1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ অপরাহ্ন

ঈশ্বরদী পাকশী স্বপ্নের পাইলট ট্রেন যা এখন শুধুই স্মৃতি

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

স্বপ্নের পাইলট ট্রেন যা এখন শুধুই স্মৃতি। ঈশ্বরদী(পাবনা)প্রতিনিধিঃ নেই কোন স্টেশন মাস্টার, কোন টিকেট কাউন্টার। নেই কোন টি স্টল, কোন বেকারী অথবা কোন ফাষ্টফুডের দোকান। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষারও কোন প্রয়োজন নেই। তাই নেই কোন আরামদায়ক বসবার যায়গা, কোন বেঞ্চ, অথবা কোন যাত্রী ছাউনী। আছে একজন বাদাম ওয়ালা। আর গলায় ঝোলানো টিনের বাক্সে পান বিড়ি সিগারেটের ছোট্ট দোকানদার। অজশ্র পাখীর গানে গানে মুখরিত, ছায়াঘেরা সবুজ প্রকৃতিকে জড়িয়ে, শতবর্ষী কড়ুই গাছ আর মেহগনি গাছের সুশীতল ছায়ায় তেল চিটচিটে কালো লম্বা রাস্তাটাই ইতিহাসের পাইলট স্টেশন।

আপনি কি কখনো বিনা টিকিটে ট্রেনকে যাত্রী টানতে দেখেছেন? বাংলাদেশের কোন জায়গায় না থাকলেও পাবনার পাকশীতে পাইলট নামক ট্রেনে ছিল সে ব্যবস্থা।

রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য পাইলট ট্রেনটি চালু হলেও সাধারণ মানুষের এতে যাওয়ার উপর কোন বিধি-নিষেধ ছিল না। তাই বিনা টিকিটে অনেকেই চড়ার সুযোগ গ্রহণ করতেন পাকশী পাইলট ট্রেনে। টিকেট না থাকলেও পাইলট কিন্তু তার যাত্রীদের অবহেলা করেনি। টিকেট কেটে গাড়ীতে চড়ে আপনি যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন না, পাইলট ট্রেনটি সে সুযোগ দিয়েছে। সেটি হচ্ছে ট্রেনটি আপনাকে আপনার ইচ্ছেমতো জায়গায় নামিয়ে দিত, এমনকি চলন্ত অবস্থায় আপনার হাতের ইশারায় তার গতি কমিয়ে আপনাকে সযত্নে উঠিয়ে নিত! এছাড়াও বিয়েসহ সামাজিক ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে পাইলট কিন্তু ‘স্পেশাল সার্ভিস’ দিত! তাতে হয়তো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অলিখিত নির্দেশও ছিল।

পাকশী থেকে ঈশ্বরদীর দুরত্ব সাড়ে তিন মাইল। পাইলটের গতিপথ ছিল এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ছোট বড় মিলিয়ে ৩-৪ টি কোচ, একটি মালগাড়ী, কয়েকটি সেলুন-কার ও একটি কয়লার ইঞ্জিন নিয়েই পাইলট। পাইলটে একজন গার্ড ও তার সাহায্যের জন্য আরও দুজন কর্মচারী, একজন ড্রাইভার ও দুজন ফায়ারম্যান থাকতো। যেহেতু টিকিট ছিল না সুতরাং চেকারও ছিল না।

প্রথম পাইলটটা খুব সকালে। ভীষন পছন্দ ব্যাবসায়ীদের। আর দুরে দেশের বাড়িতে একটু আরলিতে পৌছানো যাত্রীদের। দ্বিতীয় পাইলটটা ব্যাবসায়ী, সম্মানীত রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দের। আর সর্বোচ্চ সুন্দর ড্রেসআপে ঈশ্বরদী কলেজের এক ঝাঁক শিক্ষার্থীর পদচারনায় মুখরিত ৮টা ১০ এর পাইলট স্টেশনটা। সবচেয়ে অলস মানুষদের পাইলটে চড়ার প্রিয় সময়টা ১১টা ১০ এর তৃতীয় পাইলটটা। অকর্ম আর অলস যাত্রীরা কোন পূর্ব সিদ্ধান্ত ছাড়াই এমনি এমনিতেই চড়ে বসে পাইলটটাতে।

অনেক দেরিতে ঘুম থেকে উঠে, গোসল সেরে, নাস্তা করে আমতলায় এক কাপ চা খেয়ে, কিছুক্ষণ হোটেলের পিছনে দাড়িয়ে হিসু সেরে, একটা সিগারেট ধরিয়ে, ঘন সবুজে মোড়ানো গাছের ছায়ায় আর কর্ম চাঞ্চল্য অফিস পাড়ার ছায়া পথ ধরে পৌছে যায়, দাড়িয়ে থাকা পাইলটটার কাছে।

২টা ২০ এর পাইলট মানে, বিভাগীয় শহর পাকশীর সবচেয়ে সুন্দর সময়, সবচেয়ে রিলাক্স মুডের পাইলট। সুন্দর ড্রেসে সেজে গুজে বিয়ে বাড়ী যাবার মত। আর কর্ম শেষে, অফিস শেষে, কলেজ শেষে, বাজার শেষে, ব্যাবসা শেষে, ছুটি শেষে, ঘুরে ফিরে, অলস শরিরে, উপচে পড়া ভীড়ে, যে পাইলটটা অজশ্র যাত্রী নিয়ে ক্লান্ত মনে পাকশী ফিরে আসে, দিন শেষে পাইলটটার নাম ৫টার পাইলট।

ঈশ্বরদী থেকে পাকশী আসার সময় প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ইঞ্জিন আগে থাকতো। কিন্তু পাকশী থেকে ঈশ্বরদী যাবার সময় উলটো। কেননা পাকশীতে ইঞ্জিন আগে লাগানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না। ভোর হতে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত পাইলট একনাগাড়ে তার কাজ চালিয়ে যেত। দিনে-রাতে সাত থেকে আটবার এপথে যাওয়া-আসা করতো। যা এখন শুধুই স্মৃতি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews