1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন

সচেতনতায় কমবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকি

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। তবে গত এক দশকে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি কমাতে অনেক দূর এগিয়েছে দেশ। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ চলছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়া হলো শ্বাসনালি ও ফুসফুসের সংক্রমণ।

ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। শুধু সচেতনতাই পারে এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনতে।

‘বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে গতকাল বুধবার সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ ও কালের কণ্ঠ যৌথভাবে গোলটেবিল বৈঠক করে।বৈঠকে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা নিউমোনিয়ার কারণ, করণীয় ও ওষুধের অপব্যবহার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘরের ভেতর ও বাইরে দূষণ, ধুলাবালি কমাতে হবে। এগুলো থেকে আমাদের সারা বছর ব্রংকাইটিস (শ্বাসনালির প্রদাহজনিত রোগ), অ্যাজমা, নিউমোনিয়া হয়। আমাদের তাই বায়ুদূষণ কমানোর দিকে জোর দিতে হবে।ওষুধের অপব্যবহার সম্পর্কে মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘নবজাতকের একটা সাধারণ বিষয় হলো নাক বন্ধ থাকা। নাক বন্ধ থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ঘড়ঘড় শব্দ হয়। এ সময় পিঠে হাত দিলে এক ধরনের শব্দের তরঙ্গ অনুভব করা যায়। এটাকে আমাদের অনেক ডাক্তার মনে করেন নিউমোনিয়া। এ ক্ষেত্রে শুধু অ্যান্টিবায়োটিকই নয়, নানা ধরনের ওষুধেরই অপব্যবহার হয়।

গণমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ডা. সহিদুল্লা বলেন, স্কুল পর্যায়ের শিক্ষায় হাত ধোয়া, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি পান, নাকে হাত না দেওয়ার মতো স্বাস্থ্য সুরক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এগুলো ছোটবেলায় শিখলে শিশুদের চর্চার মধ্যে ঢুকে যাবে।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনএনএইচপি ও আইএমসিআই কার্যক্রমের ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১৯৯৩ সালে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুহার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) ছিল ১৩৩ জন। বাংলাদেশে ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০২২ (বিডিএইচএস)-এর তথ্য অনুযায়ী তা এখন ৩১ জনে নেমে এসেছে। এটা অবশ্যই একটা বড় সাফল্য। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী এই হারকে আমাদের নামিয়ে নিয়ে আসতে হবে ২৫ বা তার নিচে।

অন্যদিকে নবজাতক মৃত্যুর হার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) নব্বইয়ের দশকে ৫২ থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে ২০-এ। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে এটিকে ১২ বা তার নিচে নামিয়ে আনতে হবে।

জহুরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা চিকিৎসকের কাছে দেরিতে যাওয়া, অসচেতনতা ও সেবা চাওয়ার প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে নিউমোনিয়ার মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগেও শিশুরা মারা যাচ্ছে। এটা কমাতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দি ইনট্রিগ্রেটেড গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর নিউমোনিয়া অ্যান্ড ডায়রিয়ার (জিএপিপিডি) লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম শিশুর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা তিনে নামিয়ে আনতে হবে। বিডিএইচএস সার্ভে ২০২২ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে নিউমোনিয়ার কারণে শিশুমৃত্যুহার ৭.৪। সুতরাং নিউমোনিয়ার দিকে আলাদা করে নজর দিলেই কিন্তু নিউমোনিয়ার কারণে হওয়া শিশুমৃত্যু বহুলাংশে কমানো যাবে।

মূল প্রবন্ধে জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এগোতে হবে তিনভাবে—প্রোটেকশন, প্রিভেনশন ও ট্রিটমেন্ট (সুরক্ষা, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা)। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ ও ছয় মাসের পর পরিপূরক খাবার হিসেবে সুষম খাবার খাওয়ানো এবং প্রতিটি শিশুকে ভিটামিন-এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এলে শিশুদের প্রটেকশন বা সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির সব টিকা ঠিকমতো নিতে হবে। আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি ও অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে হবে পারিবারিকভাবে। নিউমোনিয়ার কারণে শিশুমৃত্য কমিয়ে আনলে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুমৃত্যুহার কমানো সম্ভব হবে।’

জ্যেষ্ঠ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, টিকাদানে বাংলাদেশে ইপিআইয়ের বড় সফলতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে বলতে হবে। এ কাজটি করতে হবে শিক্ষকদেরও। কারণ শিশুরা শিক্ষকদের কথা খুব মানে। আরেকটি হলো অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিকগুলো আমাদের বলতে হবে, প্রচার করতে হবে।’

ডা. নাজমুন নাহার বলেন, ‘এখন ফামের্সিতে গেলেই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেয়। আবার অনেক ডাক্তারও রোগীর কথা শুনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভালো ডাক্তার মানে কম ওষুধ। সুতরাং ওষুধ লেখা বাদ দিয়ে যত বেশি সম্ভব কাউন্সেলিং করা। যত কম ওষুধ দেওয়া যায় এবং রোগীর সঙ্গে যত কথা বলা যায় তত ভালো।’

