেঞ্চে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু মামলার শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চও গঠন করেন প্রধান বিচারপতি।
ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্রম অনুসারে এলে মেজর সিনহা হত্যা মামলাটি শুনানিতে উঠতে ২০২৬-২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
মামলার বাদী মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবার হিসেবে চাইব মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হোক। যেহেতু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার শুনানি এবং নিষ্পত্তির নজির আছে। তাই আশা করব এ মামলার ক্ষেত্রেও এমনটা হবে।’
রাজশাহী বিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাহের হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকরের প্রসঙ্গ টেনে শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অধ্যাপক তাহের হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করতে ১৭ বছর লেগেছে। শেষ পর্যন্ত বিচার কার্যকর হলেও ভুক্তভোগীদের জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায়।’ মেজর সিনহা হত্যা মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়বে না বলে প্রত্যাশা এই বাদীর।
কোনো মামলায় বিচারিক আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে সে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। বিচারিক আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসার পর ডেসপাস (আদান-প্রদান) শাখা তা গ্রহণ করে পেপারবুক শাখায় পাঠায়। পেপারবুক শাখা সেসব যাচাই-বাছাই করে পাঠায় বিজি প্রেসে। ছাপার কাজ শেষ হলে তা আবার ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়। সেখানে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রস্তুত করা হয় পেপারবুক। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হয়।