বিজ্ঞানে অশরীরী আছে কি নেই এ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ ব্রায়ান কক্স। এই ইংরেজ পরমাণু বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, অশরীরীর কোনো অস্তিত্ব নেই। যদি তা থাকত, তা হলে বিশ্বের সবথেকে বড় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তা ধরা পড়ত। কক্স জানিয়েছেন, মানুষের মৃত্যুর পরে তার আত্মা কোথায় যায়, তা নিয়ে সভ্যতার উন্মেষের কাল থেকেই মানুষ সন্ধান চালিয়েছে। যদি তেমন কোনো ‘যাওয়ার জায়গা’ থাকত, তা হলেও তা নিশ্চিতভাবেই বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সার্ন এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার এ ধরা পড়ত। লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার আসলে বিশ্বের বৃহত্তম আণবিক বিশ্লেষক। চৌম্বক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই যন্ত্র মহাজগতের মৌলিক বস্তুসমূহকে বুঝতে যায়। এই বিশ্লেষণ থেকে আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান জগতের প্রতিটি জিনিসকে জানা বা বোঝা যায়। লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যে কোনো এনার্জিকেও বিশ্লেষণ করতে সমর্থ। কক্সের মতে, অশরীরী যদি থাকত, তবে তারা এনার্জি দিয়েই গঠিত হত। অথচ থার্মোডাইনামিকসের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী এনার্জি উত্তাপে লোপ পায়। সার্ন বা ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ-এর তরফে কক্স এক প্রকার ঘোষণাই করে দিয়েছেন অশরীরীর অস্তিত্ব নেই। কেউ বিশ্বাস করতেও পারেন তবে তা বাস্তবিক নেই।
একদিন গুলিস্তানে দেখি জিন নামাচ্ছে। লোকজন ঘিরে দেখছে। খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। একটি বাক্সের উপর একটি বোতল আর সেই বোতলের মুখে একটি গাছের শুকনো ডাল। জিন আসায় সেই ডাল কাঁপা শুরু করলো। ভিতর থেকে নাকি কণ্ঠ কথা ভেসে আসলো। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, সেখানে ইলেক্ট্রিক ডিভাইজ দিয়ে প্রথমে ভাইব্রেশন তৈরি করা হয়েছে। আরেকটি যন্ত্র দিয়ে দূর থেকে কেউ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে যা ওই ডিভাইসে শোনা যাচ্ছে। আমি মাস্টার্সে প্রাকটিক্যালে কথা গ্রাহক যন্ত্র ও প্রেরক যন্ত্র বানিয়েছিলাম। মানে রেডিও স্ট্যাশন ও রেডিও। এরমধ্যে এক লোক পিছনে হাত দিয়ে ডাকলো, ভাই শুনেন। আমি বের হয়ে আসতেই তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, ভাই আমাদের পেটে লাত্থি দিবেন না। আপনি চলে যান। আমি ওনার অনুরোধ রাখলাম। ইস যদি বাক্সটি খুলে ফাঁস করে দিতাম তাহলে অতগুলো লোক ঠকতো না। আমি একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। বুঝেছিলাম ওরা সংখ্যায় কয়েকজন।
আমাদের গ্রামে আমার এক আত্মীয় জ্বীন /জিন নামাতো। তিনি পাকিস্তানে ছিলেন দীর্ঘদিন এবং সেখানেই জ্বীন নামানো শিখেছেন। তাকে বারবার অনুরোধ করলাম কিভাবে জিন নামায় তা বলতে। তিনি ফাঁস করবো না শর্তে জানালেন কৌশল। তাদের তিনজনের একটি গ্রুপ রয়েছে। তিনি ঘর অন্ধকার করে রাখলে দেড়তলা টিনের ঘরের কার থেকে দ্বিতীয়জন সাদা আলখেল্লা পরে নেমে এসে নাকি সুরে প্রশ্নের জবাব দিতেন। এলাকার মানুষ বলে অনেক কিছুই তিনি জানতেন। সেসব কথা বলেই বিস্ময় সৃষ্টি করতেন। এরপর লোকজন জিনের কাছে মিষ্টি খেতে চাইতো। তারা আগেই বাজার থেকে মিষ্টি কিনে রাখতো। তাদের দলেরই একজন যে মিষ্টি কিনে আনতো সেটার নাম বলতো। সে মিষ্টি খাওয়াতে সমস্যা হতো না। এরপর ওই লোক চলে যেতো বাইরে। সেখানে গিয়ে জ্বীন আগমনের প্রমাণ হিসেবে একটি গাছের ডাল ভেঙ্গে রেখে যেতো।
ভারতবর্ষের মানুষ বিশ্বাস করে ভুত-প্রেতের। বহু রকমের ভুতের খবর আমরা জানি। পেত্নি, শাকচুন্নি, গাইচ্ছা ভুত, মাইচ্ছা ভুত, দেও, দৈত্য, আলেয়া, স্কন্ধকাটা, কানাভুলো, ডাকিনী মামদো ভুত, নিশি ভুত বহু নাম। কিন্তু এখন একটাও দেখা যায় না। কোন প্রমাণও কেউ করতে পারেনি। অনেকেই অনেক ভুতের নাম জানেন। এলাকাভেদে ভুতের নামেরও পার্থক্য রয়েছে। আজ সব এলাকা থেকেই সব ভুত হারিয়ে গেছে। আমাদের সংস্কৃতি থেকে একটি আপদ বিদায় নিয়েছে। ভুত-প্রেত ছাড়ানো নিয়ে বহু রকমের ব্যবসাও ছিল। আগে শুনতাম অমুকের বউকে ভুতে ধরেছে, ওঝা এসে ভুত ছাড়িয়ে দিয়েছে। ওঝার পেশাটাও নাই হয়েছে। অনেকে বলেন, ভুতে বিশ্বাস করি না তবে কোরআনে আছে বিধায় জিন বিশ্বাস করি। তারা যুক্তি প্রমাণের ধার ধারে না।
প্রমাণের অভাবেই ভুত প্রেতের বিশ্বাস হারিয়ে গেছে। অশরীরী হয়ে পড়েছে অস্তিত্বহীন। অনেকে বলেন, বিজলী বাত্তির ভয়ে ওরা পালিয়ে গেছে। কিন্তু কোথায় পালিয়ে গেছে? কোথায় গেলে তাদের পাওয়া যাবে। তারা কেউই বিশ্বাসের বাইরে নেই। গত শতকের ৯০ এর দশকে আমেরিকার ৫১% মানুষ বিশ্বাস করতো ভূত আছে। এখন আমেরিকারও সিংহভাগ মানুষ ভুতে বিশ্বাস করে না। পৃথিবীর কোথাও আর অশরীরীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশে এমন কোন জরিপ নেই তবে অনুমান করি এ হার অনেকটাই কমে এসেছে। এখনো যারা প্রমাণ ছাড়া ধর্মগ্রন্থে আছে বলেই অশরীরী বিশ্বাস করেন তারা নিছকই ধর্মান্ধ। তাদের এমন বিশ্বাসও ধারালো যুক্তি-প্রমাণে থাকবে না।