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহমিনা বেগম বলেন, ‘শীতকালে শিশুদের সাধারণত একটু বেশি সর্দি-কাশি হয়। বুকে একটু শব্দ হয় নাক বন্ধ থাকার কারণে। এতে অনেক মা মনে করেন, শিশুর নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। আবার আমাদের অনেক ডাক্তার ও প্যারামেটিক কোনো পরীক্ষা ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেন। কিন্তু শিশুটির যখন ঠাণ্ডা কমে না তখন মা-বাবা এসে প্রশ্ন করেন, কেন কমছে না। আমাদের উচিত সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশিতে অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া।’

শিশু হাসপাতালের পরিচালক ও বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতির (বিএসএইচআই) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু মানুষ অতি সচেতন, আবার কিছু মানুষ একেবারেই সচেতন নয়। অতি সচেতন শ্রেণি সামান্য ঠাণ্ডায় শিশুকে কাপড়চোপড় দিয়ে কান পর্যন্ত ঢেকে দেয়। এতে যে শিশুটি ভেতরে ভেতরে ঘেমে যাচ্ছে সেটি তারা খেয়াল করছে না। আরেকটা শ্রেণি আছে যারা কিছুই করছে না। শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরন বুঝতে পারে না, অনেক দেরিতে হাসপাতালে আসে এবং এদের অপুষ্টি সমস্যা থাকে। মূলত এরাই মারা যায়।’

ডা. জাহাঙ্গীর আলম মনে করেন, নিউমোনিয়া প্রতিরোধে জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে একটা নীতিমালা হওয়া উচিত। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন-ডি-এর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. তানভীর হোসেন বলেন, ‘টিকার লক্ষ্য শুধু নিউমোনিয়ার হার কমানো নয়। আমরা যে শিশুদের টিকা দিচ্ছি, পরবর্তী সময়ে এদের মধ্যে কেউ কি আবার আক্রান্ত হচ্ছে? যদি হয়ে থাকে তাহলে তারা নিউমোনিয়ার কোন ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে। টিকা নিউমোনিয়ার যেসব ধরনের বিরুদ্ধে কাজ করে সেসব ধরন, নাকি নতুন কোনো ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে। এ নিয়ে গবেষণা হলে আমরা টিকা দেওয়ার আগে ও পরের নিউমোনিয়ার প্রবণতা বুঝতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘যদি আমরা সত্যি সত্যি নিউমোনিয়া নিয়ে কিছু করতে চাই, আমাদের এখন সময় এসেছে নিউমোনিয়া নিয়ে কিছু গবেষণা শুরু করার।’

টিকার পাশাপাশি পুষ্টির ভূমিকা তুলে ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ বলেন, ‘নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে টিকার পাশাপাশি অপুষ্টির একটি বিষয়ও আছে। পাঁচ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে যখন অপুষ্টির হার কমছে, তখন নিউমোনিয়ার হারও কমছে। এই বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগে বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে, বয়স যত কম থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে এবং আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ফলে আমাদের এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং (ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো) নিশ্চিত করতে হবে এবং অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করতে হবে। আশার কথা, এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিংয়ে আমরা অনেকখানিই এগিয়েছি।’

আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ নিউমোনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি কমাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ২০১১ সালে প্রতি এক হাজারে ১১ জন নবজাতক নিউমোনিয়ায় মারা যেত। ২০২২ সালে ৭.৪ জন মারা যাচ্ছে। অর্থাৎ এক দশকে এক-তৃতীয়ংশ কমিয়ে নিয়ে এসেছি।’

তিনি বলেন, দেশে বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৩ হাজার শিশু প্রতিবছর নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এর মধ্যে চার হাজার ৫০০ মারা যায় কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। তিন হাজার শিশু মারা যায় রেফারেলের পর এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়।

এহসানুর রহমান বলেন, এক দশক আগে নিউমোনিয়ায় যত শিশুর মৃত্যু হতো, এর ৮০ শতাংশ মারা যেত বাড়িতে। বর্তমানে যত শিশু মারা যায় তার ৫৩ শতাংশ হাসপাতালে এসে মারা যায়। অর্থাৎ ধীরে ধীরে মানুষ হাসপাতালমুখী হচ্ছে।

গোলটেবিল আলোচনায় আরো অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার উপপরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার (প্রশিক্ষণ) ডা. সাবিনা আশরাফী লিপি, ইউনিসেফের নবজাতক ও শিশু বিভাগের হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. জাহিদ হাসান, প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ডা. সাব্বির আহমেদ, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের উপদেষ্টা (শিশু স্বাস্থ্য) ডা. গৌতম বণিক, জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচির ফোকাল পয়েন্ট ডা. আ ন ম এহতেশাম কবীর। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews