পুরুষের সেক্স হরমোন— টেস্টোস্টেরন সেক্সের ইচ্ছা এবং পারফরমেন্সের জন্য দায়ী। পুরুষের শুক্রাশয়ে এটি উৎপন্ন হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে উচ্চমাত্রায় এই হরমোনের উপস্থিতি ব্যক্তিকে বেশি অনৈতিক করে তোলে। শরীরে এই হরমোনের উচ্চ মাত্রার সঙ্গে অসামাজিক আচরণ ও আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবের যোগসূত্র রয়েছে। একটা বয়স অতিক্রম করলে হরমোনের কারণেই স্বাভাবিকভাবেই যৌন তড়না তৈরি হয়। যে সকল পুরুষরা দীর্ঘদিন নারী সংগ থেকে দূরে থাকে তাদের মধ্যে যৌন তাড়না অস্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। তৈরি হয় অনৈতিক কাজ করার চাপ। হিতাহিত জ্ঞান অনেকাংশেই লোপ পাইয়ে দেয় এই হরমোন। পরিণতি কি দেখি?
নারী সান্নিধ্য বঞ্চিত গীর্জার ফাদার, মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম বা মন্দিরের পুরোহিতদের মধ্যেও তৈরি হয় হরমোন। সেই তাড়না তাদের বিপথগামী করে ফেলে। অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করে। কোন পূর্ণবয়ষ্ক নারীর প্রতি হাত বাড়ানো সহজ হয় না। তাকে ভয় দেখানো যায় না, উল্টো চড় থাপ্পর খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফাঁস করে দিতে পারে। কিন্তু শিশুদের অনেকভাবেই বিভ্রান্ত করা যায়। ভয় দেখানো যায়— গজব ও দোজখের, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের, ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করিয়ে নিতে পারলে তারও দোহাই দেয়া যায়, প্রকাশ করলে মেরে ফেলার ভয়ও দেখানো যায়। কিন্তু শিশুটি একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে বা গর্ভবতী হয়ে যায়। হরমোনের তাড়না ধর্ষককে ভবিষ্যৎ দেখতে দেয় না। আমাকে একটি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা বলেছিলেন— তার ওখানে সকলেই লতুকওমে লিপ্ত। কিছু বললেই খালি বলে, ‘গোপন করেন, গোপন করেন; পরকালে আপনার দোষ আল্লাহ গোপন করবেন’। ওনি কারণ খুঁজে পান না! কেন ওনারা শিশুদের বলাৎকার করেন? শিশু-অনাথ পেলেই কেন ধর্ষণ করতে উতলা হয়ে পড়েন। আমরা যারা বিজ্ঞানমনস্ক তারাতো জানি— এগুলো শয়তানের কাজ নয়, ওই ব্যাটা হরমোনই দায়ী!
যৌন জীবনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে শরীরে বিভিন্ন হরমোনের উপস্থিতি। আমাদের অনুভূতির ওপরেও অনেকটা প্রভাব ফেলে এই হরমোন। সুস্থ, স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে এর ফলে বাড়ে আয়ু। আমার বেশ কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুই সোভিয়েত ইউনিয়নে অধ্যয়ন করেছেন। তারা অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। জানতে পারি ওখানে হোস্টেলে ছেলে মেয়েরা একসাথেই থাকতো। পছন্দের জুটিরা থাকতো এক কক্ষেই। হরমোন যে চাহিদা তৈরি করে নারী-পুরুষ দুজনই তা মিটিয়ে নেন। ফলে হরমোন তাদের অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করতে পারে না। ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোতেই এমনটা দেখা যায়। পুরাতন ঢাকায় এক কাজী সাহেবের কথা বললেন শাশ্বত স্বপন দা। কাজীর বক্তব্য হল, ‘সামাজিক বিয়েতে আর কত আয় হয়? তা দিয়ে কি আর চলে? আমাদের মূল আয় হল— ওই ঘুরে বেড়ানো জুটিরা। তারা তাড়নায় বাধ্য হয়েই আসে বিয়ে করতে। সেই বিয়েতে ফিও বেশি আবার কিছুদিন পরেই তারা বুঝতে পারে ভুল বাছাই হয়েছে। আবারো আসে ডিভোর্স করতে।’ মস্কোতে সে ঝামেলা নাই। আজ যখন পটলো না, নিশ্চিত হওয়া গেল সুখের হবে না এক সাথে থাকা; আলাদা হয়ে যাও! আবার বেছে নাও জীবনের নতুন সঙ্গী।
আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য যদি বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেই তাহলেই সমাধান হবে সঠিক। নতুবা যার দোহাই-ই দেন না কেন, যত নিন্দাই করেন না কেন শিশু বলাৎকার/ধর্ষণ বন্ধ করতে পারবেন না। কেন? প্রাইমারি ও হাইস্কুলের শিক্ষকের সংখ্যাও অনেক৷ কিন্তু তাদের যৌন-তাড়নার প্রকাশ কম দেখি কেন? প্রধান দুটি কারণ হল— ১) স্কুল গুলো অনাবাসিক আবার শিক্ষকরাও থাকে স্ত্রীর সান্নিধ্যে৷ ২) সুশিক্ষা মানুষের বিবেচনাবোধ বৃদ্ধি করে৷ তারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়৷ ফলে চেতন ও অবচেতনভাবেই তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করেন৷ তাই কারণ হরমোন বলি আর শয়তান বলি— যৌন অপরাধ করে নিরপরাধ ভাবার সুযোগ নেই৷ সুশিক্ষা ছাড়া ওরাও শিশু বলাৎকার বন্ধ করতে পারবে না তীব্র যৌন তাড়নার কারণেই৷ তাহলে করণীয় কি?
রাজশাহীর সেই ফাদারের কথাই ধরি৷ তিনি গীর্জার ভিতরে গাছের পাতা কুড়াতে আসা একটি নারী শিশুকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে গীর্জার ভিতরে নিয়ে যান এবং কদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেন৷ মাদ্রাসার হুজুরদের দ্বারা শিশু বলাৎকার বা ধর্ষণের খবর নিয়মিতই আসে৷ পুরোহিতদের বিরুদ্ধেও এমন খবর দেখি৷ বৌদ্ধ বিহার ও হিন্দু মন্দিরে একসময় যৌনদাসী/সেবাদাসী থাকতো৷ ফলে পুরোহিতদের বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণের বা বলাৎকারের অভিযোগ উঠতো৷ যৌনদাসীদের নিজেরা ভোগ করতো আবার ধনী আমত্য-জমিদারও আসতো যৌনসেবা নিতে৷ তাদের দানে ফুলেফেঁপে উঠতো বিহার-প্যাগোডা-মন্দির৷ রাজশাহীর ফাদারকে যদি বাধ্য করা হতো সস্ত্রীক থাকতে তাহলে তাকে পাতা কুড়ানির দিকে হাত বাড়াতে হতো না৷ অর্থাৎ ফাদার, ইমাম বা পুরোহিতদের যদি স্বাভাবিক যৌন চাহিদা মেটানোর সুযোগ থাকতো তাহলে তারা অপরাধ করতো না৷ তাই তাদের স্ত্রী সান্নিধ্যের ব্যবস্থা করতে হবে নইলে স্বমেহনে উৎসাহিত করতে হবে৷ অন্যথায় শিশু ধর্ষণ বা বলাৎকার বন্ধ করা যাবে না৷