উত্তরের পাবনা, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও নীলফামারীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান হয়েছে। বরগুনা, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, বাগেরহাটসহ দক্ষিণ এবং ময়মনসিংহ, শেরপুরসহ উত্তর-পূর্বের জেলাগুলোতেও ফলন ভালো। দু-এক জেলায় সেচসংকট ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা ছিল। এখন তাঁদের দুশ্চিন্তা দাম পাওয়া নিয়ে।
দিনাজপুর : জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান জানান, জেলায় দুই লাখ ৭১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। অতিরিক্ত তিন হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ অর্জিত হয়ে মোট দুই লাখ ৭৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আমন ধান হয়েছে ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে, যা গত বছর ছিল ৪৫ হাজার হেক্টর।
তবে আগাম জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। গত মৌসুমে আগাম জাতের বিনা ৯০ ধানের ৭৫ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ২০০ থেকে চার হাজার ৩০০ টাকায়। এবার সেই বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা।
কাহারোল উপজেলার কৃষক আব্দুল্লা বলেন, ‘বাজারে ক্রেতা নেই। দামও কম। এবার ধানে লোকসান না হলেও লাভের মুখ দেখতে পাবনা।’
দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন বলেন, নতুন চাল বাজারে আসার মতো ধান এখনো আসেনি। মিলারদের কাছে প্রচুর চাল আছে। তাই চালের বাজারে নতুন ধানের প্রভাব নেই।
জয়পুরহাট : ধানের দাম কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। প্রতি বিঘা জমিতে এবার আমন ধানের ফলন হয়েছে ৯ থেকে ১০ মণ হারে। প্রতি মণ ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৩০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত। কৃষকরা বলছেন, এই দামে ধান বিক্রি করে তাঁদের জমি পত্তনের (লিজ) টাকা উঠছে না। এক বিঘা জমির ধান ১১-১২ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও জমির ধানের দামসহ তাঁদের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২০-২২ হাজার টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া আর কৃষকদের নিবিড় পরিচর্যার কারণে ভালো ফলন হয়েছে। এবার কৃষক লাভবান হবে বলে আমরা আশা করছি।’
পাবনা : জেলার ভাঙ্গুড়ায় সাড়ে বারো হাজার মেট্রিক টন রোপা ও বোনা আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরই মধ্যে কৃষকরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। এতে চলতি বছরে উপজেলায় প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন ধান কৃষকদের উদ্বৃত্ত থাকবে। খরচ অনুযায়ী দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকরা।
নওগাঁ : জেলার রাণীনগরে প্রায় ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বন্যায় কিছু ক্ষতি হলেও দুটি ইউনিয়ন বাদে প্রায় সব ইউনিয়নে ধানের ফলন ভালো। ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে বাজারদর কম। জেলার ধামইরহাটে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। কৃষক লাভের আশায় আছেন।
বগুড়া : জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো. গাজিউল হক বলেন, উপজেলায় ১৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো। ধান কাটা শুরু হয়েছে। চাষিরা লাভবান হওয়ার আশায় আছেন।
বরগুনা : জেলার পাথরঘাটায় চাহিদার চেয়ে ১১ হাজার মেট্রিক টন বেশি ফলন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। উফসী জাতের চেয়ে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ এখানে এখনো বেশি। ব্যাপকভাবে ধান কাটা এখনো শুরু হয়নি। বাজারে আধাপাকা ধান এক হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গত বছরের ধান এক হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
ময়মনসিংহ : জেলার হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ায় রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকরাও খুশি। কৃষকরা বলছেন, দাম ভালো পেলে আগামী মৌসুমে ধানের আবাদ বাড়বে।
শেরপুর : জেলায় আগাম জাতের উফসী ও হাইব্রিড জাতের ধান কাটা চলছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পুরোদমে আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। তবে ফলন ভালো হলেও নানা কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। ভালো দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা আছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট