বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী বুধবার (১ নভেম্বর) অনেকটা নীরবে পার হয়েছে। দিনটিতে ছিল না কোন দলীয় কর্মসুচি। তবে পারিবারিক ভাবে দিবসটি পালন করেন তার স্বজনরা। উন্নয়নের রূপকার খ্যাত মশিউর রহমান ২০২২ সালের পহেলা নভেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হরিণাকুন্ডু উপজেলার কন্যাদহ গ্রামে ১৯৫৩ সালের ২৫ জুন জন্মগ্রহন করেন। উইকিপিডয়ার তথ্যমতে, মশিউর রহমান ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠা করা বিএনপিতে যোগদান করেন।তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএনপি চেয়ারপারসন এর উপদেষ্টা ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৭ সালে চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পরপর দুইবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। একই ইউনিয়ন থেকে ১৯৮৭ সালে তৃতীয়বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার ফলে ৭ মাস কারাভোগ করেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে পরাজিত হন। তবে ১৯৯১, ১৯৯৬, জুন ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে একই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মশিউর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় তিনি বিরোধী দলীয় হুইপসহ সংসদীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানসহ জাতীয় সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে ঝিনাইদহে প্রভুত উন্নয়ন কাজ সাধিত হয়। মশিউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৭০ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৭১ সালে ৮ নং সেক্টরে হরিণাকুন্ডু থানা কমান্ডার হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ঝিনাইদহ, হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গা থানার বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নেওয়ার জন্যে ঝিনাইদহ আনসার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করতে ভূমিকা পালন করেন ও সরকারী ভাবে মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করেন। তিনি উক্ত ক্যাম্পের কমান্ডার নিযুক্ত হন। স্বাধীনতা পরবর্তী ঝিনাইদহে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠন করেন এবং উক্ত সংসদের দায়িত্ব পালন করেন। মশিউর রহমান এমপি হওয়ার পর হরিণাকুন্ডু উপজেলায় প্রথম বিসিএস নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। এরপর ঝিনাইদহ টেলিভিশন রিলে স্টেশন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মধ্যে নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ঝিনাইদহ ঢাকা মহাসড়ে ম্যাটস, ঝিনাইদহ শহরের চাকলা পাড়ায় ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি, একই এলাকায় প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুখ ও বধির স্কুল, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর বাজারে এতিম শিশুদের জন্য এতিমখানা, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মধ্যে করোনারি কেয়ার ইউনিট, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালকে পঞ্চাশ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত, ঝিনাইদহ শহরের হলিধানী এলাকায় ভেটেরিনারি কলেজ ও রেশম গবেষনা কেন্দ্র, ঝিনাইদহ বাইপাস সড়ক, ঝিনাইদহ শহরের চক্ষু হাসপাতাল, ঝিনাইদহ শহরে শিশু হাসপাতাল, ঝিনাইদহ শহরে ডায়াবেটিস হাসপাতাল, ঝিনাইদহ পুরনো হাসপাতালের মধ্যে খাবার স্যালাইন ফ্যাক্টরি (প্রকল্প বাতিল), ঝিনাইদহ ট্রমা হাসপাতাল (প্রকল্প বাতিল), কুষ্টিয়া সড়কে টিটিসি, মৃত্তিকা গবেষনা কেন্দ্র ও কৃষি ইন্সটিটিউটসহ বহু সরকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। অথচ ইতিহাস কতই না নিষ্ঠুর। এমন একজন নেতার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী অনেকটা নীরবেই পার করলো ঝিনাইদহ বাসি।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট