আলবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব ও চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের আদালতে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। পিটিশনকারী বলছেন, এই দুটি তত্ত্বে ভুল রয়েছে, তিনি এটি নিয়ে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম চান। সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ শুক্রবার এই পিটিশন খারিজ করে দেন। আদালত বলেন, আর্টিকেল ৩২–এর আওতায় এসব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ভুল বলা যাবে না। এ কারণে এ নিয়ে পিটিশনও দায়ের করা যাবে না।
তিনি যদি সত্যিই প্রমাণ করতে পারেন আপেক্ষিক তত্ত্ব ও বিবর্তনবাদ ভুল তাহলে তা প্রমাণ করে প্রকাশ করুক৷ ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক বলে তা বাতিলের জন্য আদালতের দারস্ত হবেন কেন? আদালত আইন বুঝবে৷ তারা কি বিজ্ঞানি? এইসব প্রতারকগণও জানে আদালত ধর্মকে ভর করে এই তত্ত্ব বাতিল করলে, মানুষ আর সত্য জানতে পারবে না৷ যেটাই সাংঘর্ষিক মনে হবে সেটার বিরুদ্ধেই মামলা হবে৷
আলবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বমতে সব গতিই আপেক্ষিক— পরম গতি, পরম সময় ও পরম স্থান বলে কিছু নেই। চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদে বলা হয়েছে, বিবর্তনের মধ্য দিয়েই প্রাণিগুলো আজকের অবস্থায় এসেছে৷ তাতে ধর্মান্ধদের সমস্যা কোথায়?
চিরায়ত বলবিদ্যা অনুযায়ী স্থান, কাল ও গতিকে পরম বলে ধরা হয়। কিন্তু আলবার্ট আইনস্টাইন সর্বপ্রথম দাবী করেন যে পরমস্থান, পরমকাল এবং পরমভর বলতে কিছুই নেই। স্থান,কাল এবং ভর তিনটিকেই আপেক্ষিক ধরে তিনি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রস্তাব করেন৷ বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ দুইটি উপপাদ্যর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত—
১) সমবেগে চলমান সকল পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মাবলী অভিন্ন।
২) শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ সমস্ত পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে একই এবং তা আলোর উৎসের ও পর্যবেক্ষকের গতির সাথে নিরপেক্ষ ।
এখন সমস্যা হল আপনি যদি আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলতে না পারেন তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যে সপ্তাকাশতো ঘুরে আসতে পারবেন না৷ গ্রন্থগুলোতে প্রেরিত পুরুষ/দেবতা মহাকাশে সেকেন্ডে আরো বহুদূরে গিয়েছেন৷ এখন ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষের চেয়েও দূরের ছবি চলে এসেছে৷ এতদূরেও স্রষ্টার ঘর নেই৷ নতুন প্রযুক্তি এটোসেকেন্ড চলে এসেছে৷ তাতে আরো দূরের ছবিও তোলা যাবে৷ আপেক্ষিক তত্ত্ব তাদের থামিয়ে দিচ্ছে৷
ডারউইনের বিবর্তনবাদ ধর্মের মূল ধরেই টান দেয়৷ ধর্ম বলছে ঈশ্বর একজোড়া মানুষকে বর্তমান অবয়বেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন৷ বিবর্তনবাদ বলছে, আদি কোষ বিবর্তিত হতে হতে আজকের মানুষ এসেছে৷ এ তত্ত্ব ধর্মের কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিচ্ছে৷ দিন দিন আপেক্ষিক তত্ত্ব ও বিবর্তনবাদের পক্ষে নতুন নতুন প্রমাণ আসছে৷ র্ধমবাজদের পক্ষে বৈজ্ঞানিক সত্যকে, ভুল প্রমাণ করার সুযোগ নেই৷ তাই তারা যায় আদালতে৷ আমেরিকাতেও বহুবার আদালতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে৷ এখন এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার আদালতে৷ যদি আদালতকে দিয়ে ভুল বলানো যায়! আদালত বললেই কি আপেক্ষিক তত্ত্ব ও বিবর্তনবাদ ভুল হয়ে যাবে? তাতো নয়৷ তবু ওরা চেষ্টা করে যাবে এবং সত্যের সাথে পেরে উঠবে না৷ বিজ্ঞানের কোন তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করতে হবে বিজ্ঞান দিয়েই৷ সেখানে প্রমাণ দরকার৷ প্রমাণ করুন সবাই মেনে নিবে৷ প্রমাণ ছাড়া আদালত বললেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না৷