মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। স্বাধীন দেশে জন্মেছি। এ দেশ আমার গৌরবের ও সম্ভ্রমের অনন্ত অবলম্বন। যাঁদের ত্যাগ দৃপ্ততা ও জীবনের বিনিময়ে এই পতাকা মানচিত্র আজ জ্বলজ্বল করছে তারা সকল মানুষের মুক্তির জন্য এই মরণপণ যুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন।
স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পেরিয়ে গেছে। আমাদের অর্জন এখনো সর্বজনীন হয়নি! দেশে বৈষম্যমুক্ত হতে পারেনি। স্বাধীনতা এখনো রাজনৈতিক শব্দ হয়ে আছে। স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ হয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকগণ বিভক্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবার পর আমি ভেবেছিলাম, আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে সর্বদলীয় ঐতিহ্যে পরিনত করতে পারবো।
কিন্তু বিধিবাম! আমরা স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হতে ছিটকে পড়লাম। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা আজ সরীসৃপ হয়ে গেছে। আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ থমকে গেছে। বৈশ্বিক অপসংস্কৃতির দাবানলে মুখ থুবড়ে পড়েছে আমাদের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি।
বায়ান্ন বছরে একটি রাষ্ট্র পরিনত ও জনবান্ধব হবার কথা। কিন্তু আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই রয়ে গেছি। আগে আমরা ভিনদেশী শোষকের দ্বারা নিষ্পেষিত হতাম। এখন আমাদের ঘরের ভেতরে জন্ম নিচ্ছে হিটলার মুসোলিনি। আমাদের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হচ্ছি আমরা।
এই রাষ্ট্র আমাদের অভিভাবকশূন্য করে অভিনব নির্যাতকের কাছে সমর্পণ করেছে। ন্যায় বিচার দূরে থাক আমরা মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে এখনো পৃথিবীর বর্বর জাতি গোষ্ঠীর চেয়ে এগিয়ে নই।
কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে সাফাই গাওয়া বা কাউকে দোষারোপ করার কথা বলছি না। আমাদের সর্বজনীন বিষয়গুলো সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রবাহিত করতে না পারার দায়ও কারো উপরে এককভাবে বর্তায় না।
তিরিশ লক্ষ শহীদের জীবনদান দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হারানো জাতির এমন বেহাল বিপর্যস্ত দশা কে ভেবেছে কোনকালে?
আমি আশাবাদী মানুষের দলে। অতীতে আমরা এমন ভয়াল সঙ্কট পাড়ি দিয়ে এসেছি। এখনকার চেয়ে বিভৎস কি পরিস্থিতি হতে পারে তা নিয়েও ভাবতে চাই না
যে মগডালে বসে রাজনীতি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে তার গোড়ায় অটোমেটিক করাত দিয়ে তারাই কাটছে সারাক্ষণ। আমরা রাজনৈতিক দলের জি হুজুর হা হুজুর না করে সর্বজনীন দেশের কথা ভাবছি। তাই এই রাষ্ট্রে আমরা এখন প্রকৃত সংখ্যালঘু।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিনীত নিবেদন, আমাদের গায়ে রাজনৈতিক সিলমোহর না মেরে আমাদের কাজগুলো চালিয়ে যেতে দিন। আমরা সকলের তরে কাজ করছি। যে কাজগুলো আপনাদের করার কথা ছিল কিন্তু করেননি। একটি স্বাধীন দেশের দায়িত্ব পাওয়ার পরও তা শিশুদের বাসযোগ্য করতে পারেন নি। সেই অসমাপ্ত কাজগুলোই আমরা করছি।
যেহেতু আমরা ক্ষমতার হালুয়ারুটি ও ভাগ বাটোয়ারায় নেই সেহেতু আমাদের দাবিয়ে রাখার কিছু নেই। আমাদের বাধা দেওয়া মানে নিজেকেই নিজের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া। আমরা নিরস্ত্র তাই ক্ষমতার অস্ত্র হাতে আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ার আগে আরেকটু ভাবেন।
এই দেশটা ষোল কোটি মানুষের সমান সম্ভাবনা হলে আমরা পৃথিবী জয় করতে পারি। বিশ্বজয়ের সেই দিন আমরা হাতে হাত বুকে বুক আর কাঁধে কাঁধ হয়ে একত্রে উল্লাসে মাতবো।
বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণে একটি সর্বজনীন কল্যাণরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি। যার জন্য আমার পূর্বসূরিরা জীবন দিয়েছেন। এই বাংলাদেশ আমাদের সবার জন্য সমান সম্ভাবনা হোক এই কামনাই করি।