1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১২:১০ অপরাহ্ন

আমরা সমালোচনা করে অভ্যস্থ নই

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনার সমালোচনা করা অসম্ভবই। এছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু বলা আইনগতভাবেও নিষিদ্ধ। ক্রিটিক না থাকলে তা পঠিতও হবে না। যত গ্রন্থই থাকুক। থরে থরে বই সাজানো থাকুক কিন্তু কেউ পড়তে চাইবে না। বলা হয় রবীন্দ্রনাথকে তেমন পঠিত হয় না। আমাদের প্রধান লেখক রবীন্দ্রনাথ। তাকে সমালোচনা করলে কেউ মামলা করতে আসবে না বা গুম করে দিবে না। তবুও বিস্ময়কর যে, রবীন্দ্র সাহিত্যের তেমন কোন সমালোচনা নেই। আমরা হুমায়ুন আজাদের কাছ থেকেও কঠোর সমালোচনা গ্রন্থ পাইনি। বরং তিনি শামসুর রাহমানকে প্রধান কবির মর্যাদা দিয়ে একটা সংকট তৈরি করেছিলেন। সমালোচনা করা যায়নি বলেই রবীন্দ্রনাথকে এতোদিনেও অতিক্রম করা যায়নি। আমাদের সমালোচনা না থাকার প্রধান কারণ নিহিত রয়েছে আমাদের ধর্ম বিশ্বাসে।
মুসলিমরা কোনভাবেই তাদের নবীর সমালোচনা মেনে নেয় না। এর প্রধান কারণ নবী নিজেও সমালোচনাকে কঠোরভাবেই নিষিদ্ধ করেছেন। যেমন ইসলামে গীবত নিষিদ্ধ। গীবত কিন্তু সমালোচনাও নয়। কারো অপরাধকে প্রকাশ্যে আনাই গীবত। মানুষকে কিছু ক্ষেত্রে যেমন শাস্তির কথা বলা হয়েছে আবার বহু ক্ষেত্রেই শাস্তি দেয়ার সুযোগও রহিত করা হয়েছে। যেমন কোন নারী ধর্ষিতা হলে ৪জন সাক্ষীর কথা বলা হয়। ধর্ষণের ৪জন সাক্ষী থাকা সম্ভব কি? কেউ ধর্ষণ করছে তখন কি বাকি চারজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে? এটা বাস্তব সম্মত নয়। তখন ওই চারজন মিলে ধর্ষককে পিটিয়ে মারবে। নইলে নিজেরাও ধর্ষণে অংশগ্রহণ করবে। কারো সমালোচনা তখনই নিষিদ্ধ করা হয় যখন তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকে কিন্তু সে অনেক ক্ষমতার মধ্যে থাকে। মূলত এহেন আচরণ করেন স্বৈরশাসকগণই। কেবল নবী মুহাম্মদ স. এরই নয় ইসলামে কোরআন, খলিফা, নবীপত্নী/দাসী কারো সমালোচনাই করা যায় না। এমন কি ইয়াজিদের পিতা মুয়াবিয়া রা. এর সমালোচনাও করা যায় না। এরা সকলের শিকড়ই কুরাইশ বংশ। উমাইয়া বা আব্বাসী বংশের গোড়াও কুরাইশ বংশ। ফলে তাদের খুন করা, নারী নিপীড়ন করা, লুন্ঠন করা, ষড়যন্ত্র করা ইত্যাদি কোন কিছুরই সমালোচনা করা যায় না। এর পরিণতি হল, আজ মুসলিমরা এগিয়ে যেতে পারেনি।
পাশ্চাত্যে সবকিছুরই ক্রিটিক করা হয়। এটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। যীশু আ., মাতা মেরী, বাইবেল এর বিস্তর সমালোচনা করা যায়। দ্য দা ভিঞ্চি কোড উপন্যাসে যীশু আ. এর অবৈধ স্ত্রী ও সন্তান এবং তাদের বংশধরদের কথা বলা হয়েছে। বইটি নিষিদ্ধ হয়েছে লেবাননে। কিন্তু পাশ্চাত্য এমন মজা করতে পছন্দই করে। মাতা মেরীর সতীত্ব নিয়েই তারা প্রশ্ন তুলে। তারা অনুসন্ধান করে কিভাবে মাতা মেরী গর্ভবতী হলেন এবং কিভাবে প্রচার দিলেন ঈশ্বরের সন্তান বলে। সমালোচনা, ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকা ও হাসি-তামাসা করে তারা এগিয়ে যাওয়ার জন্যই। নইলে মানুষ এখনো সেই যীশুতে বুঁদ হয়ে থাকতো। আমরা দেখি দার্শনিকদেরও তীব্র ভাষায় সমালোচনা করতে। একেকটা দর্শনকে ক্রিটিক করেই অন্যরা এগিয়েছে এবং পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দার্শনিক হেগেল ছিলেন বিপুলভাবে জনপ্রিয়। কিন্তু তাকে পরবর্তী দার্শনিক এমনকি সমসাময়িক দার্শনিকগণও ক্রিটিক করেছেন। আর্থার শোপেনহাওয়ার কত ভাবেইনা হেগেলের সমালোচনা করেছেন। এতে কি হেগেল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন? মোটেই তা নয়। নতুন নতুন পথ খুলে গিয়েছে। ফয়েরবাখ নিয়ে আসলেন বস্তুবাদ এবং কার্ল মার্ক্স আনলেন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ। এগুলো সম্ভব হয়েছে সমালোচনার সুযোগ থাকার কারণেই। আজ হেগেল, শোপেনহাওয়ার, ফয়েরবাখ ও কার্ল মার্ক্স সকলেই সম্মানিত। আমরা আরো নতুন নতুন চিন্তাবিদ দেখেছি নতুন ভাষ্য নিয়ে আসতে। আলথুসের, গ্রামসি, সার্ত্রে, রাসেল কি মার্ক্সকে অন্ধভাবে মেনে নিয়েছেন? নেননি বলেই জ্ঞান কোথাও থেমে থাকেনি। কার্ল মার্ক্সের সমালোচনাই সমাজতান্ত্রিক ধারণাকে আরো পরিশুদ্ধ করতে পারতো। সমালোচনা না করে আগানো যায় না।
মুসলমান ও বাঙালি সমালোচনা হজম করতে পারে না। আজও আমরা নিরোদ সি চৌধুরীকে গালিগালাজ করি। তিনি যে খুব উঁচুমানের চিন্তক ছিলেন তা নয়। তবুও আত্মঘাতি বাঙালি আর আত্মঘাতি রবীন্দ্রনাথে কিছু চমকপ্রদ বিষয় উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি দেশে থাকতে পারেননি। এই বিচ্ছিন্নতা চিন্তাকে নষ্ট করে দেয়। আমরা তসলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রেও দেখেছি। তিনি দেশে থাকতে তীব্রভাবেই নারী জাগরণের জন্য লিখতে পারতেন। যখন বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হলেন তখন তাঁর কাছে উপাদন যাওয়াও কঠিন হয়ে গেল। এছাড়া ওই সময়ে তিনি বিভিন্ন রকম পুরস্কারও পাচ্ছিলেন আবার স্থির হতেও পারেননি। এতো পাঠকদের সাথে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয় যা আর ঘুচাতে পারেননি। আমরা মুসলমান ও বাঙালি যারা তাদের উভয়সংকট অবস্থা। একদিকে বাঙালি কথিত মহাপুরুষদের সমালোচনা করে মানুষে পরিণত করতে পারছি না আবার ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা গ্রন্থকেও সমালোচনার বাইরে রেখে তা মানুষের বোধের বাইরে রেখে দিচ্ছি। আমি বহু মুসলিমের কাছেই জানতে চেয়েছি, তারা নবীর জীবনী তথা সিরাতগ্রন্থ পড়েছেন কি না? কিংবা কোরআনের বাংলা অনুবাদ পড়েছেন কি না? আপনিও জিজ্ঞাসা করে দেখুন পান কি না কাউকে? সমালোচনা করতে না পারা আমাদের স্থবির করে দিয়েছে। আমাদের চোখ ও কান খুলছে না অর্থাৎ আমরা অন্ধ ও বধির হয়ে গেছি।
ইসলামের স্বর্ণযুগের দার্শনিকদের সমালোচনা করা হতো বলেই জ্ঞানও এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ইমাম গাজ্জালীর সমালোচনা করা যায়নি। আরো বিভিন্ন কারণও ছিল মুসলিমদের চিন্তার জগৎ থেকে বিতাড়িত হওয়ার। কিন্তু জ্ঞানচর্চার ধারায় আর মুসলিমরা ফিরতে পারেনি। আজও ইসলামে সমালোচনা করা নিষিদ্ধ। এখনো যদি সমালোচনা করা না যায় তবে কেবল শিশুরাই অনবরত বলাৎকারের শিকার হবে তাই নয়। মুসলিমরা জ্ঞান চর্চার মধ্যেও কোনকালে আর ঢুকতে পারবে না। যদি শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু, জয়ের সমালোচনা করা না যায় তাহলে খালেদা জিয়া, জিয়া ও তারেকের সমালোচনা করা কঠিন হয়ে যাবে। এবং তাদের অতিক্রম করে নতুন নেতৃত্বও আসবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews