‘আমার স্ত্রীকে বাংলাদেশে এনে দাও, আমি গোল করব!’ স্ত্রীকে কাছে পাওয়ার বিনিময়ে দলকে গোল উপহার দেওয়া। পেশাদার ফুটবলে এমন প্রতিশ্রুতি আগে কখনও কোনো ফুটবলার দিয়েছেন? আর দিয়ে থাকলেই বা কী!
এমন কত অঙ্গীকারই তো সময়ের হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কালের বাইনোকুলারে চোখ রাখলে পাওয়া যাবে কথা দিয়ে কথা না রাখার অগণিত উদাহরণ। তবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়েছে ফর্টিস এফসি লিমিটেডের ইউক্রেনের ফরোয়ার্ড ভেলোরি গ্রিশিনের। ঢাকার করপোরেট ক্লাবটি তাদের খেলোয়াড় ভেলোরির চাহিদা অনুযায়ী তাঁর স্ত্রীকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এনে ক্ষণিকের সংসার পাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আর ফর্টিসকে মহামূল্যবান এক গোল উপহার দিয়েছেন ইউক্রেনের এই ফরোয়ার্ড।
গত ৩০ ডিসেম্বর ২৯ বছর বয়সী ভেলোরির একমাত্র গোলেই প্রিমিয়ার লিগে ঐতিহ্যবাহী আবাহনী লিমিটেডকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ফর্টিস। লিগে দুই ম্যাচ শেষে ফর্টিসের পয়েন্ট ৩।
ইউক্রেনের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলা ভেলোরি দেশটির বিখ্যাত ক্লাব শাখতার দোনেস্কের একাডেমিতে ছিলেন প্রায় ১০ বছর। ক্লাবটির মূল হয়ে প্রাক-মৌসুমে খেলেছেন দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও। ইউক্রেনের জাতীয় যুব দলের এই ফরোয়ার্ড গত ২ অক্টোবর ফর্টিসে যোগ দিলেও স্ত্রী ইনজার মিন মিয়াতকে ঢাকায় আনার ব্যাপারে ক্লাবের ম্যানেজার রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেন ডিসেম্বরের শুরুতে। ক্লাবের সহযোগিতায় ভিসার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পা রাখেন মিয়ানমারের নাগরিক ইনজা। ইনজা আসার পর ৩০ ডিসেম্বর রাজশাহীতে আবাহনীর বিপক্ষে মাঠে নামে ফর্টিস। আর সে ম্যাচেই গোল করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন ভেলোরি।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে লিমান শহরে ভেলোরিদের বাড়ি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের সে বাড়িতে আছেন মা সোভেতলানা গ্রিশিন, দাদি, ছোট ভাই ও সৎবাবা। রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার আগেই ২০২১ সালে কম্বোডিয়ায় চলে আসেন ভেলোরি। বাংলাদেশে আসার আগে দুই মৌসুম খেলেছেন কম্বোডিয়া প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন নমপেন ক্রাউনে।
সেখানে খেলা অবস্থাতেই গত বছর ইনজার সঙ্গে প্রথম দেখা ও সাক্ষাৎ। কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে বেড়াতে গিয়েছিলেন পেশায় বিউটিশিয়ান ইনজা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পরিচয়। ১ এপ্রিল প্রথম সাক্ষাৎ। সাধারণত এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি একে অপরকে চমকে দিয়ে ‘বোকা বানাতে’ চায়। কিন্তু সেই দিনটিই হয়ে গেল এই ইউক্রেনীয়-মিয়ানমার যুগলের জন্য বিশেষ দিন।
ইনজা পাশে থাকলে আলাদা শান্তি অনুভব করেন ভেলোরি, ‘আমি জানতাম ও এলেই আমার ভালো লাগবে। ও আসার পর থেকেই মানসিকভাবে অনেক সুখী আছি। পরিবার কাছে থাকলে যা হয়। আমরা একসঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছি, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছি। সময়টা খুব ভালো যাচ্ছে আমাদের। ও সঙ্গে থাকলে আমার পারফরম্যান্স সব সময় ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
বাগদত্তা স্বামীকে সময় দিতে পেরে খুশি ২৮ বছর বয়সী ইনজাও, ‘ভেলোরির কাছে আসতে পেরে খুবই খুশি। আমি ওকে রান্না করে খাওয়াতে পারছি। ওর যত্ন নিতে পারছি। ও মানসিকভাবে ভালো থাকলে ভালো খেলতে পারবে।’
ভেলোরির দেশে এখন যুদ্ধের দামামা বাজছে। যুদ্ধ শুরু হলে ভেলোরির পরিবারের সদস্যরাও তাঁর কাছে কম্বোডিয়ায় থেকে গেছেন ৬ মাস। স্বচক্ষে না দেখলেও শুনেছেন যুদ্ধের ভয়াবহতা। তাই উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় ইউক্রেনে অবস্থান করা পরিবার নিয়ে। কবে শেষ হবে যুদ্ধ আর ইনজাকে নিয়ে পাড়ি দেবেন ইউক্রেনে। যুদ্ধ শেষ হোক, ভালোবাসায় ভরে উঠুক পৃথিবী।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট